Advertisement
২৮ মার্চ ২০২৩
রোহতক গণধর্ষণ

নির্ভয়া-সাজার পরেও ভয় কই, আক্ষেপ মায়ের

ছোট্ট এক ঘরের ফ্ল্যাটের মেঝেতে শুয়ে রয়েছেন মা। দিল্লি থেকে ৪৩ কিলোমিটার দূরে। মেয়েকে গণধর্ষণ করে নৃশংস ভাবে হত্যা করা হয়েছে জানার পরে তিনি আর হাঁটাচলা করতে পারছেন না।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সংবাদ সংস্থা
চণ্ডীগড় শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০১৭ ০৩:২৪
Share: Save:

ছোট্ট এক ঘরের ফ্ল্যাটের মেঝেতে শুয়ে রয়েছেন মা। দিল্লি থেকে ৪৩ কিলোমিটার দূরে। মেয়েকে গণধর্ষণ করে নৃশংস ভাবে হত্যা করা হয়েছে জানার পরে তিনি আর হাঁটাচলা করতে পারছেন না।

Advertisement

শুধু গণধর্ষণের যন্ত্রণা নয়, মেয়েটিকে যাতে পরে চেনা না যায়, তার জন্য অভিযুক্তরা তাঁর মুখ আর মাথাও ইট মেরে থেঁতলে দিয়েছিল। মা এই সব জেনেছেন। জানতে পেরেছেন মাদক বা ঘুমের ওষুধ খাইয়ে ধর্ষণের পরে নির্যাতনকারীরা গাড়ি চালিয়ে দিয়েছিল মেয়েটির দেহের উপর দিয়ে। জেনেছেন, পড়ে থাকা দেহ থেকে মুখ আর নিম্নাংশ খুবলে খেয়েছে কুকুরে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পড়ে জেনেছেন, মেয়ের খুলিটা টুকরো টুকরো হয়ে গিয়েছিল। তাঁর যৌনাঙ্গের গভীর ক্ষত থেকে মনে হয়েছে কোনও ধারালো বস্তু ঢোকানো হয়েছিল। নিজের মেয়ের সম্পর্কে এই সব ভয়ঙ্কর তথ্য ‘মেনে’ নিতে হয়েছে মাকে।

৯ মে থেকে নিখোঁজ ছিল মেয়ে। দু’দিন পরে তাঁর ক্ষতবিক্ষত দেহ উদ্ধার হয় রোহতকের আর্বান এস্টেটের ইন্ডাস্ট্রিয়াল মডেল টাউনশিপের কাছে। হরিয়ানার সোনেপতের এই ঘটনা উস্কে দিয়েছে দিল্লির নির্ভয়ার স্মৃতি। এ মাসের গোড়ায় সুপ্রিম কোর্ট যে ঘটনায় দোষীদের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে। সে দিনের রায় টিভির পর্দায় দেখেছিলেন সোনেপতের মা-মেয়ে। তার কয়েক দিন পরে তাঁদেরও যে এমন ভয়ঙ্কর কিছুর মধ্যে দিয়ে যেতে হবে, দুঃস্বপ্নেও হয়তো ভাবেননি ওঁরা।

সোনেপতের মা এখন বলছেন, ‘‘নির্ভয়া-কাণ্ডে দোষীরা সাজা পাওয়ার পরে সুপ্রিম কোর্টের রায় নিয়ে গ্রামের সবাই আলোচনা করেছি। মনে হয়েছিল, এ বার লোকে হয়তো এমন অপরাধ করার আগে দু’বার ভাববে। এখন বুঝছি, মেয়েদের নিরাপত্তা সেই তিমিরে। সাজা পেয়েও লোকজনের কোনও ভয় নেই।’’ মেয়ের দিনমজুর বাবা বলেছেন, ‘‘ক্লাস টেন পর্যন্ত পড়েছে। কিন্তু টাকার অভাবে পড়াতে পারিনি মেয়েকে। ওষুধ সংস্থায় কাজ পেয়েছিল। চার হাজার টাকা পেত। এই বয়েসে যে ভাবে ও সাহায্য করছিল, তাতে গর্ব হতো।’’

Advertisement

আরও পড়ুন:বদলা নিতেই রোহতকের তরুণীকে এত নৃশংসভাবে খুন করেছিল ওরা!

অভিযুক্ত মোট আট জনের মধ্যে দু’জনকে গ্রেফতার করতে পেরেছে পুলিশ। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মনোহরলাল খট্টর জানিয়েছেন, ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টে এই মামলার শুনানি হবে। তাঁর কথায়, ‘‘সভ্য সমাজে এ ধরনের বর্বরতা কোনও অবস্থাতেই সহ্য করা হবে না। দোষীদের সাজা হবেই।’’ সোনেপত পুলিশের দাবি, সুমিত নামে মুখ্য অভিযুক্ত মেয়েটিকে বিয়ে করতে চেয়েছিল। মেয়েটি আপত্তি করায় প্রতিশোধ নিতে চেয়ে সে এই ঘটনা ঘটিয়েছে। রোহতকে সৎ বাবার হাতে বারংবার ধর্ষণের শিকার আর এক পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা নাবালিকার গর্ভপাত করানোর অনুমতি চেয়ে তাঁর মা জেলা আদালতে আবেদন জানিয়েছেন। কাল এ নিয়ে শুনানি।

বিজেপি-শাসিত হরিয়ানায় মহিলাদের হেনস্থা রুখতে মাত্র মাসখানেক আগেই ‘অপারেশন দুর্গা’ নামে একটি প্রকল্প চালু হয়েছে। কিন্তু সুরক্ষা কোথায়? রোহতকের ঘটনায় অভিযুক্তদের মৃত্যুদণ্ড চেয়ে সরব হয়েছে কংগ্রেস। গত কাল গুরুগ্রামে বছর বাইশের এক তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। সিকিমের ওই তরুণীকে গুরুগ্রাম থেকে অপহরণ করে গা়ড়িতে তোলে তিন জন। চলন্ত গাড়িতে ধর্ষণের পরে তাঁকে দিল্লির নাজফগড়ে গাড়ি থেকে ফেলে দিয়ে পালিয়ে যায় অভিযুক্তরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.