Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

লগ্নি টানতে মার্কিন দলের সঙ্গে বসছে কেন্দ্র

বাজেটে বড় মাপের সংস্কার করতে পারেননি বলে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে। বিদেশি লগ্নি দিয়েই সেই অভাব ঢাকতে চাইছেন নরেন্দ্র মোদী-অরুণ জেটলি। আগামিকাল একটি উচ্চপর্যায়ের মার্কিন বাণিজ্যিক প্রতিনিধি দল ভারতে আসছে। বাজেট ও রেল বাজেটে প্রতিরক্ষা, বিমা ও রেলের পরিকাঠামোয় বিদেশি লগ্নির দরজা খুলে দেওয়ার পর এ বার সেই সুযোগকে কাজে লাগাতে চাইছে মোদী সরকার।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০১৪ ০৩:৪৭
Share: Save:

বাজেটে বড় মাপের সংস্কার করতে পারেননি বলে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে। বিদেশি লগ্নি দিয়েই সেই অভাব ঢাকতে চাইছেন নরেন্দ্র মোদী-অরুণ জেটলি।

আগামিকাল একটি উচ্চপর্যায়ের মার্কিন বাণিজ্যিক প্রতিনিধি দল ভারতে আসছে। বাজেট ও রেল বাজেটে প্রতিরক্ষা, বিমা ও রেলের পরিকাঠামোয় বিদেশি লগ্নির দরজা খুলে দেওয়ার পর এ বার সেই সুযোগকে কাজে লাগাতে চাইছে মোদী সরকার। কোথায় কোথায় বিদেশি লগ্নির সম্ভাবনা তৈরি রয়েছে, তা মার্কিন দলটির সামনে তুলে ধরা হবে। ওই প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন এক ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন সরকারের বাণিজ্য দফতরের অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অরুণ এম কুমার।

জেটলি গত কাল বাজেটে প্রতিরক্ষা ও বিমা ক্ষেত্রে ৪৯ শতাংশ পর্যন্ত বিদেশি লগ্নির ছাড়পত্র দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন। রেল বাজেটে পরিকাঠামো ক্ষেত্রে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত বিদেশি লগ্নির কথা ঘোষণা হয়েছিল। এ বিষয়ে মন্ত্রিসভার আনুষ্ঠানিক অনুমোদনের জন্য ক্যাবিনেট নোট পাঠানো হচ্ছে। তার আগে থেকেই লগ্নিকারীদের টানার চেষ্টা শুরু করে দিচ্ছে কেন্দ্র। আজই লোকসভায় শিল্প ও বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন জানিয়েছেন, প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নির প্রস্তাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এখন থেকে তিন মাসে মধ্যে ছাড়পত্র দেবে। আগে এই ধাপটিতেই অত্যধিক সময় লাগত বলে অভিযোগ ছিল।

তিনটি ক্ষেত্রেই এখন কত বিদেশি লগ্নি আসে, সেটাই দেখার। পূর্ব অভিজ্ঞতা বলছে, রেলের পরিকাঠামো ক্ষেত্রে বিদেশি লগ্নি তেমন আসে না। বিমা ক্ষেত্রে ৪৯ শতাংশ বিদেশি লগ্নির অনুমতি দেওয়ার কথা বলা হলেও তার জন্য বিদেশি লগ্নি উন্নয়ন পর্ষদের অনুমতি নিতে হবে। সরাসরি কেউ লগ্নি করতে পারবে না। স্কটল্যান্ডের স্ট্যান্ডার্ড লাইফ, ফ্রান্সের অ্যাক্সা গোষ্ঠী ও অ্যালায়াঞ্জ, ব্রিটেনের লম্বার্ডের মতো সংস্থাগুলি ইতিমধ্যেই এ দেশের বেসরকারি বিমা সংস্থাগুলির সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেছে। এখনও পর্যন্ত ওই সংস্থাগুলি ২৬ শতাংশ পর্যন্ত লগ্নি করেছে। বিদেশি সংস্থাগুলি ৪৯ শতাংশ পর্যন্ত নিজেদের লগ্নি বাড়িয়ে নিলে আগামী পাঁচ থেকে ছ’মাসের মধ্যে দেশের বাজারে অন্তত ৩০০ কোটি ডলারের বিনিয়োগ আসতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট মহলের বক্তব্য।

বিমা বিশেষজ্ঞদের কারও কারও এমনও মত যে, ৫১ শতাংশ পর্যন্ত লগ্নির অনুমতি দেওয়া হলেই বিমা ক্ষেত্রের প্রকৃত সংস্কার হতো। কিন্তু জেটলি সেই সাহস দেখাতে পারেননি। আবার ৪৯ শতাংশ পর্যন্ত লগ্নির অনুমতি দেওয়া হলেও বিমা সংস্থার পরিচালন পর্ষদে বিদেশি বিনিয়োগকারীর ভোটাধিকার ২৬ শতাংশেই বেঁধে রাখা হয়েছে। বিদেশি লগ্নির ঊর্ধ্বসীমা ২৬ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪৯ শতাংশ করার জন্যও সংসদের অনুমোদন নিতে হবে অর্থমন্ত্রীকে। মজার কথা, বিজেপি নিজেই এত দিন বিমা ক্ষেত্রে বিদেশি লগ্নির বিরোধিতা করে আসছিল। তাই ইউপিএ সরকার চাইলেও বিমায় বিদেশি লগ্নির ঊর্ধ্বসীমা বাড়াতে পারেনি। নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে আসা মোদী সরকারের অর্থমন্ত্রী মনে করছেন, তিনি এ বার দল ও সরকারের সমর্থন পাবেন।

একই ভাবে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম তৈরিতে ৪৯ শতাংশ বিদেশি লগ্নির দরজা খুলে দেওয়া হলেও সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশ সন্দিহান। তাঁদের মতে, বিদেশি প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম নির্মাণকারী সংস্থাগুলিকে ৫১ শতাংশ লগ্নির অনুমতি না দেওয়া হলে তারা ভারতের বাজারে আসবে না। কারণ প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের চাহিদা বা বাজার দর নির্ভর করে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির উপর। ৫১ শতাংশ লগ্নি করলেই সংস্থার নিয়ন্ত্রণ বিদেশি বিনিয়োগকারীদের হাতে থাকবে। একমাত্র সেক্ষেত্রেই তারা নিজস্ব প্রযুক্তি নিয়ে এ দেশে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম তৈরি করতে আসবে বলে ওই বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।

আন্তর্জাতিক মন্দা এবং মনমোহন সরকারের নীতিপঙ্গুত্বের ধাক্কায় গত কয়েক বছরে ভারতে বিদেশি লগ্নির ছবিটা মোটেই ভাল নয়। জেটলিও সরকারি কোষাগারে আয়-ব্যয়ের ঘাটতিকে ৪.১ শতাংশে বেঁধে রাখার যে লক্ষ্যমাত্রা রেখেছেন, তা পূরণের সম্ভাবনা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে ফিচ, মুডি’জ, স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড পুওর্স-এর মতো রেটিং এজেন্সিগুলি। শেয়ার বাজারেও তেমন কোনও সাড়া ফেলতে পারেনি বাজেট। তাই বিদেশি বাণিজ্য প্রতিনিধি দলগুলির সঙ্গে সরাসরি দৌত্য চালিয়েই বিদেশি লগ্নি টানার চেষ্টা করতে চাইছেন মোদী সরকার।

আগামিকাল মার্কিন প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক দিয়ে সেই চেষ্টাই শুরু হবে। দলটির নেতা অরুণ এম কুমার মার্কিন বাণিজ্য দফতরে আন্তর্জাতিক বাজারের দায়িত্বে রয়েছেন। প্রতিনিধি দলে থাকছেন বাণিজ্য দফতর, বিদেশ দফতর ও সরকারি বাণিজ্য প্রতিনিধি দফতরের আধিকারিকরাও। মূলত অর্থ ও বাণিজ্য মন্ত্রকের শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গেই বৈঠক করবেন তাঁরা। ছ’দিনের ভারত সফরে দিল্লি ছাড়া মুম্বই ও হায়দরাবাদেও যাবেন মার্কিন প্রতিনিধিরা। একই ভাবে শিল্পমহল ও বণিকসভাগুলিকে পাশে রাখতেও আগামিকাল থেকে তাদের সামনে বাজেটের খুঁটিনাটি দিকগুলি ব্যাখ্যা করবেন অর্থ মন্ত্রকের শীর্ষকর্তারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

modi government business delegates usa
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE