Advertisement
E-Paper

ঘুষ নিয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, তদন্তে নাক গলিয়েছেন ডোভাল! বিস্ফোরক সিবিআই কর্তা

সিবিআইয়ের অন্দরে ব্যাপক দুর্নীতি ও তাদের কাজকর্মে অস্বচ্ছতা নিয়ে সম্প্রতি বিতর্ক মাথাচাড়া দেয়। তাতেই প্রথম খবরের শিরোনামে উঠে আসেন মণীশ সিংহ।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০১৮ ১৫:২৬
আস্থানার বিরুদ্ধে তদন্তে নেমেছিলেন মণীশ কুমার সিংহ।

আস্থানার বিরুদ্ধে তদন্তে নেমেছিলেন মণীশ কুমার সিংহ।

গোয়েন্দাদের নজরে ছিলেন দুর্নীতিগ্রস্ত এক দুঁদে ব্যবসায়ী। কিন্তু তাঁকে বাঁচাতে এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কয়েক কোটি টাকা ঘুষ নিয়েছিলেন।আদালতে এমন বিস্ফোরক দাবি করলেন সিবিআইয়ের যুগ্ম ডিরেক্টর মণীশ কুমার সিংহ। গোয়েন্দা প্রধান রাকেশ আস্থানার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করায় সম্প্রতি তাঁকে নাগপুরে বদলি করা হয়।

সুপ্রিম কোর্টে বদলির নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন মণীশ কুমার সিংহ। সোমবার আদালতে তিনি বলেন, তাঁর কাছে এমন কিছু নথিপত্র রয়েছে, যা দেখলে আদালতও স্তম্ভিত হয়ে যাবে। ক্ষমতাশালীদের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রমাণ হাতে পেয়েছিলেন। সে খবর চাপা থাকেনি। তাই ইচ্ছাকৃতভাবে, অসাধু উপায়ে দ্রুত বদলি করা হয় তাঁকে। যাতে অভিযুক্তরা রেহাই পেয়ে যান। নিজের আবেদনে সরাসরি জাতীয় উপদেষ্টা অজিত ডোভালের নামও উল্লেখ করেন তিনি। বলেন, রাকেশ আস্থানার বিরুদ্ধে তদন্তেও অবাঞ্ছিত ভাবে নাক গলাতে শুরু করেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল। তাঁর বাড়িতে তল্লাশিতেও বাধা দেন।

মণীশ সিংহ জানিয়েছেন, ১৫ অক্টোবর আস্থানার বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের হয়। ১৭ অক্টোবর বিষয়টি জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থাকে (এনএসএ) জানান তৎকালীন সিবিআই ডিরেক্টর অলোক বর্মা। সেই রাতেই আস্থানার কাছে খবর পৌঁছে যায়। যার পর এনএসএ-র কাছে গ্রেফতার এড়াতে আর্জি জানান আস্থানা। তদন্ত চলাকালীন তাঁর মোবাইল ফোনটি বাজেয়াপ্ত করতে চান তদন্তকারী অফিসার একে বাস্সি। কিন্তু এনএসএ-র অনুমতি মেলেনি বলে তাঁকে নিরস্ত করেন সিবিআই ডিরেক্টর।

আরও পড়ুন: ‘আগে মন্দির পরে সরকার,’ ভোটের আগে নয়া স্লোগান শিবসেনার​

আরও পড়ুন: বিজেপি নেতাদের উপর হামলার জের, রাজ্য জুড়ে বিক্ষোভ-অবরোধ-মিছিল​

সিবিআইয়ের অন্দরে ব্যাপক দুর্নীতি ও তাদের কাজকর্মে অস্বচ্ছতা নিয়ে সম্প্রতি বিতর্ক মাথাচাড়া দেয়। তাতেই প্রথম খবরের শিরোনামে উঠে আসেন মণীশ সিংহ। তৎকালীন সিবিআইয়ের দু’নম্বর রাকেশ আস্থানার বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠলে বিষয়টির তদন্তভার হাতে পান তিনি। জানা যায়, হায়দরাবাদের ব্যবসায়ী সতীশ সানা বেশ কয়েক বছর ধরে গোয়েন্দাদের নজরে ছিলেন। একাধিক মামলায় তাঁর নাম জড়িয়েছে। এমনকি,আর্থিক নয়ছয় মামলায় অভিযুক্ত গো-মাংস রফতানিকারী মইন কুরেশির সঙ্গেও নাম জুড়েছে। সেই তদন্ত থেকেসতীশ সানাকে রেহাই দিতে মোটা টাকা ঘুষ নেন আস্থানা।

মণীশ সিংহের দাবি, ওই দুর্নীতি মামলায় দুই মধ্যস্থতাকারীকে গ্রেফতার করা হয়। তারা ডোভালের ঘনিষ্ঠ। গ্রেফতার হওয়ার পর গোয়েন্দাদের সামনে হম্বিতম্বি শুরু করে তাদের মধ্যে একজন। তার নাম মনোজ প্রসাদ। সে জানায়, তাদের বাবা শ্রী দীনেশ্বর প্রসাদ ‘র’-এর অবসরপ্রাপ্ত প্রাক্তন যুগ্ম সচিব। সেই সূত্রে ডোভালের সঙ্গে দহরম মহরম তাদের। তা সত্ত্বেও কোন স্পর্ধায় তাকে গ্রেফতার করল সিবিআই!

সরকারি আমলাদের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে বলে নাকি জেরায় মেনে নেন সতীশ সানাও। মণীশ সিংহকে তিনি জানান, তদন্ত থেকে নিষ্কৃতি পেতে কেন্দ্রীয় কয়লা ও খনি মন্ত্রী হরিভাই পার্থীভাই চৌধুরিকে কয়েক কোটি টাকার ঘুষ দিয়েছেন। গুজরাতের সাংসদ হরিভাই চৌধুরি আবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঘনিষ্ঠ। মইন কুরেশি সংক্রান্ত মামলায় কেন্দ্রীয় ভিজিল্যান্স কমিশনার (সিভিসি) কেভি চৌধুরির সঙ্গেও দেখা করেন সতীশ সানা। যার পর ১১ নভেম্বর মণীশ সিহের সঙ্গে যোগাযোগ করেন কেন্দ্রীয় আইন সচিব সুরেশচন্দ্র। বিষয়টি মিটিয়ে নিতে চাপ দেন।

নিজের আবেদনে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য তুলে ধরেছেন মণীশ সিংহ। তিনি জানিয়েছেন, নজরদারি চলাকালীন ‘র’ অফিসার সামন্ত গোয়েলের একটি কথোপকথন সামনে আসে। যাতে প্রধানমন্ত্রীর দফতর সিবিআই বিতর্ক মিটিয়ে ফেলেছে বলে মন্তব্য করতে শোনা যায় তাঁকে। যে রাতে সিবিআইয়ের অন্দরে বড় ধরনের রদবদল ঘটানো হয়, সেই রাতেই নাকি ওই মন্তব্য করেন তিনি। সামন্ত গয়ালের সঙ্গে মনোজের পরিবারেরও যোগাযোগ ছিল। জেরায় নিজেই সে কথা গোয়েন্দাদের জানায় সে। বলে, তার দাদা সোমেশ এবং সামন্ত ব্যক্তিগতভাবে ডোভালকে সাহায্য করেছিলেন। তাই তাঁদের মধ্যে সুসম্পর্ক।

রাকেশ আস্থানার বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ দেওয়ায় সিবিআই ডিরেক্টর অলোক বর্মাকে গতমাসে আচমকাই জোর করে ছুটিতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সরকারি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতে আবেদন জমা দিয়েছেন ‘নির্বাসিত’ সিবিআই ডিরেক্টর। মঙ্গলবার বিষয়টির শুনানি। তাঁরই সঙ্গে নিজের আবেদনের শুনানি চেয়েছিলেন মণীশ সিংহ। কিন্তু তাঁর আবেদন খারিজ করে দেন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ। আস্থানা মামলা ছাড়াও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তদন্তের দায়িত্বে ছিলেন মণীশ সিংহ। যার মধ্যে অন্যতম হল রত্ন ব্যবসায়ী নীরব মোদী এবং তাঁর মামা মেহুল চোকসির বিরুদ্ধে ওঠা ব্যাঙ্ক জালিয়াতি কাণ্ড।

Bribe CBI Supreme Court Union Minister
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy