Advertisement
E-Paper

কারও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নম্বর ১১১১১১১১১১১! কেউ লিখেছেন ১২৩৪৫৬! ক্যাগ রিপোর্টে মিলল কেন্দ্রীয় প্রকল্পের ফাঁকফোকর

২০১৫ সাল থেকে ২০২২ সালের মধ্যে এই প্রকল্পের মোট তিনটি পর্যায় রয়েছে। তার মধ্যে দ্বিতীয় এবং তৃতীয় পর্যায়েই এই ফাঁকফোকরগুলি নজরে এসেছে। সম্প্রতি ক্যাগের ওই রিপোর্টটি বিস্তারিত ভাবে তুলে ধরা হয়েছে লোকসভায়।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৬:০১
প্রধানমন্ত্রী কৌশল বিকাশ যোজনার বাস্তবায়নে বেশ কিছু ফাঁকফোকর ধরা পড়ল ক্যাগের রিপোর্টে।

প্রধানমন্ত্রী কৌশল বিকাশ যোজনার বাস্তবায়নে বেশ কিছু ফাঁকফোকর ধরা পড়ল ক্যাগের রিপোর্টে। — ফাইল চিত্র।

কেন্দ্রীয় সরকারের প্রধানমন্ত্রী কৌশল বিকাশ যোজনা (পিএমকেভিওয়াই) বাস্তবায়নে ফের ধরা পড়ল বেশ কিছু ফাঁকফোকর। কোথাও সুবিধাপ্রাপকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নম্বর হিসাবে উল্লেখ রয়েছে ‘১১১১১১১১১১১’। কোথাও আবার একাধিক সুবিধাপ্রাপক একই ছবি ব্যবহার করেছেন। সম্প্রতি কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল (ক্যাগ)-এর রিপোর্টে এমনই তথ্য উঠে এসেছে।

দেশের তরুণ প্রজন্মের জন্য ২০১৫ সালে পিএমকেভিওয়াই শুরু করেছিল কেন্দ্র। এই প্রকল্পের আওতায় তরুণদের বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তাঁদের কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে সুবিধা করে দেওয়ার জন্যই এই প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। গত সপ্তাহেই ক্যাগের ওই রিপোর্টটি বিস্তারিত ভাবে তুলে ধরা হয় লোকসভায়। ক্যাগের অনুসন্ধানে দেখা গিয়েছে, স্কিল ইন্ডিয়া পোর্টালে নথিভুক্ত ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের তথ্যে বেশ কিছু ফাঁক রয়ে গিয়েছে।

২০১৫ সাল থেকে ২০২২ সালের মধ্যে এই প্রকল্পের মোট তিনটি পর্যায় রয়েছে। তার মধ্যে দ্বিতীয় এবং তৃতীয় পর্যায়েই এই ফাঁকফোকরগুলি নজরে এসেছে। রিপোর্ট অনুসারে, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় পর্যায়ে এই কেন্দ্রীয় প্রকল্পে মোট ৯৫ লক্ষ ৯০ হাজার ৮০১ জন অংশগ্রহণ করেছিলেন। তাঁদের মধ্যে ৯০ লক্ষ ৬৬ হাজার ২৬৪ জনের ক্ষেত্রে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের তথ্যে— শূন্য, ‘নাল’ (কার্যকর নয়) বা কোনও ক্ষেত্রে ‘এন/এ’ (নট অ্যাপ্লিকেবল বা প্রযোজ্য নয়) উল্লেখ রয়েছে। অর্থাৎ, মোট অংশগ্রহণকারীর ৯৪.৫৩ শতাংশেই এই ধরনের সমস্যা রয়েছে।

বাকি ৫ লক্ষ ২৪ হাজার ৫৩৭ জনের মধ্যে আবার অনেক ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, একাধিক জন একই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নম্বর উল্লেখ করেছেন। এমন ১২,১২২টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নম্বর চিহ্নিত করা হয়েছে। ৫২,৩৮১ জন অংশগ্রহণকারীর ক্ষেত্রে ওই অ্যাকাউন্ট নম্বরগুলি ব্যবহৃত হয়েছে। কোনওটি দু’বার, কোনওটি আবার আরও বেশি বার ব্যবহার করা হয়েছে।

এ ছাড়া যে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নম্বরগুলি একবারই ব্যবহার হয়েছে, তাতেও বিস্তর সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে অ্যাকাউন্ট নম্বরগুলিকে আপাতদৃষ্টিতে ভুল বলে মনে হচ্ছে। যেমন, কোথাও অ্যাকাউন্ট নম্বরের জায়গায় উল্লেখ রয়েছে ‘১১১১১১১১১১১’। আবার কোথাও উল্লেখ রয়েছে, ‘১২৩৪৫৬’। কোনও কোনও ক্ষেত্রে আবার একটি সংখ্যার অ্যাকাউন্ট নম্বরও উল্লেখ রয়েছে। কোথাও আবার নাম, ঠিকানা লেখা রয়েছে— এমন উদাহরণও মিলেছে।

ক্যাগের রিপোর্টে এ-ও বলা হয়েছে, এই কেন্দ্রীয় প্রকল্পের দ্বিতীয় এবং তৃতীয় পর্যায়ে অ্যাকাউন্ট নম্বরের তথ্য বিশ্লেষণ করে প্রকল্পে অংশগ্রহণকারীদের পরিচয় সম্পর্কে পর্যাপ্ত নিশ্চয়তা মেলেনি। যদিও এ বিষয়ে দু’বছর আগেই একটি ব্যাখ্যা দিয়েছিল কেন্দ্র। ক্যাগের রিপোর্টে সেই ব্যাখ্যারও উল্লেখ রয়েছে। ওই সময়ে কেন্দ্র জানিয়েছিল, প্রাথমিক ভাবে স্কিল ইন্ডিয়া পোর্টালে অ্যাকাউন্টের তথ্য পূরণ করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল। কিন্তু পরে বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কিছু সমস্যার কারণে এটিকে ঐচ্ছিক করে দেওয়া হয়। মন্ত্রক ওই সময়ে আরও জানিয়েছিল, এই প্রকল্পের আওতায় অংশগ্রহণকারীদের আধার তথ্যের ভিত্তিতে টাকা পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। ফলে যে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টটি আধার নম্বরের সঙ্গে যুক্ত, সেটিতে সরাসরি টাকা পৌঁছে যাবে। তাই আলাদা করে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের তথ্য নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা নেই।

ক্যাগ জানিয়েছে, ২০২৩ সালে সরাসরি অ্যাকাউন্ট ট্রান্সফারের মাধ্যমে কত জন সুবিধাপ্রাপক টাকা পেয়েছেন, সেই তথ্যও বিশ্লেষণ করে দেখা হয়েছে। তাতে দেখা গিয়েছে, প্রকল্পের দ্বিতীয় এবং তৃতীয় পর্যায়ে মাত্র ২৫.৫৮ শতাংশ (২৪ লক্ষ ৫৩ হাজার) যোগ্য সুবিধাপ্রাপক সরাসরি অ্যাকাউন্ট ট্রান্সফার প্রক্রিয়ায় ছিলেন। তার মধ্যে ১৭ লক্ষ ৬৯ হাজার সুবিধাপ্রাপকের অ্যাকাউন্টে সফল ভাবে টাকা পাঠানো গিয়েছে। ক্যাগের রিপোর্ট অনুসারে, গত বছরের অক্টোবর মাস পর্যন্ত ৯৫ লক্ষেরও বেশি সুবিধাপ্রাপকের মধ্যে ৬১ লক্ষ ১৪ হাজার জনকে এই প্রকল্পের টাকা দেওয়া হয়েছে।

রিপোর্টে আরও উঠে এসেছে, গত বছরের অক্টোবর মাস পর্যন্ত অপর্যাপ্ত তথ্যের কারণে ৩৪ লক্ষেরও বেশি যোগ্য সুবিধাপ্রাপকে এখনও অর্থ দেওয়া যায়নি। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের তথ্য ছাড়াই যে সুবিধাপ্রাপকদের যোগ্য বলে ঘোষণা করা হয়েছে, তাঁদের অর্থ দেওয়ার জন্য কী পদক্ষেপ করা হচ্ছে, সে বিষয়েও কেন্দ্রের তরফে কিছু উল্লেখ করা হয়নি বলে জানানো হয়েছে রিপোর্টে।

ক্যাগের এই রিপোর্টের বিষয়ে ‘দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’ কেন্দ্রীয় দক্ষতা উন্নয়ন মন্ত্রকের সঙ্গে যোগাযোগ করে। মন্ত্রকের তরফে তাদের জানানো হয়, পূর্ববর্তী ঘটনাবলি থেকে শিক্ষা নিয়ে এবং বাস্তবায়নের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে সংশোধনমূলক ব্যবস্থাকে আরও জোরালো করা হয়েছে। কেন্দ্র জানিয়েছে, প্রকল্পটি এখন আরও বেশি প্রযুক্তি নির্ভর হয়েছে। আধার তথ্যের ভিত্তিতে ই-কেওয়াইসি ব্যবস্থা করা হয়েছে। নজরদারি, ডেটা সংগ্রহ, স্বচ্ছতায় জোর দেওয়া হয়েছে। প্রক্রিয়াকে আরও স্বচ্ছ করতে ফেস অথেন্টিকেশন এবং জিও ট্যাগিং বাধ্যতামূলক করা হয়েছে বলেও জানিয়েছে কেন্দ্র।

CAG PMKVY Training Programme 2023
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy