অন্তত দু’বার পাকিস্তান ভ্রমণ। গিয়েছিলেন কাশ্মীরেও। পাক গুপ্তচরদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার অভিযোগে ধৃত হরিয়ানার সেই ইউটিউবার জ্যোতি মলহোত্রের পুরনো কিছু ভিডিয়ো আবার প্রচারের আলোয় চলে এল।
জ্যোতির একটি ইউটিউব চ্যানেল রয়েছে। নাম ‘ট্রাভেল উইথ জো’। সেখানে মূলত ভ্রমণের ভিডিয়োই পোস্ট করতেন জ্যোতি। তাঁর অনুগামীর সংখ্যা প্রায় ১ লক্ষ ৩২ হাজার। জ্যোতির ইনস্টাগ্রাম এবং ইউটিউব চ্যানেলের ভিডিয়ো ঘেঁটে দেখা যাচ্ছে, তিনি মাস দুয়েক আগে, অর্থাৎ পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলায় ২৬ জনের মৃত্যুর ঘটনার আগে পাকিস্তান গিয়েছিলেন। অটারী-ওয়াঘা সীমান্ত পেরিয়ে ও পারে যাওয়া, লাহৌরের আনারকলি বাজার, পাক পঞ্জাবের কটাস রাজ মন্দির ঘুরে দেখার ভিডিয়োও রয়েছে। পাকিস্তানের খাবার এবং ভারত-পাকিস্তানের সংস্কৃতির তুলনা করেও ভিডিয়ো বানিয়েছিলেন ইউটিউবার।
গত বছর কাশ্মীরেও গিয়েছিলেন জ্যোতি। সেখানে ডাল হ্রদে শিকায়ায় করে ঘোরার ভিডিয়োও রয়েছে। ট্রেনে করে শ্রীনগর থেকে বনিহাল যাওয়ার একটি ভিডিয়োও পোস্ট করেছিলেন ইউটিউবার। গত এপ্রিল মাসে পহেলগাঁও কাণ্ডের পর জ্যোতি একটি ভিডিয়ো পোস্ট করেছিলেন। তার বর্ণনায় লেখা, ‘‘কাশ্মীর পহেলগাঁও নিয়ে আমার মতামত: আমাদের কি আবার কাশ্মীর যাওয়া উচিত?’’
তদন্তকারীদের সূত্রে খবর, জ্যোতি প্রথম বার পাকিস্তান যান ২০২৩ সালে। ওই সময়েই নয়াদিল্লিতে পাকিস্তান হাই কমিশনের আধিকারিক এহসান-উর-রহিম ওরফে দানিশের সঙ্গে তাঁর পরিচয়। গুপ্তচরবৃত্তি সংক্রান্ত অভিযোগে চলতি সপ্তাহেই দানিশকে ভারতে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করা হয়েছে। অভিযোগ, দানিশের মাধ্যমেই পাক গুপ্তচর সংস্থার একাধিক আধিকারিকের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছিল জ্যোতির। দেশে ফিরে আসার পর হোয়াট্সঅ্যাপ, টেলিগ্রাম এবং স্ন্যাপচ্যাট ব্যবহার পাকিস্তানি গুপ্তচরদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন তিনি। পাকিস্তানি চরেদের পরিচয় গোপন রাখতে মোবাইলে অন্য নামে সেই নম্বরগুলি সেভ করতেন জ্যোতি। তার মধ্যে ‘জাট রানধাওয়া’ নামে একটি নম্বর সেভ করা ছিল। তদন্তকারীদের সন্দেহ, ওই নম্বরটি আসলে পাকিস্তানি চর শাকির ওরফে রানা শাহবাজ়ের। সংবাদমাধ্যম ‘ইন্ডিয়া টুডে’র প্রতিবেদন অনুসারে, এক পাকিস্তানি চরের সঙ্গে তাঁর ‘ঘনিষ্ঠতা’ তৈরি হয়েছিল বলেও তদন্তকারী দল সূত্রে খবর।
শুধু দানিশ নন, তাঁর স্ত্রীর সঙ্গেও জ্যোতির ভাল সম্পর্ক ছিল বলে অনুমান তদন্তকারীদের। এই অনুমানের কারণ জ্যোতিরই একটি ভিডিয়ো। গত বছর ৩০ মার্চ পোস্ট করা ওই ভিডিয়োয় দেখা যাচ্ছে, পাকিস্তান হাই কমিশনে গিয়েছিলেন জ্যোতি। সেখানে যে ব্যক্তির সঙ্গে তাঁকে কুশল বিনিময় করতে দেখা গিয়েছে, তিনি দানিশ বলেই মনে করছেন তদন্তকারীরা। ওই ভিডিয়োয় জ্যোতিকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘আমি মুগ্ধ। কিছু বলার ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না।’’ জ্যোতির সঙ্গে নিজের স্ত্রীরও পরিচয় করাতে দেখা গিয়েছে দানিশকে। সেই সময় জ্যোতিও দানিশের স্ত্রীর তাঁর হরিয়ানার হিসারের বাড়িতে যাওয়ার জন্য নিমন্ত্রণ করেন। পাক হাই কমিশনের আরও কয়েক জন আধিকারিকের সঙ্গে কথা বলতে দেখা গিয়েছিল জ্যোতিকে। তাঁদের কাছে ভিসার ব্যবস্থা করে দেওয়ার আর্জি জানিয়েছিলেন ইউটিউবার।
পাক গুপ্তচরদের সঙ্গে যোগাযোগের কারণে শুধু জ্যোতি নন, আরও পাঁচ জনকে গ্রেফতার করেছে হরিয়ানা পুলিশ। তদন্তকারীদের অনুমান, গুপ্তচরদের কাছে তথ্য পাচার করার একটি চক্র তৈরি হয়েছে এ দেশে। এই চক্র মূলত পঞ্জাব এবং হরিয়ানায় সক্রিয়। জ্যোতিও সেই চক্রেরই সক্রিয় সদস্য বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা।