ঝাড়খণ্ডে বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারে গিয়েও পড়শি বাংলাকে নিশানা করলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। অনুপ্রবেশ সমস্যা নিয়ে অ-বিজেপি শাসিত দুই প্রতিবেশী রাজ্যকে একযোগে আক্রমণ করলেন তিনি। দাবি, বাংলাদেশ থেকে সীমান্ত পেরিয়ে অনুপ্রবেশকারীদের ভারতে ঢুকে পড়া চাইলেই আটকে দিতে পারে পশ্চিমবঙ্গ এবং ঝাড়খণ্ড সরকার। স্থানীয় প্রশাসন এবং রাজ্য সরকারের প্রশ্রয়েই অনুপ্রবেশ বেড়ে চলেছে। রাঁচীর সভা থেকে দুই রাজ্য সরকারকেই এ নিয়ে কটাক্ষ করেছেন শাহ।
ঝাড়খণ্ডে বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে নভেম্বরেই। তার আগে সে রাজ্যে নির্বাচনী প্রচারে গিয়েছেন শাহ। ওই রাজ্যে বিজেপি সরকার গঠনের ডাক দিয়েছেন তিনি। ঝাড়খণ্ডেও শাহের প্রচারের অন্যতম হাতিয়ার ছিল অনুপ্রবেশ সমস্যা। কিছু দিন আগে পশ্চিমবঙ্গে এসে যে সমস্যার কথা তুলেছিলেন শাহ। বনগাঁয় বিএসএফের অনুষ্ঠানে গিয়ে অনুপ্রবেশের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন তিনি।
আরও পড়ুন:
শনিবার রাতে রাঁচীতে পৌঁছন শাহ। রবিবার একটি সভায় অনুপ্রবেশের প্রসঙ্গ উঠলে বাংলার দৃষ্টান্ত টেনে তিনি বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে অনুপ্রবেশ এখনও বন্ধ হয়নি। কারণ, স্থানীয় প্রশাসনই সেখানে অনুপ্রবেশকে প্রশ্রয় দিচ্ছে। ঝাড়খণ্ডেও অনুপ্রবেশ বন্ধ হয়নি একই কারণে। স্থানীয় প্রশাসন প্রশ্রয় দিচ্ছে। বিএসএফ তো সব জায়গায় আছে। অসমেও আছে, বাংলা এবং ঝাড়খণ্ডেও আছে।’’
ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনকে কটাক্ষ করে শাহের আরও সংযোজন, ‘‘বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সীমান্তে কোথাও নদীনালা রয়েছে, কোথাও পাহাড় রয়েছে। সর্বত্র সুরক্ষা সম্ভব নয়। কিন্তু আমি হেমন্তবাবুকে জিজ্ঞাসা করতে চাই, ঝাড়খণ্ডে যদি কোনও অনুপ্রবেশকারী ঢোকেন, আপনার ভূমিরাজস্ব দফতর তখন কী করে? জেলাশাসকেরাই বা কী করছেন? পুলিশে কোনও অভিযোগ দায়ের হচ্ছে না কেন? কেন্দ্রীয় সরকারকে কেন জানানো হচ্ছে না?’’
আরও পড়ুন:
ঝাড়খণ্ডে বিজেপি ক্ষমতায় এলে অনুপ্রবেশের সমস্যা মিটে যাবে, আশ্বাস দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘‘এখানে বিজেপি সরকার গঠন করুক। পরিস্থিতি বদলে যাবে। আমাদের কর্মী থেকে শুরু করে মুখ্যমন্ত্রী, সকলেই অনুপ্রবেশ আটকাবেন। অনুপ্রবেশকারীদের দেশ থেকে বার করে দেবেন। হেমন্তবাবু তো দায়িত্ব এড়াতে পারেন না। এ বিষয়ে ওঁর কোনও উত্তর নেই। অনুপ্রবেশ আটকানোর কোনও মানসিকতাই নেই ওঁর। কোনও মুখ্যমন্ত্রী কি এমন হন?’’
উল্লেখ্য, কিছু দিন আগে বাংলায় এসে শাহ ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে পরিবর্তনের ডাক দিয়েছিলেন। অনুপ্রবেশ নিয়ে বলেছিলেন, ‘‘২০২৬ সালে আপনারা পরিবর্তন এনে দিন রাজ্যে। বেআইনি অনুপ্রবেশ বন্ধ করে দেব। উন্নয়নই মোদী সরকারের একমাত্র লক্ষ্য।’’ একই ‘অস্ত্র’ শাহ ব্যবহার করলেন ঝাড়খণ্ডে গিয়েও।
আগামী ১৩ এবং ২০ নভেম্বর ঝাড়খণ্ডের ৮১টি আসনে দু’দফায় বিধানসভা ভোট হবে। ভোটের ফলাফল জানা যাবে ২৩ নভেম্বর। ২০১৯-এর বিধানসভা ভোটে প্রায় সাড়ে ৩৫ শতাংশ ভোট পেয়ে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়েছিল ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা (জেএমএম)-কংগ্রেস-আরজেডির ‘মহাগঠবন্ধন’। এ বারও তিন দল একসঙ্গে লড়ছে। সঙ্গে পেয়েছে বাম দল সিপিআইএমএল (লিবারেশন)-কে। ক্ষমতাসীন জোটের সঙ্গে মূল লড়াই বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ-র। গত বার আলাদা লড়লেও বিজেপি এ বার প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী সুদেশ মাহাতোর ‘অল ঝাড়খণ্ড স্টুডেন্টস ইউনিয়ন’ (আজসু)-এর সঙ্গে জোট গড়েছে। সঙ্গে রয়েছে বিহারের নীতীশ কুমারের দল জেডিইউ এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী চিরাগ পাসোয়ানের দল এলজেপি (রামবিলাস)।