জনসভায় পদপিষ্ট হয়ে ৪১ জনের মৃত্যুর চার দিন পরে প্রথম প্রকাশ্যে এলেন তিনি, তবে ভিডিয়োমাধ্যমে। আর সেখানে ৪১ জনের মৃত্যুর দায় সরাসরি চাপালেন ডিএমকে প্রধান তথা মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিন এবং তাঁর সরকারের উপরে। নবগঠিত রাজনৈতিক দল তামিলাগা ভেটরি কাজ়াঘম (টিভিকে)-এর প্রধান বিজয় বলেছেন, “জানি মুখ্যমন্ত্রী আমার উপর ক্ষিপ্ত। তিনি কি আমার বিরুদ্ধে প্রতিহিংসার রাজনীতি করতে চাইছেন? সেটা করতে চাইলে সোজা আমার কাছে আসুন। নিরীহ নাগরিকদের উপর হাত দেবেন না।”
বিজয়ের এমন বার্তার পরেই পাল্টা আক্রমণ শানিয়েছে মুখ্যমন্ত্রী স্ট্যালিনের দল ডিএমকে। গোড়া থেকেই দুর্ঘটনার পিছনে বিজয়ের ভূমিকা এবং তাঁর দলের নেতাদের কার্যকলাপ নিয়ে আঙুল ওঠার পরে অভিনেতাকে গ্রেফতার করা হবে কি না, সে প্রশ্ন উঠেছিল। কিন্তু বিজয়কে বাড়তি সহানূভূতি পেতে দিতে নারাজ স্ট্যালিন জানিয়েছিলেন, ‘‘রাজনৈতিক ভাবনায় ভাবিত হয়ে আমি কোনও প্রশ্নের উত্তর দেব না।’’ একই সঙ্গে তিনি জানান, রাজ্য প্রশাসন কোনও পদক্ষেপ করলে, তা তদন্ত কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতেই করবে। আজ কানিমোঝি, এ রাজা-সহ ডিএমকে নেতৃত্ব প্রশ্ন তুলেছেন, চার দিন পরে বিজয়ের মন্তব্য নিয়ে। তাঁদের কটাক্ষ, ‘‘আপনার অনুরাগী হিসেবে আপনাকে দেখতে আসা লোকেদের এত বড় ক্ষতি হল, অথচ আপনি নিজে চার দিনপরে দেখা দিলেন, তা-ও ভিডিয়ো মাধ্যমে? এটা কি কোনও নেতার উপযুক্ত কাজ?’’
পাশাপাশি সক্রিয় হয়েছে প্রশাসনও। বিজয়ের দলের বেশ কয়েক জন শীর্ষনেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে টিভিকে-র কারুর পশ্চিম জেলার সম্পাদক মথিয়াঝগনকে। ধৃতের বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টা, অপরাধমূলক হত্যাকাণ্ড, সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা বিপন্ন করার মতো অভিযোগ এনে মামলা করা হয়েছে। এ ছাড়া টিভিকে-র সাধারণ সম্পাদক বুসি আনন্দ এবং যুগ্ম সম্পাদক নির্মল শেখরের বিরুদ্ধেও অভিযোগ দায়ের করেছে পুলিশ। বিজয়ের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে এফআইআরে উল্লেখ করা হয়েছে, জেলায় অনেকক্ষণ আগে পৌঁছে গেলেও প্রায় চার ঘণ্টা পরে অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছন অভিনেতা। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই অধৈর্য হয়ে ওঠা জনতার মধ্যে হুড়োহুড়ি পরে যায়, যার ফলে এই দুর্ঘটনা। বিজয়ের দলের নেতারা অনুষ্ঠানস্থলে বিদ্যুৎ সংযোগ ছিন্ন করার অভিযোগ আনলেও ছবি দেখিয়ে সেই দাবি ভুয়ো বলে ইতিমধ্যেই উড়িয়ে দিয়েছে পুলিশ।
মঙ্গলবার কারুরের দুর্ঘটনায় আহতদের দেখতে হাসপাতালে যান সিপিএম নেতৃত্ব। দলের যুব শাখার সর্বভারতীয় সভাপতি এ এ রহিম ছাড়াও দলে ছিলেন কারুরে সিপিএমের জেলা সম্পাদক জ্যোতি বসু-সহ রাজ্য নেতৃত্ব। তাঁরা আহতদের সঙ্গে কথা বলার পাশাপাশি সহযোগিতার আশ্বাসও দেন।
বিজয়ের পাশে দাঁড়ানো নিয়ে দলের অন্দরে দ্বিধা থাকলেও কারুরের ঘটনায় রাজনৈতিক ফসল তুলতে ইতিমধ্যেই সেখানে অভিনেত্রী-সাংসদ হেমামালিনীর নেতৃত্বে ৮ সাংসদের তথ্য অনুসন্ধানকারী দল পাঠিয়েছে বিজেপি। ঘটনাস্থল ঘুরে হেমার দাবি, গোটা ঘটনায় কিছু একটা গোলমালের ব্যাপার আছে। তবে কী গোলমাল, তা তিনি জানেন না!
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)