Advertisement
E-Paper

জোর নিরাপত্তায়, ঐতিহ্য বিদায়, রেল নিয়ে কথা কমই

নব্বই বছরেরও বেশি সময় ধরে কেন্দ্রে সাধারণ বাজেট পেশের আগে পেশ হয়ে এসেছে রেল বাজেট। দীর্ঘদিন ধরেই অনেকে বলছিলেন, এটা বাহুল্য। এত দিনে ঐতিহ্য ভাঙার সাহস দেখাল সরকার। রেল বাজেটকে মিশিয়ে দেওয়া হল সাধারণ বাজেটের সঙ্গে।

অনমিত্র সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৪:০২

নব্বই বছরেরও বেশি সময় ধরে কেন্দ্রে সাধারণ বাজেট পেশের আগে পেশ হয়ে এসেছে রেল বাজেট। দীর্ঘদিন ধরেই অনেকে বলছিলেন, এটা বাহুল্য। এত দিনে ঐতিহ্য ভাঙার সাহস দেখাল সরকার। রেল বাজেটকে মিশিয়ে দেওয়া হল সাধারণ বাজেটের সঙ্গে।

তাই বলে আমজনতার কৌতূহলে ঘাটতি পড়েনি তিলমাত্র। অন্যান্য বারের মতো এ বারেও প্রশ্ন ছিল এক ঝাঁক। ট্রেনের ভাড়া কি বাড়ল? নতুন ট্রেন কী কী হল? বাংলা কী পেল? বাংলার প্রকল্পগুলোর কী হল? অন্য কোন কোন রাজ্য কী পেল?

কোনও প্রশ্নেরই জবাব দেননি জেটলি। বস্তুত, তাঁর বাজেটে রেল যেন ব্রাত্য, অপাংক্তেয়। ফলে বাজেট পেশের পরে বহু লোকের মুখে শোনা গিয়েছে এই খেদোক্তি— রেল বাজেট যে কী হল!

কেন্দ্রের অর্থ মন্ত্রকের কর্তাদের অবশ্য দাবি, এমনটাই হওয়ার কথা ছিল। বাজেট তো নিছক সরকারের আয়-ব্যয়ের খতিয়ান। টাকা কোন খাতে খরচ হবে সেটা তো ঠিক করবেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকের কর্তারা। যাঁরা বিষয়টি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল।

সেই পথে খানিকটা এগোতে পেরেছেন জেটলি। তবে পুরোটা পারেননি। শাসক দলের সূত্র বলছে, রেলের প্রকল্পের কথা যে সাতকাহন করে বললেন না অর্থমন্ত্রী, তার কারণটা মোটেই নীতিগত নয়। কারণটা হল, নির্বাচন কমিশন তাঁর হাত-পা বেঁধে দিয়েছে। সামনে যে পাঁচ রাজ্যের ভোট, তাদের জন্য আলাদা করে কোনও প্রকল্প ঘোষণা করা যাবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে কমিশন। তাই জেটলির মুখে কুলুপ। প্রকল্পের বিষয়ে ভোট মিটলে সংসদে বিশদ জানানো হবে বলে রেল সূত্রের খবর।

যে জায়গায় হাত দিতে বাঁধা ছিল না, সেই যাত্রী সুরক্ষার কথা এ দিন ফলাও করে বলেছেন জেটলি। যদিও রেল কর্তাদের মতে, সেটা আদৌ তাঁর কাজ হতে পারে না। রেলের জন্য মোট কত টাকা বরাদ্দ তা ঘোষণা করেই জেটলির ইতি টানা উচিত ছিল। কিন্তু রাজনীতিও তো আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে রয়েছে বাজেটকে। তাই চেনা ছকেই জেটলির আশ্বাস, আগামী পাঁচ বছরে যাত্রী সুরক্ষা ও নিরাপত্তা খাতে ১ লক্ষ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হবে।

গত দু’মাসে পরপর দুর্ঘটনার জেরে রেল নিয়ে ‘গেল গেল’ রব উঠে গিয়েছে সব মহলেই। রেলের সামগ্রিক চিত্র নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেন খোদ প্রধানমন্ত্রী। রেলকর্তারা জানিয়েছিলেন, টাকার অভাবে গত এক দশক ধরে সুরক্ষা সংক্রান্ত বুনিয়াদি কাজ প্রায় বন্ধ। অবিলম্বে সুরক্ষা (নতুন লাইন পাতা, আধুনিক সিগন্যাল বসানো, লাইন ও ব্রিজের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য উপযুক্ত কর্মী নিয়োগ) খাতে অর্থ বরাদ্দ না করলে দুর্ঘটনার সংখ্যা ভবিষ্যতে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়বে। মন্ত্রক-কর্তাদের এই যুক্তি খারিজ করেননি জেটলি। চলতি বছর থেকেই কুড়ি হাজার কোটি টাকা করে আগামী পাঁচ বছরে মোট ১ লক্ষ কোটি টাকা রেলের সুরক্ষার জন্য বরাদ্দ করেছেন তিনি।

রেলযাত্রীদের ই-টিকিট কাটাকে উৎসাহ দিতে সার্ভিস চার্জ মকুবের ঘোষণা করেছেন জেটলি। এত দিন আইআরসিটিসি-র মাধ্যমে অনলাইনে স্লিপার ও বাতানুকূল শ্রেণিতে টিকিট কাটলে টিকিট-পিছু যথাক্রমে যে কুড়ি ও চল্লিশ টাকা করে দিতে হত, তা আর দিতে হবে না যাত্রীদের। জেটলির আশা, এই সিদ্ধান্তে নগদের মাধ্যমে কাউন্টার থেকে টিকিট কাটার হার কমবে। বর্তমানে ফি-দিন ৬৮% দূরপাল্লার টিকিট কাটা হয় অনলাইনে। আগামী এক বছরে তা ৭৫ শতাংশে নিয়ে যেতে চান জেটলি। কিন্তু তাঁর এই সিদ্ধান্তে প্রতিদিন এক কোটি টাকা করে রাজস্ব হারাবে রেল। একই পরিমাণ ক্ষতি হবে আইআরসিটিসি-রও। এই ক্ষতি কী ভাবে পূরণ হবে, সে সম্পর্কে কিছুই জানাননি জেটলি।

পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা ভোটের কারণে ভাড়া বাড়ানোর মতো কঠিন অথচ সংস্কারমুখী সিদ্ধান্ত নেওয়ার ঝুঁকি নেননি জেটলি। রেল সূত্রের খবর, এ বছরও যাত্রিভাড়ায় প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকার ভর্তুকি দিতে হয়েছে রেলকে। জেটলির ইঙ্গিত, ভাড়ার ক্ষেত্রে আগামী দিনে সংস্কার হবে। তাঁর কথায়, ‘‘রেলের সামাজিক দায়বদ্ধতা ও খরচের বিষয়টি মাথায় রেখে রেলের ভাড়া ঠিক হবে।’’ তবে অর্থ মন্ত্রক জানিয়েছে, আগামী দিনে ভাড়া বৃদ্ধির রাজনৈতিক দায় নিজের ঘাড়ে রাখতে চাইছে না শাসক দল। পরিবর্তে বিদ্যুৎ বা তেলের দামের মতোই রেলের ভাড়া নিয়ে সিদ্ধান্ত রেল ট্যারিফ অথরিটির মতো স্বশাসিত সংস্থার হাতে তুলে দেওয়ার পক্ষপাতী সরকার।

পরিকাঠামোগত উন্নয়নের প্রশ্নে মূলত জোর দেওয়া হয়েছে নতুন লাইন পাতা ও ডাবলিং-এ। আগামী আর্থিক বছরে প্রায় ৩৫০০ কিলোমিটার নতুন রেললাইন পাতার সিদ্ধান্ত হয়েছে। জেটলির ঘোষণা, ২০২০-র মধ্যে সমস্ত প্রহরাবিহীন লেভেল ক্রসিং প্রহরাযুক্ত হবে। উন্নততর যাত্রী পরিষেবার লক্ষ্যে প্রতি কোচে থাকবেন ‘কোচ মিত্র’ বলে এক কর্মী। খাবারের মান থেকে পরিচ্ছন্নতা— যাত্রীরা সব অভিযোগ জানাতে পারবেন তাঁকে। আগামী এক বছরে ২৫টি স্টেশনকে আধুনিক মানে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিশেষ ভাবে অর্থ বরাদ্দ হয়েছে ১৭টি রেল প্রকল্পের জন্য। যার মধ্যে রয়েছে কাশ্মীর ও উত্তর-পূর্বের রেল যোগাযোগের মতো জাতীয় প্রকল্পগুলি।

আজ হাই স্পিড বা বুলেট ট্রেন নিয়ে একটিও শব্দও খরচ করেননি জেটলি। এই নীরবতাকে কটাক্ষ করে রাহুল গাঁধী বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী তো বলেছিলেন দেশে বুলেট ট্রেন দৌড়বে। সেই বুলেট ট্রেন এখন কোথায়?’’

আরও একটি তথ্য— আগামী আর্থিক বছরে রেলের মোট বাজেট ১.৩১ লক্ষ কোটি টাকা। যার মধ্যে ৫৫ হাজার কোটি টাকা দেবে অর্থ মন্ত্রক।

Railway Trains E-Ticket Budget 2017
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy