কাশ্মীরের পহেলগামে জঙ্গি হামলার পরে ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনার ঊর্ধ্বমুখী পারদকে প্রশমিত করতে উদ্যোগী আমেরিকা। আজ গভীর রাতে (ভারতীয় সময়) সে দেশের বিদেশসচিব মার্কো রুবিয়ো ভারতের বিদেশমন্ত্রীকে ফোন করে পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন। জয়শঙ্করকে সন্ত্রাস দমনে সহযোগিতা করার এবং দক্ষিণ এশিয়ায় উত্তেজনা কমানোর পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
পহেলগামে জঙ্গি নাশকতার পরে দুই দেশকেই উদ্ভূত সমস্যার ‘দায়িত্বশীল সমাধান’ খুঁজতে বলেছিল প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন। কিন্তু তাতেও পরিস্থিতি তেমন বদলায়নি। তাই এ বার আসরে নামলেন রুবিয়ো। তিনি সরাসরি ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে কথা বললেন।
আমেরিকার বিদেশ দফতরের মুখপাত্রের ওয়েবসাইটে রাতে রুবিয়োর বক্তব্য প্রকাশ করেন বিদেশ দফতরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘আজ বিদেশসচিব মার্কো রুবিয়ো ভারতের বিদেশমন্ত্রী সুব্রহ্মণ্যম জয়শঙ্করের সঙ্গে কথা বলেছেন। পহেলগামে নৃশংস হত্যার ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন তিনি। একই সঙ্গে আশ্বাস দিয়েছেন, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ভারতের পাশে থাকবে আমেরিকা’। ভারত-পাক উত্তেজনা প্রশমনের পরামর্শও দিয়েছেন রুবিয়ো। ওয়েবসাইটে লেখা হয়েছে, ‘দু’দেশের মধ্যে যে উত্তজনার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তা নিরসনে ভারত পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনা করুক। এবং দক্ষিণ এশিয়ার শান্তি ও সুস্থিতি বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করুক ভারত’।
এর আগে, আজই সাংবাদিক বৈঠকে ট্যামি ব্রুস বলেছিলেন যে, ‘‘আমরা উভয় পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। তাদের বলছি, পরিস্থিতি আরও খারাপ না করতে। মঙ্গল বা বুধবারের মধ্যেই বিদেশসচিব ভারত এবং পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলবেন। অন্য রাষ্ট্রনেতা এবং বিদেশমন্ত্রীদেরও তিনি পহেলগাম কাণ্ড নিয়ে দুই দেশের সঙ্গে কথা বলতে উৎসাহ দিচ্ছেন।’’ তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে এ দিনই সৌদি আরব ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে গুলিবর্ষণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। অন্য দিকে, ভারতের পাশে থাকার জন্য কুয়েতকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।
তবে পাঁচ দিন আগে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফের করা আমেরিকা সংক্রান্ত মন্তব্য নিয়ে এক সাংবাদিকের প্রশ্ন আজ কার্যত এড়িয়ে যান ট্যামি ব্রুস। সাক্ষাৎকারে আসিফ বলেছিলেন, “গত তিন দশক ধরে আমেরিকা এবং পশ্চিমি দেশগুলির জন্য (যার মধ্যে ব্রিটেনও রয়েছে) এই নোংরা কাজটি (জঙ্গি সংগঠনগুলিকে সমর্থন) করে আসছি।”
প্রশ্ন উঠছে, দেশের এই আপৎকালীন সময়ে এমনটা কেন বললেন পাক প্রতিরক্ষামন্ত্রী আসিফ? কূটনৈতিক শিবির মনে করছে এর অনেকগুলি কারণ থাকতে পারে। প্রথমত, নাশকতার দীর্ঘমেয়াদি অভিযোগের দায় নিজেদের ঘাড় থেকে সরিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তথা ভারতকে বার্তা দেওয়া। দুই, আফগানিস্তান থেকে আমেরিকা সেনা তুলে নেওয়ার পরে পাকিস্তান আমেরিকার কোনও সহায়তা পাচ্ছে না। ফলে আমেরিকাকে বিশ্বের সামনে নগ্ন করতে তাদের কোনও সমস্যা নেই আর। তিন, ভারতের সঙ্গে কৌশলগত ও সামরিক সম্পর্ক বাড়াচ্ছে আমেরিকা। তাকে কিছুটা নিশানা করতে চায় পাকিস্তান।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)