Advertisement
E-Paper

উপাচার্যের ইস্তফা নিয়ে ধন্দ দিল্লিতে

ভর্তি শুরু হওয়ার কথা ছিল আজ থেকে। অনির্দিষ্ট কালের জন্য তা স্থগিত হয়ে গিয়েছে। গত বছর যাঁরা ভর্তি হয়েছেন, চরম অনিশ্চয়তায় তাঁরাও। কারণ, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক স্তরের পাঠ্যক্রমের মেয়াদ ৪ বছর থেকে কমিয়ে আবার ৩ বছর করা নিয়ে জট কাটেনি আজও। এর মধ্যেই ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে উপাচার্য দীনেশ সিংহের ইস্তফা নিয়ে। বিদেশের শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্য আনতে দীনেশ সিংহই চার বছরের পাঠ্যক্রম চালু করেছিলেন গত বছর থেকে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০১৪ ০২:৩৬

ভর্তি শুরু হওয়ার কথা ছিল আজ থেকে। অনির্দিষ্ট কালের জন্য তা স্থগিত হয়ে গিয়েছে। গত বছর যাঁরা ভর্তি হয়েছেন, চরম অনিশ্চয়তায় তাঁরাও। কারণ, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক স্তরের পাঠ্যক্রমের মেয়াদ ৪ বছর থেকে কমিয়ে আবার ৩ বছর করা নিয়ে জট কাটেনি আজও। এর মধ্যেই ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে উপাচার্য দীনেশ সিংহের ইস্তফা নিয়ে।

বিদেশের শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্য আনতে দীনেশ সিংহই চার বছরের পাঠ্যক্রম চালু করেছিলেন গত বছর থেকে। এতে দেশের অন্যান্য কলেজের সঙ্গে সামঞ্জস্য নষ্ট হচ্ছে এই যুক্তিতে ইউজিসি-র নির্দেশ ছিল, সোমবারের মধ্যেই ৪ বছরের পাঠ্যক্রম বাতিল করতে হবে। কিন্তু সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ার পরেও উপাচার্য পিছু হঠেননি। যদিও আজ দুপুরে তিনি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “চলতি পরিস্থিতির কারণে আমি ইস্তফা দিচ্ছি।” কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, রাত পর্যন্ত ইস্তফার বিষয়ে তাঁদের কাছে কোনও তথ্য নেই। অন্ধকারে মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকও। মন্ত্রকের এক কর্তার বক্তব্য, “ইস্তফা নিয়ে এখনও ধন্দ্বে রয়েছি আমরা। কারণ, মন্ত্রকের কাছে কোনও পদত্যাগপত্র এসে পোঁছয়নি।”

কেন্দ্রীয় মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি এ বিষয়ে মুখ খোলেননি আজও। তবে বিজেপি শিবিরের অনেকে মনে করছেন, উপাচার্য ইস্তফা দিলেই ল্যাটা চুকে যায়। পাঠ্যক্রমের মেয়াদ আবার ৩ বছরে নেমে আসে। ৪ বছরের পাঠ্যক্রম চালু করার সময়েই বিজেপি এর প্রতিবাদে সরব হয়েছিল। কেন্দ্রে সরকারের আসার পরপরই পুরনো ব্যবস্থা ফেরাতে তৎপর হন বিজেপি নেতৃত্ব। মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের নির্দেশে চার বছরের পাঠ্যক্রম বাতিল করার নির্দেশ দেয় ইউজিসি। আজ রাতে ইউজিসি এক বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করেছে, দিল্লি বিশ্ববদ্যালয়ের অধীন ৬৪টি কলেজের মধ্যেই ৫৭টিই তিন বছরের পাঠ্যক্রমে ফিরতে রাজি। ইউজিসি তাদের ভর্তির প্রক্রিয়া চালু করতে বলেছে।

যদিও দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সূত্রের খবর, তাঁরা এখনও চার বছরের পাঠ্যক্রম খারিজের সিদ্ধান্ত নেননি। এই পরিস্থিতিতে দুই শিবিরে ভাগ হয়ে পড়েছেন শিক্ষক-পড়ুয়ারা। গত কাল ৩ বছরের পাঠ্যক্রমের দাবিতে শিক্ষক ও পড়ুয়ারা পথে নেমেছিলেন। আজ শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীদের অন্য এক অংশ পথে নামেন ৪ বছরের পাঠ্যক্রম চালু রাখার দাবিতে। একই দাবিতে এ দিন অনশনও শুরু করেন অ্যাকাডেমিক্স ফর অ্যাকশন অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট (এএডি) নামে একটি শিক্ষক সংগঠনের সদস্যরা। ওই সংগঠনের মতে, ইউজিসি-র নির্দেশ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসনে হস্তক্ষেপ। পড়ুয়াদের ভবিষ্যতের কথা ভেবেই সময়োপযোগী ওই পাঠ্যক্রম শুরু করা হয়ছিল। সংগঠনের অভিযোগ, স্রেফ রাজনৈতিক চাপে পড়ে পড়ুয়াদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে ইউজিসি। একই অভিযোগ করেছেন কংগ্রেস নেতা মণীশ তিওয়ারি। তাঁর অভিযোগ, “এতে ছাত্র-ছাত্রীদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। এক বছরে দু’বার পাঠ্যক্রমের মেয়াদ বদলালে বিশ্বের কাছে ভারতের শিক্ষাব্যবস্থা হাসির খোরাক হয়ে পড়বে।”

দিল্লি ইউনিভার্সিটি টিচার অ্যাসোসিয়েশন বা ডুটা-র বর্তমান সভাপতি নন্দিতা নারায়ণ পুরনো পাঠ্যক্রমের পক্ষে হলেও ওই সংগঠনের প্রাক্তন সভাপতি আদিত্যনারায়ণ মিশ্র চার বছরের পাঠ্যক্রমের হয়ে সওয়াল করছেন। ইউজিসি-র নির্দেশ বাতিলের দাবি জানিয়ে আজ সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন আদিত্য। যদিও শীর্ষ আদালত আবেদন খারিজ করে জানিয়েছে, প্রয়োজনে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হতে পারেন আবেদনকারীরা।

এই অচলাবস্থায় কার্যত দিশাহীন নতুন ছাত্র-ছাত্রীরা। কবে থেকে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হবে তা নিয়ে কার্যত কোনও দিশাই দেখাতে পারছে না কলেজগুলি। আগের ঘোষণা মতো শ্রী রাম কলেজ অফ কর্মাস কলেজ আজ ছাত্র-ভর্তির প্রথম তালিকা প্রকাশ করলেও পরে তা প্রত্যাহার করে নেয়। তার পরেই ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা খুঁজতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকা কলেজগুলির অধ্যক্ষদের বৈঠক ডাকা হয়। সেখানে ৩৬টি কলেজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। দিল্লি ইউনিভার্সিটি প্রিন্সিপাল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এস কে গর্গ বলেন, “স্পষ্ট দিশানির্দেশের অভাব থাকায় সব কলেজ আপাতত পড়ুয়া ভর্তি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জট কাটলে তা শুরু হবে।”

নতুনদের মতো সমস্যায় গত বছর ভর্তি হওয়া ছাত্র-ছাত্রীরাও। পুরনো পাঠ্যক্রমের ভবিষ্যৎ কী হবে, তা নিয়ে চরম অনিশ্চয়তায় ভুগছেন তারাও। যদিও আজ ফের মন্ত্রকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, চার বছরের ছাত্র-ছাত্রীদের তিন বছরের পাঠ্যক্রমে নিয়ে আসতে একটি ব্রিজ কোর্সের ব্যবস্থা করা হবে। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে গত বছর যারা বি-টেক পাঠ্যক্রমে ভর্তি হয়েছেন তাদের আজ জানানো হয়েছে, এই পাঠ্যক্রমের মেয়াদ একই থাকবে।

তিন না চার এই দ্বন্দ্বে গত কালও কার্যত মুখ বন্ধ রেখেছিলেন মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী স্মৃতি ইরানি। সেই নীতি মেনে তিনি বলেন, “এ বিষয়ে কিছু বলার অধিকার নেই।” মন্ত্রী মুখ না খুললেও যে ভাবে জটিলতা বেড়েই চলেছে তাতে অস্বস্তিতে বিজেপি নেতৃত্ব। দলের পক্ষ থেকে ইউজিসির মাধ্যমে উপাচার্যের উপর চাপ সৃষ্টির কৌশল নেওয়া হয়েছে। বিজেপি মনে করছে, উপাচার্য ইস্তফা দিলেই চলতি জটিতার সমাধানসূত্র বেরিয়ে আসবে।

delhi university admission suspended vice chancellor resignation dinesh singha
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy