সংসদ ভবনের সেন্ট্রাল হলে বল্লভভাই পটেলের ছবিতে মালা নেতাদের। ছবি: পিটিআই।
অব্যাহত রইল দড়ি টানাটানি।
বিরোধীদের মতে, আইকনের বড় অভাব বিজেপিতে। সে কারণেই কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই কংগ্রেস নেতা তথা দেশের প্রথম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বল্লভভাই পটেলকে কংগ্রেস থেকে বিচ্ছিন্ন করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বিজেপি নেতারা। আজ তাঁর জন্মদিবসে সেই প্রচেষ্টারই পুনরাবৃত্তি দেখা গেল। মাঠে নামলেন নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহ। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে একতা দৌড়, কেন্দ্রীয় দফতরগুলিতে নানাবিধ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে স্মরণ করা হল পটেলকে। ঘটনাচক্রে আজই ছিল প্রয়াত ইন্দিরা গাঁধীর মৃত্যুদিন। মোদী যদিও বা এক লাইনের টুইট করে কোনও রকমে প্রয়াত প্রধানমন্ত্রীকে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন, অমিত শাহ তা-ও করেননি। হয়নি কোনও সরকারি অনুষ্ঠানও।
পটেলের জন্মদিনে পিছিয়ে ছিল না কংগ্রেসও। এক দিকে পটেল নির্মিত গণতান্ত্রিক স্তম্ভগুলিকে বিজেপি ধ্বংস করছে বলে সরব হন রাহুল গাঁধী। অন্য দিকে বারদৌলী কৃষক আন্দোলনে পটেলের অংশগ্রহণের কথা উল্লেখ করে দেশে চলতি কৃষক আন্দোলনকে উস্কে দিয়ে বিজেপিকে অস্বস্তিতে ফেলতে সক্রিয় হন প্রিয়ঙ্কা গাঁধী।
বিদেশ সফররত মোদী আজ এক ভিডিয়ো বার্তায় বল্লভভাই পটেলের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, ‘আজ ভারত দেশীয় ও বৈদেশিক সব ধরনের চ্যালেঞ্জের মোকাবিলায় সক্ষম। যার পুরো কৃতিত্বই পটেলের। স্বাধীনতার পরে তাঁর নেতৃত্বেই অখণ্ড ভারতের স্বপ্ন পূরণ হয়েছিল। তিনি চাইতেন, ভারত নিজের ক্ষমতায় উন্নত ও স্বাবলম্বী দেশে পরিণত হোক। তাঁর স্বপ্ন থেকে অনুপ্রাণিত হয়েই ভারত আজ সব ধরনের চ্যালেঞ্জের মোকাবিলায় সক্ষম’। পাল্টা আক্রমণে বিজেপির বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক সংস্থাগুলি ধ্বংসের অভিযোগ সরব হন রাহুল। তিনি অভিযোগ করেন, আজ যখন সমস্ত গণতান্ত্রিক স্তম্ভগুলিকে দুর্বল করা হচ্ছে, তখন পটেলের অবদান মাথায় রাখতে হবে। ওই স্তম্ভগুলি নির্মাণে যে কংগ্রেস নেতাদের অবদান ছিল, তাঁদের মধ্যে উল্লেখজনক ছিলেন পটেল।
শাহ আজ সরব হন পটেলের প্রতি কংগ্রেসের বঞ্চনার অভিযোগকে কেন্দ্র করে। গুজরাতের নর্মদায় ‘স্ট্যাচু অব ইউনিটি’র সামনে বক্তব্যে শাহ অভিযোগ করেন, কংগ্রেসের আমলে পটেলকে উপেক্ষা করা হয়েছিল। কংগ্রেসের নাম না করে তিনি বলেন, ‘‘দুর্ভাগ্যের বিষয় হল, স্বাধীনতার পর থেকে সর্দার সাহেবকে ভুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছিল। তাঁর কৃতিত্বকে যথাযথ সম্মান দেওয়া হয়নি। এমনকি ‘ভারতরত্ন’ পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। কিন্তু ক্ষমতার পরিবর্তন হতেই পটেলকে ভারতরত্ন দেওয়া হয় এবং তাঁর নামে বিশ্বের সর্ববৃহৎ মূর্তি বানানো হয়।’’ অনেকের মতে, কংগ্রেসের আরও অনেক নেতার মতোই পটেলকে যোগ্য মর্যাদা দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ ছিলই। আইকনের অভাবে ধুঁকতে থাকা বিজেপি ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে পটেলকে কাছে টানতে সক্রিয় হয়েছে। আজও কংগ্রেসকে নিশানা করে আসলে গাঁধী পরিবারকেই বিদ্ধ করতে চেয়েছেন শাহ। পাল্টা রাহুলের মতোই পটেলকে তুলে ধরে সরব হন প্রিয়ঙ্কা। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলা কৃষক আন্দোলন নিয়ে অস্বস্তিতে বিজেপি নেতৃত্ব। উত্তরপ্রদেশ-সহ পাঁচ রাজ্যে ভোটের আগে ওই আন্দোলন যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে চলেছে, তা ধরে নিয়েছেন বিজেপি নেতারাও। এই অবস্থায় বিজেপির অস্বস্তি বাড়িয়ে বারদৌলী সত্যাগ্রহে পটেলের অংশগ্রহণের বিষয়টি তুলে ধরে টুইটারে প্রিয়ঙ্কা বলেন, পটেলের লড়াই কৃষকদের প্রতি অত্যাচারের বিরুদ্ধে ও কৃষকদের অধিকারের প্রশ্নে লড়াই ছিল।
পটেল প্রশ্নে আজ বিজেপিকে নিশানা করেছেন সপা নেতা অখিলেশ যাদবও। মহাত্মা গাঁধীর হত্যার পরেই সঙ্ঘ পরিবারের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পটেল। সেই ঘটনা উস্কে অখিলেশ বলেন, ‘‘মনে রাখতে হবে লৌহপুরুষ কিন্তু এক সময়ে একটি আদর্শের ভিত্তিতে গড়া একটি দল (আরএসএস)-এর উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলেন।’’ আরএসএস-কে পটেলের নিষিদ্ধ করার বিষয়টি তুলে ধরে আজ প্রচার চালায় অন্য বিজেপি-বিরোধী দলগুলিও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy