পরপর দু’টি ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণ। মুহূর্তে জঙ্গলের আড়াল থেকে আধাসেনার কনভয়ের দিকে ছুটল এলোপাথাড়ি গুলি। ফাটলো একের পর এক গ্রেনেড।
আজ ভোরে অসমের তিনসুকিয়ার জাগুনে এমনই জঙ্গি হামলায় শহিদ হলেন ২ জওয়ান। পেঙেরির কায়দায় এ দিনের আক্রমণে চিন্তায় প্রশাসন, নিরাপত্তাবাহিনী। সেনাবাহিনীর দাবি, পাল্টা জবাবে মৃত্যু হয়েছে ৪ মণিপুরি জঙ্গির। উদ্ধার হয়েছে অস্ত্রশস্ত্র।
প্রজাতন্ত্র দিবসে নাশকতা ঘটাতে আলফা ও খাপলাং জঙ্গিরা অসমে ঢুকেছে বলে গোয়েন্দারা খবর পেয়েছিলেন। চলছিল অভিযান। গত কাল জানা যায়, তিনসুকিয়ার জাগুনে ঘাঁটি গেড়েছে জঙ্গিরা। ওই জেলার লাগোয়া অরুণাচলপ্রদেশের পাংসু পাসে চলছে উৎসব। সেখানে দেশ-বিদেশের পর্যটকের ভিড় জমেছে। অরুণাচলের ডিজিপি জয়রামপুরের ওই রাস্তা দিয়ে গত কাল বিকেলে ফিরেছেন। গিয়েছেন মন্ত্রী-বিধায়করা।
এ দিন জাগুন-জয়রামপুর সড়কে মোতায়েন ছিল আসাম রাইফেলসের রোড ওপেনিং পার্টি। রাবার বস্তি এলাকায় জওয়ানদের কনভয়ে হামলা চালায় সশস্ত্র জঙ্গিরা। রোড ওপেনিং কনভয়ের পিছনে ছিল পর্যটক-বোঝাই একটি গাড়ি। বিস্ফোরণে সেটির কাচ ভেঙে যায়। তবে কেউ হতাহত হননি। অতর্কিত হামলায় হতচকিত হয়ে পড়েছিলেন জওয়ানরা। কিন্তু দ্রুত তাঁরা পাল্টা গুলিবর্ষণ শুরু করেন। ততক্ষণে জঙ্গলের গভীরে পালায় জঙ্গিরা। তাদের খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়। সেনা সূত্রে জানা গিয়েছে, হামলায় নিহত হয়েছেন রাইফেলম্যান এল জিনলেন ভেন নাগাইথে এবং খামপেই ওয়াংসু।
পেঙেরির হামলার পর গোয়েন্দা বিভাগের ‘ব্যর্থতা’ সামনে এসেছিল। সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্ন উঠেছে, প্রজাতন্ত্র দিবসের মুখে কী ভাবে এত বড় জঙ্গিদল জাগুনে ঘাঁটি গড়ল, জাতীয় সড়কে আইইডি পুঁতল— তা টের পেল না সেনা বা পুলিশ! জেলার বাসিন্দাদের একাংশের আশঙ্কা, গত কাল এই হামলা হলে অরুণাচলের ডিজিপি বা বিদেশি কোনও পর্যটকের প্রাণ যেতে পারত।
এ দিন জঙ্গি হানার পর দীর্ঘক্ষণ অরুণাচলগামী সড়ক বন্ধ হয়ে যায়। আটকে পড়েন কয়েকশো পর্যটক। সম্প্রতি বিশ্বের কয়েকটি দেশ নাশকতার আশঙ্কায় উত্তর-পূর্ব ভারত সফরে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। তার প্রতিবাদ করে অসম-সহ উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলি। কিন্তু এ দিন আতঙ্কিত পর্যটকদের সামনে রাজ্যের মুখ পুড়ল।
ঘটনাস্থল পাহারায় সেনা। তিনিসুকিয়ার জাগুনে। ছবি: পিটিআই
পুলিশ, আধা সেনা বা সেনাবাহিনী দাবি করেছিল— শক্তিহীন হয়ে পড়ছে আলফা, খাপলাং, কেএলও, কোর-কোম, পিএলএ। কিন্তু ১৯ নভেম্বর পেঙেরিতে জঙ্গিহানায় তিন জওয়ানের মৃত্যু হয়। ৪ ডিসেম্বর অরুণাচলের চাংলাংয়ে মারা যান এক জেসিও ও এক জওয়ান। ২৬ নভেম্বর মণিপুরে চাণ্ডেলে জঙ্গিদের হামলায় পাঁচ জওয়ান শহিদ হয়েছিলেন। সে সবের রেশ কাটতে না কাটতেই তিনসুকিয়ার জাগুনে হানা দিয়ে জঙ্গিদের যৌথ মঞ্চ প্রমাণ করল, ক্রমে শক্তি বাড়াচ্ছে তারা। বাড়ছে জনসমর্থনও। যে কারণে গ্রামবাসীদের কাছ থেকে জঙ্গি গতিবিধির খবর আগেভাগে পাননি পুলিশের গুপ্তচররা। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের বক্তব্য— পেঙেরিতে আলফা হানার পর গ্রামবাসীদের উপরে সেনা-পুলিশের অত্যাচার বাহিনীর প্রতি জনতার বিদ্বেষ বাড়িয়েছে। তাতেই অনেকটা বন্ধ হয়েছে খবর পাওয়ার রাস্তা।
আলফা ইমেল বিবৃতিতে জানিয়েছে— যৌথ মঞ্চের ‘অপারেশন বারাকের’ অন্তর্গত ছিল ওই হামলা। ১৩ আসাম রাইফেলসের তিন জওয়ানকে হত্যা ও একাধিক জওয়ানকে জখম করার পাশাপাশি তারা দু’টি এ কে ৪৭ ও একটি ইনস্যাস রাইফেল লুঠ করেছে।