Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪
কেরল

ভি এস ৯২, স্থানীয় ভোটে তাঁরই শরণে ফের সিপিএম

বহু বার তাঁর রাজনৈতিক জীবনের শোকগাথা লেখা হয়ে গিয়েছে! আর অজস্র বারই তিনি ফিরে এসেছেন সে সব ভুল প্রমাণ করে। দলের মধ্যে কোণঠাসা হয়ে পড়েও এ বার কেরলে পুরসভা ও পঞ্চায়েত ভোটে প্রচারের প্রধান মুখ হলেন তিনিই!

সন্দীপন চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০১৫ ০১:০১
Share: Save:

বহু বার তাঁর রাজনৈতিক জীবনের শোকগাথা লেখা হয়ে গিয়েছে! আর অজস্র বারই তিনি ফিরে এসেছেন সে সব ভুল প্রমাণ করে। দলের মধ্যে কোণঠাসা হয়ে পড়েও এ বার কেরলে পুরসভা ও পঞ্চায়েত ভোটে প্রচারের প্রধান মুখ হলেন তিনিই! বলা ভাল, নবতিপর ভি এস অচ্যুতানন্দনকে কেরলে বিধানসভা ভোটের আগে কার্যত সেমিফাইনালের যুদ্ধে ব্রাত্য করে রাখতে পারল না সিপিএম!

অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টির জাতীয় পরিষদ থেকে ৫১ বছর আগে ওয়াকআউট করে যে ৩২ জন সদস্য পৃথক দল হিসাবে সিপিএম তৈরির পথ রচনা করেছিলেন, তাঁদের মধ্যে পরিচিত মুখ হিসাবে ভি এস-ই এখনও জীবিত। কেরলের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এবং অধুনা রাজ্যের বিরোধী দলনেতা ভি এস মঙ্গলবারই পা দিলেন ৯২-এ। কমিউনিস্ট রীতি মেনে সাড়ম্বর জন্মদিন তাঁর পালিত হয়নি অবশ্য। তবে বিরোধী দলনেতার সরকারি বাসভবনে শুভেচ্ছা-সহ দেখা করতে গিয়েছিলেন তাঁর শুভানুধ্যায়ীরা। আর কয়েক মাস পরেই পশ্চিমবঙ্গের মতো কেরলেও বিধানসভা নির্বাচন। সাড়ে সাত দশকের রাজনৈতিক জীবন পেরিয়ে আসা ভি এস কি সেই নির্বাচনেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান? সরাসরি এর উত্তর দিতে চাননি বিরোধী দলনেতা। তবে জন্মদিনে বার্তা দিয়েছেন, ‘‘যত দিন পারব, মানুষ ও দলের জন্য কাজ করে যাব!’’

বিরানব্বইয়ের প্রবীণকে বিধানসভা ভোটে ফের টিকিট দেওয়া হবে কি না, তা অবশ্যই ভবিষ্যতের প্রশ্ন। তবে আপাতত তাঁকে বাদ দিয়ে নির্বাচনী যুদ্ধে নামার ঝুঁকি নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না কেরল সিপিএমের পক্ষে! আগামী মাসেই রাজ্যে পুরসভা ও পঞ্চায়েত-সহ স্থানীয় প্রশাসনের ভোট আসন্ন। দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী সেই নির্বাচনে প্রচারের জন্য মোট ১৪টি জেলার মধ্যে ১১টি জেলাতেই পাঠাতে চলেছে বিরোধী দলনেতাকে! রাজ্য সিপিএমের তৈরি তালিকা অনুযায়ী, ওয়েনা়ড়, মলপ্পুরম-সহ রাজ্যের উত্তর প্রান্তের তিনটি জেলায় শুধু যেতে হচ্ছে না ভি এস-কে। আর দলের অন্দরে যাঁর শিবিরের সঙ্গে তাঁর মূল বিরোধ, প্রাক্তন সেই রাজ্য সম্পাদক পিনারাই বিজয়ন প্রচারে যাবেন ৯টি জেলায়। ইতিমধ্যেই বাম জোট এলডিএফের কনভেনশনে গিয়ে ভি এস পরামর্শ দিতে শুরু করেছেন, আসন্ন নির্বাচনকে স্থানীয় ও জাতীয় প্রশ্নের মিশ্র পরীক্ষা হিসাবেই নিতে হবে। পুরসভা ও পঞ্চায়েত স্তরে এলডিএফ কতটা গুরুত্ব দিয়েছে, শাসনের বিকেন্দ্রীকরণ কী ভাবে করেছে, সে সব তুলে ধরতে হবে মানুষের কাছে। আবার একই সঙ্গে তাঁদের বোঝাতে হবে, কেন্দ্রে বিজেপি সরকারের জমানায় অসহিষ্ণুতার বাতাবরণ কী ভাবে গণতন্ত্র এবং এমনকী, মানুষের জীবনের নিরাপত্তাকেও বিপন্ন করে তুলছে।

কয়েক মাস আগেই দলের রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে বিবাদে কেরল সিপিএমের রাজ্য সম্মেলন থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন ভি এস। সরাসরি রাজ্য কমিটিতেও জায়গা দেওয়া হয়নি তাঁকে। দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী তাঁর বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব পাশ করেছিল। যার বিরুদ্ধে আবার দলের পলিটব্যুরোর কাছে অভিযোগ জানিয়েছিলেন প্রবীণ নেতা। প্রকাশ কারাট তখন সাধারণ সম্পাদক। সর্বভারতীয় সিপিএমে পালাবদলের পরে সীতারাম ইয়েচুরি অবশ্য চেষ্টা চালাচ্ছেন ভি এস-বিরোধী জিগির কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনতে! তবু দলের রাজ্য নেতৃত্ব একতরফা সিদ্ধান্ত নিতে থাকায় ক্ষুব্ধ সাধারণ সম্পাদক ইয়েচুরি কিছু দিন আগে কেরলে রাজ্য কমিটির বৈঠকে উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও হাজির হননি। তাঁর কড়া মনোভাবের আঁচ পেয়েই কোডিয়ারি বালকৃষ্ণনেরা এ বার স্থানীয় নির্বাচনে ভি এস-কে গুরুত্ব দিয়েছেন বলে সিপিএম সূত্রের ব্যাখ্যা।

ভি এসের ৯২-এ পদাপর্ণের দিনে রাজ্য সিপিএমে তাঁর সতীর্থ এবং দলের পলিটব্যুরোর সদস্য এম এ বেবির মূল্যায়ন, ‘‘নারকেল ছোবড়া এবং অন্য কৃষিকর্মের শ্রমিকদের নিয়ে ওঁর আন্দোলন শুরু হয়েছিল খুব অল্প বয়সে। তার পরে পুন্নাপ্রা-ভায়ালার আন্দোলনে ওঁর ভূমিকা তো বিরাট। এত বছর পেরিয়ে এসেও আমাদের রাজ্যের সমাজ-রাজনীতিতে ভি এস অত্যন্ত সক্রিয়।’’

ভোটের বাজারে তাঁকে ব্রাত্য রাখলে চলে?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE