বিয়ের দিনে রোহিণী রামনাথন এবং কৌশিক আইয়ার। ছবি: সংগৃহীত।
মৃত্যুর চার বছর পার। তবুও কৌশিককে নিজের মধ্যে বাঁচিয়ে রেখেছেন রোহিণী রামনাথন। দাম্পত্যের প্রেমে ভরা সময় বছর চারেক আগে হঠাৎই থমকে গিয়েছিল। ২০১৭-য় সিঙ্গাপুরে আচমকাই মারা যান বিজ্ঞাপন জগতের প্রতিভাবান কর্মী কৌশিক আইয়ার। স্বামীর অকালমৃত্যুতে ভেঙে পড়েছেন, থেমে গিয়েছেন, রাগে ফেটে পড়েছেন। তবু ফের ঘুরেও দাঁড়িয়েছেন রোহিণী। মুম্বইয়ের রেডিয়ো জকি রোহিণীর সেই ঘুরে দাঁড়ানোর কাহিনিই মন ছুঁয়ে যাচ্ছে বহু নেটাগরিকদের। রোহিণীকে কুর্নিশের পাশাপাশি তাঁকে শক্তিও জোগাচ্ছেন তাঁরা।
‘হিউম্যানস অব মুম্বই’ নামে একটি পোর্টালের কাছে একান্ত সাক্ষাৎকারে নিজের কাহিনি শুনিয়েছেন রোহিণী। তিনি বলেন, ‘‘দু’জনের পরিচিত এক বন্ধুর মাধ্যমে কৌশিকের সঙ্গে প্রথম আলাপ। পেশায় রেডিয়ো জকি হওয়ার সুবাদে গল্প বলতে ভালবাসি। আর কৌশিক ছিল লেখক, সৃজনশীল মানুষ। ফলে শুরু থেকেই সম্পর্কটা জমে গিয়েছিল।’’
প্রথম দেখার পর দু’জনে ঘন ঘন একসঙ্গে সময় কাটাতে শুরু করেন। এক সময় ডেটিংও চলতে থাকে। তিন বছর পর হঠাৎই রোহিণীর কাছে বিয়ের কথা পাড়েন কৌশিক। রোহিণী বলেন, "পরস্পরের পরিপূরক ছিলাম আমরা। তিন বছর পর কৌশিক বিয়ের কথাটা পাড়তেই সঙ্গে সঙ্গে বলেছিলাম— ‘হ্যাঁ’!’’
এর পরের চার বছরে একসঙ্গে বসবাস, বেড়ানো থেকে আইফেল টাওয়ারের তলার দাঁড়িয়ে চুম্বন— প্রেমেই বেঁচেছেন কৌশিক-রোহিণী। তবে হঠাৎই ছন্দপতন!
প্রথম প্রথম কৌশিকের মৃত্যুকে মেনে নিতে পারেননি। রোহিণী বলেন, ‘‘একসঙ্গে অনেকগুলো আবেগ কাজ করত। কৌশিকের মৃত্যুতে হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম। প্রচণ্ড রাগ হত। এক সময় সমস্ত আনুভূতিই যেন ভোঁতা হয়ে গিয়েছিল। সকলের কাছ থেকে দূরে থাকতে চাইতাম।’’
কৌশিকের মৃত্যুর পর টানা ১৪ দিন এ ভাবেই কেটেছিল রোহিণীর। ১৪ দিন পর কাজের মধ্যে নিজেকে ডুবিয়ে রাখতে শুরু করেন। সে সময় কটূক্তিও কম শুনতে হয়নি। রোহিণীর কথায়, ‘‘বাইরে কাঠিন্য দেখালেও প্রতি রাতে কান্নায় ভেঙে পড়তাম। ‘বিবাহিতা’ থেকে ‘সিঙ্গল’-এর তকমায় অভ্যস্ত হতে খুব কষ্ট হত।’’
মাস দশেক এ ভাবেই চলছিল। এর পর মানসিক সাহায্যের জন্য পেশাদারদের কাছে যান রোহিণী। তবে শেষমেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছেন তিনি। রোহিণীর কথায়, ‘‘নিজেকে ফিরে পেতে মাসের পর মাস পেরিয়ে গিয়েছে।’’ তিনি বলেন, ‘‘কৌশিকের সঙ্গ সাত বছরের বদলে জীবনভর হতে পারত। তবে জীবনভরের স্মৃতিই দিয়ে গিয়েছে কৌশিক। ওর সঙ্গে ফের দেখা হওয়া পর্যন্ত তা-ই বাঁচিয়ে রাখব!’’
ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামে রোহিণীর কথা শুনে আবেগে ভেসেছেন অনেকেই। এক নেটাগরিক লিখেছেন, ‘প্রিয়জনকে হারানোর শূন্যতা কখনও পূরণ হওয়ার নয়। আমার মনে হয়, কৌশিককে আপনি নিজের মধ্যে বাঁচিয়ে রেখেছেন।’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy