আগামী ২০২২-এর মধ্যে দেশের কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করার কথা ঘোষণা করেছেন নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু তার জন্য কৃষি ক্ষেত্রে কতখানি সংস্কার হয়েছে, তার খোঁজ শুরু করেছিল নীতি আয়োগ। দেখা গেল, দেশের তিন ভাগের মধ্যে দু’ভাগ রাজ্য সংস্কারের মাপকাঠিতে অর্ধেক পথই পার হতে পারেনি। যার মধ্যে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গও।
মোদী সরকারের যুক্তি, কৃষি ক্ষেত্রে বহু দিন ধরেই বৃদ্ধির হার যথেষ্ট কম। ফলে কৃষি থেকে আয়ও কমে গিয়েছে। বাড়ছে কৃষকদের আত্মহত্যার ঘটনা। পরিস্থিতি শোধরাতে কৃষিতেও শিল্পের মতো বেসরকারি লগ্নি নিয়ে আসতে হবে। তার জন্য এমন নীতি তৈরি ও সংস্কারের কাজ করতে হবে, যাতে কৃষকরাও আধুনিকীকরণে উৎসাহিত হন। নীতি আয়োগের উপাধ্যক্ষ অরবিন্দ পানাগড়িয়ার মন্তব্য, ‘‘কৃষির বিষয়টি রাজ্যের অধীনে থাকায় এত দিন সেই ভাবে সংস্কারের কাজ হয়নি। কৃষি ক্ষেত্রে বৃদ্ধির হার বাড়িয়ে দেশের আর্থিক বৃদ্ধির হার বাড়ানো সম্ভব, তা-ও ভাবা হয়নি।’’ পানাগড়িয়া বলেন, ‘‘যে তিনটি সংস্কার জরুরি বলে আমরা চিহ্নিত করেছি, তা হল কৃষি বিপণনের সংস্কার, জমি লিজের সংস্কার, ব্যক্তিগত জমিতে গাছ লাগিয়ে আয়ের পথ তৈরির সুযোগ করে দেওয়া।’’
সেই সংস্কারের কাজে কোন রাজ্য কোথায় দাঁড়িয়ে, আজ তার তালিকা প্রকাশ করেছে নীতি আয়োগ। আয়োগের তৈরি ‘কৃষি পণ্যের বিপণন ও কৃষক-বন্ধু সংস্কার সূচক’ অনুযায়ী সব থেকে কৃষক-দরদি রাজ্য হিসেবে প্রথম স্থানে জায়গা করে নিয়েছে মহারাষ্ট্র। গুজরাত দ্বিতীয় স্থানে। পশ্চিমবঙ্গ রয়েছে ১৯-এ। রিপোর্ট বলছে, পশ্চিমবঙ্গের পাশাপাশি উত্তরপ্রদেশ, পঞ্জাব, অসম, তামিলনাড়ুর মতো রাজ্যে কৃষিতে সংস্কারের অর্ধেক কাজই হয়নি।
পানাগড়িয়ার যুক্তি, ২০০৩ সালে প্রথম কেন্দ্রীয় সরকার কৃষি পণ্যের বাজারের সংস্কারের জন্য কৃষি পণ্য বিপণন আইনের সংশোধনী মডেল আইন তৈরি করে। যাতে ওই মডেল অনুসরণ করে রাজ্যগুলি নিজেদের আইন সংশোধন করতে পারে। কিন্তু সেই কাজ এখনও শেষ হয়নি। মোদী সরকার সম্প্রতি অনলাইনে কৃষি পণ্য বেচাকেনার জন্য ই-নাম (অনলাইন জাতীয় কৃষি বাজার) তৈরি করেছে। কিন্তু কৃষি পণ্য বিপণন আইনে সংশোধন না করায় বহু রাজ্য সেখানে যোগ দিতে পারছে না।
এর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ-সহ ছয়টি রাজ্যকে নিয়ে বিশেষ ভাবে চিন্তিত নীতি আয়োগের কর্তারা। কারণ পশ্চিমবঙ্গে কৃষি পণ্য বিপণন আইন থাকলেও তাতে কোনও সংশোধন হয়নি। নীতি আয়োগের সদস্য রমেশ চন্দ বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কোথায় সমস্যা রয়েছে, তা জানতে আমি নিজে কলকাতায় গিয়ে রাজ্য সরকারের সঙ্গে বৈঠক করব। কিন্তু যদি কৃষি উৎপাদন বাড়াতে হয়, কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করতে হয়, তা হলে সংস্কার করতেই হবে।’’ নীতি আয়োগের সদস্যের মতে, কৃষকরাও যাতে ব্যবসা-বাণিজ্যের আধুনিক ব্যবস্থার ফায়দা তুলতে পারে, তার ব্যবস্থা করে দিতে হবে।
কৃষি ক্ষেত্রে লগ্নি টানতে দু’বছর আগে বিধানসভায় কৃষি পণ্য বিপণন সংশোধনী বিল পাশ করিয়েছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। যুক্তি দেওয়া হয়েছিল, ১৯৭২ সালে চালু হওয়া কৃষিপণ্য বিপণন নিয়ন্ত্রণ আইনের জেরে এখন রাজ্যে কৃষিপণ্যের নির্দিষ্ট বাজারগুলি সরকারের নিয়ন্ত্রণে। চাষিরা তাঁদের পণ্য কৃষি-বাজারে নিয়ে এসে বিক্রি করেন। কৃষি বিপণন দফতরের নিয়ন্ত্রণেই সেই কাজকর্ম চলে। এই সব এলাকা থেকে কোনও সংস্থা বা ব্যক্তি নিজের ইচ্ছামতো কৃষিপণ্যের ব্যবসা করতে পারেন না। আইনে সংশোধন করা হলে আন্তঃরাজ্য কৃষিপণ্যের অবাধ বাণিজ্য চালু হবে। কৃষিক্ষেত্রে বেসরকারি বিনিয়োগ আসবে। এই সংস্কারে সামিল হলে বিশেষ অনুদানও মিলবে। চাষিরাও ফল, সব্জি চাষের যথাযত দাম পাবেন।
বিরোধীদের প্রবল আপত্তি সত্ত্বেও সেই বিল পাশ করালেও, তা কার্যকর হয়নি। নবান্ন সূত্রের বক্তব্য, ইচ্ছেমতো কৃষিপণ্যের বেচাকেনার জন্য ‘সিঙ্গল পয়েন্ট লাইসেন্স’ দেওয়া হবে। অনলাইনে কেনাবেচার ক্ষেত্রেও সমস্যা ছিল। সেগুলি নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিধানসভার পরবর্তী অধিবেশনে নতুন বিল আনা হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy