Advertisement
E-Paper

আগুন নিভলেও থমথমে বেঙ্গালুরু, আরও এক জনের মৃত্যু হাসপাতালে

কাবেরী নিয়ে জটিল পরিস্থিতিতে শেষমেশ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দ্বারস্থ হলেন কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী। কাবেরী নদীর জলভাগ বির্তকে গত দু’দিন ধরে কর্নাটক ও তামিলনাড়ুতে অশান্তির আগুন জ্বলছে। গোটা বিষয়টি নিয়ে মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপের আবেদন করেছেন সিদ্দারামাইয়া।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ১৪:১৮
চলছে পুলিশি প্রহরা।

চলছে পুলিশি প্রহরা।

কাবেরী নিয়ে জটিল পরিস্থিতিতে শেষমেশ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দ্বারস্থ হলেন কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী। কাবেরী নদীর জলভাগ বির্তকে গত দু’দিন ধরে কর্নাটক ও তামিলনাড়ুতে অশান্তির আগুন জ্বলছে। গোটা বিষয়টি নিয়ে মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপের আবেদন করেছেন সিদ্দারামাইয়া। পাশাপাশি তিনি বলেন, “তামিলনাডুর মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতার সঙ্গেও দেখা করার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ জানিয়েছি।” গোটা পরিস্থিতি নিয়ে চিন্তিত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, “নিজের হাতে আইন তুলে নেওয়াটা কোনও যুক্তিগ্রাহ্য বিকল্প নয়। গত দু’দিনের হিংসায় কেবলমাত্র দরিদ্রদেরই নয় ক্ষতি হচ্ছে দেশের সম্পত্তিরও।” কোনও রকম অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ইতিমধ্যেই অতিরিক্ত সাতশো কেন্দ্রীয় বাহিনী গিয়ে পৌঁছেছে কর্নাটকে।

এ দিন যেন অলিখিত বন্‌ধ চলছে বেঙ্গালুরুতে। সোমবার কাবেরী বির্তকে দিনভর দাঙ্গা, হিংসা, প্রাণহানির পর শহর যেন নিস্তব্ধতায় মোড়া। এ দিকে, সোমবারের দাঙ্গায় আহত এক ব্যক্তির আজ মৃত্যু হয়। পশ্চিম বেঙ্গালুরুতে বিক্ষোভকারীদের হঠাতে লাঠিচার্জ করে পুলিশ। অভিযোগ, লাঠিচার্জ থেকে বাঁচতে গত কাল একটি বহুতল থেকে ঝাঁপ দিয়ে গুরুতর জখম হন তিনি। এ দিন হাসপাতালে মারা যান কুমার নারায়ণ নামে ৩২ বছরের সেই ব্যক্তি। মৃতের পরিবারের দাবি, ওই বহুতলে উঠে কুমারের উপর এলোপাথা়ড়ি লাঠি চালায় পুলিশ। যার ফলে তাঁর মুখে, পায়ে ও মেরুদণ্ডে চোট লাগে।

এ দিন ইদের জন্য স্কুল-কলেজ-সরকারি অফিস ছুটি থাকলেও খোলা ছিল বহু বেসরকারি অফিস। তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের সঙ্গে যুক্ত কর্মীরাও কর্মক্ষেত্রে এসেছিলেন। তবে অন্য দিনের মতো এ দিন রাস্তাঘাটে মানুষজনের খুব একটা দেখা মেলেনি। যানবাহন চলাচলও কম। সন্ধ্যা পর্যন্ত শহরে মেট্রো পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়। রাজ্যবাসীর কাছে আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য আহ্বান জানান মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া। বেঙ্গালুরু পুলিশের দাবি, শহরের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। শান্তি বজায় রাখার জন্য মানুষের কাছে আবেদন জানিয়ে টুইট করেছে পুলিশ। বিক্ষোভের নামে আইন হাতে তুলে নিলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। পুলিশের সঙ্গে সব রকমের সহযোগিতা ও সাহায্যের জন্য আপৎকালীন ভিত্তিতে হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরও টুইট করেছে পুলিশ।

আরও পড়ুন
ইদেও অশান্ত কাশ্মীর, বাহিনীর গুলিতে মৃত ১, ফের প্ররোচনা শরিফের

কাবেবী নদীর জলবণ্টন নিয়ে পড়শি রাজ্য তামিলনাড়ুর সঙ্গে বিবাদের সূত্রপাত উনিশ শতকে। সালটা ১৯২৪। কাবেরীর জল ভাগবাটোয়ারা নিয়ে চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছিল মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির সঙ্গে মহীশূর রাজ্যের। কিন্তু, ১৯৭৪ সালে সেই চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর থেকে কর্নাটক ও তামিলনাড়ুর মধ্যে জল নিয়ে বিবাদের মধ্যস্থতা শুরু করে কেন্দ্র।

গত কাল দু’রাজ্যের মধ্যে জলভাগ করা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের পরিবর্তিত রায়ের পর বেরোনোর পর থেকে ফের এক বার পরিস্থিতির অবনতি হয়। শীর্ষ আদালতের নির্দেশে তামিলনাড়ুকে ২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রতি দিন ১২ হাজার কিউসেক জল দেওয়ার কথা বলা হয়। যদিও এর আগের নির্দেশে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দিনে ১৫ হাজার কিউসেক জল ছাড়ার কথা বলা হয়েছিল। কর্নাটকের দাবি, দিনে ৩ হাজার কিউসেক জল কম ছাড়তে হলেও, দিনের হিসেবে জলের পরিমাণ অনেক বেড়ে যাচ্ছে।

গত কাল সকাল থেকেই দু’রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়। বেঙ্গালুরু-সহ কর্নাটকের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। প্রতিবাদীরা শহরের বিভিন্ন জায়গায় তামিলনাড়ুর নম্বরপ্লেট লাগানো গাড়ি জ্বালিয়ে দেয়। পাথর ছোড়া হয় বাসস্ট্যান্ডে। ভাঙচুর হয় স্কুলবাসেও। বন্ধ হয়ে যায় অধিকাংশ স্কুল-কলেজ। সাময়িক ভাবে হলেও বিঘ্নিত হয় মেট্রো পরিষেবা। দাঙ্গার জেরে অচল হয়ে যায় স্বাভাবিক জনজীবন। ১৬টি জায়গায় কার্ফু জারি করা হয়। রাতের দিকে বেঙ্গালুরুতে পুলিশের গুলিতে মারা যান এক জন।

এ দিন সকাল থেকে রাজ্যের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য উদ্যোগী হয় সরকার। আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য আবেদন করেছেন রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তাঁর দাবি, কিছু সংগঠনের নাম করে রাজ্যে হিংসা ছড়াচ্ছে কয়েক জন বিক্ষোভকারী। দোষীদের খুঁজে বের করা তাদের যথাযথ শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। বিজেপি নেতা তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নাইডু দু’রাজ্যেই শান্তি বজায় রাখতে মিডিয়ার গঠনমূলক ভূমিকার কথা উল্লেখ করেছেন।

ইদ উপলক্ষে এ দিন রাজ্যের স্কুল-কলেজ-সরকারি অফিসে ছুটি। কিন্তু, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেও যেন অলিখিত ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। গত কালের উত্তপ্ত পরিস্থিতির পর আজ বাড়ির বাইরে পা রাখতে ভরসা পাননি অধিকাংশ মানুষ। রাস্তা থেকে উধাও বাস-ট্যাক্সি-অটো। যানবাহনের অভাবে ভোগান্তি পড়েছেন অনেকেই। শহর জুড়ে টহল দিচ্ছে র‌্যাফ ও পুলিশকর্মীরা।

Bengaluru violence Cauvery row
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy