Advertisement
১১ মে ২০২৪

ব্যঙ্গচিত্রে প্রচার-যুদ্ধ গগৈ, সর্বানন্দের

সেখানে কানহাইয়া কুমার আর রাজনাথ সিংহের ছবি শোভা পাচ্ছে। তা বাম দল আর বিজেপির হোর্ডিং হওয়াই স্বাভাবিক। কিন্তু না, অসমের ভোটে কংগ্রেসের ‘পোস্টার বয়’ এখন রাজনাথ আর কানহাইয়া!

ভোটযুদ্ধের হোর্ডিং। কংগ্রেসের নিশানায় নরেন্দ্র মোদী সরকার। (ডান দিকে) বিজেপির খোঁচা তরুণ গগৈকে। — নিজস্ব চিত্র।

ভোটযুদ্ধের হোর্ডিং। কংগ্রেসের নিশানায় নরেন্দ্র মোদী সরকার। (ডান দিকে) বিজেপির খোঁচা তরুণ গগৈকে। — নিজস্ব চিত্র।

রাজীবাক্ষ রক্ষিত
গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০১৬ ০৩:০৬
Share: Save:

ভোটের রাজ্যে আকাশ ঢাকা হোর্ডিং, পোস্টার।

সেখানে কানহাইয়া কুমার আর রাজনাথ সিংহের ছবি শোভা পাচ্ছে। তা বাম দল আর বিজেপির হোর্ডিং হওয়াই স্বাভাবিক। কিন্তু না, অসমের ভোটে কংগ্রেসের ‘পোস্টার বয়’ এখন রাজনাথ আর কানহাইয়া!

লোকসভার ভোট থেকে শিক্ষা নিয়ে কংগ্রেস এখন ভোট প্রচারে এতই আগ্রাসী যে বিজেপির হাত থেকে তাদের সব অস্ত্রই কার্যত কেড়ে নিচ্ছে তারা। বিশেষ করে রসবোধের সহিষ্ণুতায় তরুণ গগৈ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে অন্তত দশ গোল দেবেন। বিজেপি গগৈয়ের ব্যঙ্গচিত্র দিয়ে হোর্ডিং তৈরি শুরু করতেই, গগৈ নিজের ব্যঙ্গচিত্র দিয়ে পাল্টা হোর্ডিং তৈরি করে শহর ঢেকে দিয়েছেন।

গত বছর একটি সংবাদসংস্থার সমীক্ষায় বড় রাজ্যগুলির মধ্যে পরিকাঠামো বিকাশে সেরা হওয়ায় পুরস্কৃত হয় অসম। দিল্লিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহের হাত থেকে সেই পুরস্কার নিয়েছিলেন গগৈ। ওই পুরস্কার নেওয়ার ছবিটিই আপাতত কংগ্রেসের পৌষ মাস আর বিজেপির সর্বনাশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বড় বড় হোর্ডিংয়ে ওই ছবি লাগিয়ে কংগ্রেস দাবি করছে বিজেপি তথা কেন্দ্রই অসমকে সেরার স্বীকৃতি দিয়েছে। তাই কংগ্রেসের বিকল্প নেই। রাজনাথ কংগ্রেসের পোস্টার আলো করায় অস্বস্তিতে বিজেপি। গগৈয়ের হাত থেকে এআইইউডিএফ প্রধান বদরুদ্দিন আজমলের শংসাপত্র গ্রহণের ছবি হোর্ডিংয়ে লাগিয়ে তারা পাল্টা দাবি করছে, গগৈ-আজমলের গোপন সমঝোতা হয়ে গিয়েছে।

রাজীব ভবনের কাছে আর ছ'মাইল এলাকায় আকাশছোঁয়া পোস্টারে রয়েছে কানহাইয়া কুমার আর রোহিত ভেমুলার ছবি। প্রশ্ন তোলা হয়েছে, এই কি মোদীর আচ্ছে দিনের নমুনা? কিন্তু কানহাইয়া তো বাম ছাত্রনেতা। বাংলায় কংগ্রেস-বাম জোট হলেও অসমে তা হয়নি। তবু কেন কানহাইয়া কংগ্রেসের হোর্ডিংয়ে? গগৈ বলেন, ‘‘আমরা বাক-স্বাধীনতার জন্য চালানো কানহাইয়ার লড়াইকে সম্মান জানিয়ে ওই ছবি ব্যবহার করছি। ভারতের অন্য রাজ্যে যেমন বিজেপি, তেমনই রাজ্যের ইতিহাসে অগপ প্রতিবাদী কন্ঠরোধ করতে চরম দমননীতি ব্যবহার করেছে। তাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কানহাইয়া আমাদের প্রতীক। আমাদের সঙ্গে কানহাইয়ার দল বা আদর্শের যোগ নেই।’’

মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈয়ের খুব চেনা কয়েকটি উক্তি মানুষের মুখে মুখে ফেরে। যেমন, ‘বাদ দিয়া হে’, ‘মিছা কই কি ডাল হব’'। গগৈয়ের অনুনকরণীয় বাচনভঙ্গী, মজা করা, হাসির কায়দাকে সম্বল করে অসমের একটি চ্যানেলে বহু বছর ধরে জনপ্রিয় ব্যঙ্গাত্মক অনুষ্ঠান চলছে। পশ্চিমবঙ্গে যেখানে ফেসবুকে কার্টুন আঁকলেও পুলিশে পাকড়াও করে, এখানে তেমনটা হয়নি, গগৈ নিজেও সময় পেলে অনুষ্ঠানটি দেখে আমোদ পান।

বিজেপি ভোটযুদ্ধে গগৈয়ের কার্টুন ব্যবহার করে জনতার চোখ টানতে আর কংগ্রেসকে চাপে ফেলতে চেয়েছিল। তারা গগৈয়ের ব্যঙ্গচিত্র দিয়ে হোর্ডিং তৈরি শুরু করার পরেই কংগ্রেস বিজেপির অস্ত্রেই তাদের বধ করতে নামে। এক দিকে রাজনাথের ছবি ব্যবহার করা, অন্য দিকে গগৈয়ের ব্যঙ্গচিত্র দিয়ে শহরজোড়া হোর্ডিং-পোস্টার। কোথাও গগৈয়ের পদাঘাতে কুপোকাৎ হিমন্তবিশ্ব শর্মা, অতুল বরা, সর্বানন্দ সোনোয়াল, কোথাও আবার কাঁচুমাচু নরেন্দ্র মোদীর পাশে দাঁড়িয়ে গগৈ বলছেন, ‘‘বাদ দিয়া হে বিজেপির লেকচার, এই বার হব কংগ্রেসরই সরকার।’’ একটি হোর্ডিংয়ে দেখা যাচ্ছে, চিৎপাৎ সর্বাকে গগৈ বলছেন, ‘‘নিজের দুটো বিভাগের ভার সামলাতে পারছ না, গোটা রাজ্যের স্বপ্নের ভার কী করে বইবে?’’ বিজেপিও চাদর গায়ে ঘুমনো গগৈয়ের কার্টুন হোর্ডিংয়ে লাগিয়ে বলছে, ‘‘'নিদ্রামগ্ন গগৈয়ের জবাব দেওয়া সময় শেষ।’’

রাজ্যের ভোটযুদ্ধে ব্যঙ্গচিত্রের এমন বহুল ব্যবহার আগে ছিল না। রক্ষণশীল রাজ্যে, অশীতিপর মুখ্যমন্ত্রীর এমন ভোল বদল কেন? শুধু ব্যঙ্গচিত্রই নয়, অন্য বার বিভিন্ন সময় তোলা গগৈয়ের ছবি থেকে বাছাই করেই হোর্ডি-কাট-আউট তৈরি করত কংগ্রেসের প্রচার বিভাগ। এ বার হোর্ডিং তৈরির আগে বিভিন্ন উপজাতির পোশাক পরে, বিভিন্ন ভঙ্গীতে রীতিমতো 'ফটোসেশন'ও করেছেন গগৈ।

গগৈ বলেন, ‘‘লোকসভা ভোটে বিজেপি যে ভাবে বিজ্ঞাপন আর চমক দিয়ে মানুষের মন টেনেছিল তা থেকে আমরা শিক্ষা নিয়েছি। ব্যঙ্গচিত্রে মন্দের কিছু নেই। ওরা যেমন আমার ছবি আঁকছে, আমিও পাল্টা নিজের ছবি আঁকাচ্ছি। ক্যামেরায় তোলা ছবি তো অনেক দেখেছে মানুষ। এ বার ব্যঙ্গচিত্রে স্বাদবদল হল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Election Campaign tarun gogoi Sarbananda Sonowal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE