বেলডাঙায় পুড়িয়ে দেওয়া সেই ট্রেন দাঁড়িয়ে। —ফাইল চিত্র
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ)-এর প্রতিবাদে বিক্ষোভের জেরে এ বার উত্তরপ্রদেশে নিষিদ্ধ হতে পারে মুসলিমপন্থী সংগঠন পপুলার ফ্রন্ট অব ইন্ডিয়া (পিএফআই)। উত্তরপ্রদেশ পুলিশের ডিজিপি ওপি সিংহ বুধবার জানিয়েছেন, পিএফআই-কে নিষিদ্ধ ঘোষণার আর্জি জানিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে চিঠি লেখা হয়েছে। যদিও সংগঠনের নেতারা ঘটনার দায় এড়িয়েছেন। অন্য দিকে পশ্চিমবঙ্গেও বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভে পিএফআই নেতৃত্ব দিয়েছিল বলে গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে।
সিএএ-র প্রতিবাদে তুমুল বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে লখনউ-সহ উত্তরপ্রদেশের প্রায় সব শহর। কার্যত জঙ্গি বিক্ষোভে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি তৈরি হয় গোটা রাজ্যে। সেই পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হতেই শুরু হয় তদন্ত। উত্তরপ্রদেশ পুলিশ ও গোয়েন্দাদের দাবি, অধিকাংশ জায়গাতেই বিক্ষোভের নেতৃত্বে ছিল এই সংগঠন। পরিকল্পনা করেই ভাঙচুর, অগ্নি সংযোগ, পুলিশের উপর আক্রমণ, সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করেন এই সংগঠনের সদস্যরা। সেই রিপোর্টের ভিত্তিতেই এ বার ওই সংগঠনকে উত্তরপ্রদেশে নিষিদ্ধ করার আর্জি জানিয়ে চিঠি পাঠাল যোগী সরকার।
ডিজি ও পি সিংহ বলেন, ‘‘বিক্ষোভে সরাসরি যুক্ত থাকার অভিযোগে সংগঠনের উত্তরপ্রদেশের প্রধান ওয়াসিম-সহ ১৬ জন গ্রেফতার হয়েছিল। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ এবং অন্যান্য গোয়েন্দা তথ্যের উপর ভিত্তি করেই এই দাবি জানানো হয়েছে।’’ অন্য দিকে সে রাজ্যের উপ-মুখ্যমন্ত্রী কেশব প্রসাদ মৌর্য বলেন, ‘‘সিএএ বিরোধী মিছিলে বড় আকারের ক্ষয়ক্ষতির পিছনে পিএফআই-এর হাত ছিল। এই ধরনের সংগঠনকে বাড়তে দেওয়া যায় না। নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন স্টুডেন্টস ইসলামিক মুভমেন্ট অব ইন্ডিয়া বা সিমির-ই অন্য রূপ।’’
তবে পিএফআই এক বিবৃতিতে পুলিশের তোলা অভিযোগ অস্বীকার করেছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘অসাংবিধানিক সিএএ-র বিরুদ্ধে যে ভাবে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ হয়েছে, স্বাধীনতার পর এত বড় কোনও আন্দোলন আর হয়নি।’’ তাদের অভিযোগ, বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে দমন-পীড়ন চলছে।
পশ্চিমবঙ্গেও হাওড়ার উলুবেড়িয়া, মুর্শিদাবাদের বেলডাঙা, সূতি, রেজিনগর মালদহের বিভিন্ন প্রান্তে সিএএ-র বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ-বিক্ষোভ হয়েছিল। ট্রেন জ্বালিয়ে দেওয়া থেকে শুরু ব্যাপক সরকারি সম্পত্তির ক্ষতি করা হয়েছিল। সেই বিক্ষোভের নেতৃত্বেও যে এই পিএফআই ছিল, তা উঠে এসেছে গোয়েন্দাদের তদন্তে। যদিও সংগঠনের দাবি ছিল, এই বিক্ষোভ স্বতঃস্ফূর্ত। এতে সংগঠনের কোনও ভূমিকা নেই। বিক্ষোভে সংগঠনের কাউকে দেখা গেলে তাঁরা ব্যক্তিগত ভাবে অংশ নিয়েছিলেন। কিন্তু কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এবং রাজ্যের গোয়েন্দারাও স্বীকার করেছেন যে, এই তাণ্ডব সুপরিকল্পিত এবং সংগঠিত। কোনও ভাবেই অনিয়ন্ত্রিত নয়।
ওই সময়ের তাণ্ডবের পর এক শীর্ষ কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা ব্যাখ্যা করেন, ‘‘ওই দিন যে ক’টি জায়গায় বড় অশান্তি হয়েছে, সবক’টিই শুরু হয়েছে প্রায় একই সময়। বিকেল তিনটের সামান্য আগে পরে। সাধারণ ভাবে দেখা যায়, এক জায়গায় গণ্ডগোল শুরু হলে সেই খবর ছড়িয়ে পড়ার পর অন্য জায়গায় গণ্ডগোল হয়। এখানে তা নয়।’’ ঠিক একই ভাবে সবক’টি বিক্ষোভ এবং গণ্ডগোলের ঘটনায় আরও একটা বিষয়ে চোখে পড়ার মতো মিল খুঁজে পেয়েছেন রাজ্যের গোয়েন্দারাও। তাঁদের এক কর্তা বলেন, ‘‘কোনও জায়গায় কোনও রাজনৈতিক দল বা ইসলামিক সংগঠনের পতাকা ব্যানার ফেস্টুন ব্যবহার করা হচ্ছে না। জাতীয় পতাকা সামনে রেখে অবরোধ করা হচ্ছে। অবরোধকারীদের কয়েকজনের হাতে থাকছে কালো পতাকা।’’ এই সব মিল, গোয়েন্দাদের সূত্র মারফত পাওয়া খবর এবং আন্দোলনের গতিপ্রকৃতি বিশ্লেষণ করার পর গোয়েন্দারা কার্যত নিশ্চিত, রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্ষোভের নেতৃত্বেও ছিল এই পিএফআই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy