রামেশ্বর তেলি
রুটি জোগাড়ের জন্য কচু আর ঢেকি শাক বিক্রি করত ছেলেটা। তার হাতেই এখন দেশের খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের ভার! চা বাগানের তেলি পরিবারটি এখনও দরমার ঘরেই থাকে। সেই পরিবারের ছেলে রামেশ্বর দু’বারের বিধায়ক ও দু’দফায় সাংসদ। এখন দেশের মন্ত্রী। বিশ্বাসই হচ্ছে না মা ডুকলা তেলির।
ডিব্রুগড়ের টিপলিঙে বুধু ও ডুকলা তেলির ছেলে রামেশ্বরের বয়স ৪৯। আর পাঁচটা চা-শ্রমিক পরিবারের মতো তাঁদেরও কষ্টের সংসার। ছোট ভাই গুণেশ্বরের কথায়, ‘‘রামের বয়স তখন ১২, আমার ১০। জলখাবারের টাকা জোগাড় করতে আশপাশের জঙ্গল থেকে আমরা কচু, ঢেকি শাক সংগ্রহ করে বাজারে বেচতাম। রুটি কিনতাম সেই পয়সায়।’’ বাবার মৃত্যুর পর মা, ভাই, দুই বোনের সংসারের হাল ধরেন রাম। রুজির জন্য পানের দোকান দেন। ক্রমে দুই বোনের বিয়েও দেন। বিয়ে হয় ভাইয়েরও। কিন্তু নিজের আর বিয়ে করা হয়ে ওঠেনি। কলেজে নাম লেখানোর পাশাপাশি অসম চা-জনগোষ্ঠী ছাত্র সংস্থা ‘আটসা’য় যোগ দেন তিনি। অবশ্য পড়াশোনা বিশেষ এগোয়নি।
আটসা নেতা তেলির জনপ্রিয়তা ও নেতাসুলভ গুণ নজরে পড়ে বিজেপি নেতাদের। ২০০১ সালে দুলিয়াজান থেকে বিজেপি বিধায়ক রামেশ্বর তেলি। ২০০৬ সালেও বিধায়ক। ২০১১ সালে বিধায়ক পদে হারলেও ২০১৪ সালে লোকসভার সাংসদ। কংগ্রেসের পাঁচ বারের সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পবনসিংহ ঘাটোয়ারকে ১ লক্ষ ৮৫ হাজার ভোটে হারিয়ে তাক লাগান তিনি। এ বারের ভোটে পবন সিংহকে ৩,৬৪,৫৬৬ ভোটে হারিয়েছেন। অসমের সবচেয়ে বড় ‘ব্যবধান’। তাঁর মা এখনও সেই আগের দরমার ঘরেই থাকেন। রামেশ্বরও এলাকায় এলে সেখানেই থাকেন। দরমা ও বাঁশের তৈরি অফিসে বসেই কাজ চালান, সকলের সঙ্গে দেখা করেন। সাধারণ জীবনযাপনই তাঁর গ্রহণযোগ্যতা আরও বাড়িয়েছে।
গত কাল ছেলের শপথ গ্রহণ দেখে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন মা ডুকলা। আজ জানতে পারেন ছেলে মন্ত্রীও হয়েছেন। রামেশ্বরের এক কাকা এখনও ঠেলা চালান। অন্য জন গ্রাহকদের বাড়ি বাড়ি এলপিজি সিলিন্ডার পৌঁছে দেন। আর এক কাকা অটোচালক। পরিবারের ইচ্ছে, এ বার রামেশ্বরের একটা বিয়ে দিতেই হবে। মা মেয়ে দেখাও শুরু করেছেন। এখন রামের সুমতি হলেই হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy