E-Paper

কেন্দ্রের উপরে নির্ভরশীল, নিজস্ব আয়ে রাজ্য পিছিয়েই

রাজ্যগুলির কোষাগারের হালহকিকত নিয়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সাম্প্রতিক রিপোর্ট বলছে, পশ্চিমবঙ্গ আয়ের ক্ষেত্রে অনেকটাই কেন্দ্রের অর্থের উপর নির্ভরশীল।

প্রেমাংশু চৌধুরী

শেষ আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৫:০৭
nabanna

নবান্ন। —ফাইল চিত্র।

কর বাবদ আয় হোক বা অন্যান্য উৎস থেকে আয়, বাম জমানায় পশ্চিমবঙ্গ বরাবর পিছিয়েই থাকত। ‘পরিবর্তন’-এর ১২ বছর পরেও পশ্চিমবঙ্গ এখনও পিছিয়ে।

রাজ্যগুলির কোষাগারের হালহকিকত নিয়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সাম্প্রতিক রিপোর্ট বলছে, পশ্চিমবঙ্গ আয়ের ক্ষেত্রে অনেকটাই কেন্দ্রের অর্থের উপর নির্ভরশীল। কর বাবদ আয় ও অন্যান্য উৎস থেকে আয়ে পশ্চিমবঙ্গ এখনও গোটা দেশে পিছনের সারিতেই রয়েছে। রাজ্যের জিডিপি-র তুলনায় নিজস্ব কর বাবদ আয়ের হার ৫ শতাংশের সামান্য বেশি। যেখানে জাতীয় গড় ৭ শতাংশ। আর কর ছাড়া রাজ্যের অন্যান্য আয়ের হার আরও খারাপ। রাজ্যের জিডিপি-র তুলনায় রাজ্যের কর ছাড়া অন্যান্য আয়ের হার মাত্র ০.৪ শতাংশ। এ ক্ষেত্রে জাতীয় গড় ১.২ শতাংশ। দুই মাপকাঠিতেই বড় রাজ্যগুলির মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ শেষ সারিতে।

তা হলে রাজ্যের আয় হচ্ছে কোথা থেকে? এ ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ অনেকটাই কেন্দ্রের অর্থের উপর নির্ভরশীল। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের রিপোর্ট বলছে, ‘বড় রাজ্যগুলির মধ্যে অসম, পঞ্জাব, অন্ধ্রপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, মধ্যপ্রদেশ, বিহার, কেরল অনেকটাই কেন্দ্রের অর্থের উপরে নির্ভরশীল। এই রাজ্যগুলির আয়ের পাঁচ ভাগের এক ভাগ আয়ই আসছে কেন্দ্রীয়
অনুদান থেকে।’

১০০ দিনের কাজের প্রকল্প, আবাস যোজনার মতো ক্ষেত্রে টাকা আটকে রাখাকে হাতিয়ার করে রাজ্য সরকার মোদী সরকারের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় বঞ্চনার অভিযোগ তুলছে। আগামী সপ্তাহেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বৈঠক করতে আসছেন। পশ্চিমবঙ্গ যে কেন্দ্রীয় অর্থ বা অনুদানের উপরে অনেকখানি নির্ভরশীল, তার প্রমাণ হল, চলতি অর্থ বছরের বাজেট অনুযায়ী, রাজ্যের জিডিপি-র তুলনায় কেন্দ্রীয় সাহায্যের হার ৬.৮ শতাংশ। গত দুই অর্থ বছরে এই হার ছিল আরও বেশি—৭.৭ শতাংশ ও ৭.৩ শতাংশ। তিন বছরেই পশ্চিমবঙ্গের হার ছিল জাতীয় গড়ের তুলনায় অনেক বেশি। অর্থনীতিবিদ প্রসেনজিৎ বসুর যুক্তি, “পশ্চিমবঙ্গের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় সরকার বৈষম্য করছে, এই যুক্তি দাঁড়ায় না। কারণ রাজ্যের জিডিপি বা জিএসডিপি-র তুলনায় পশ্চিমবঙ্গের কেন্দ্রীয় সাহায্যের হার জাতীয় গড়ের থেকে বেশি। রাজ্যের আসল সমস্যা হল, নিজস্ব কর বাবদ আয়।”

২০২৩-২৪-এর রাজ্যগুলির বাজেট পর্যালোচনা করে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সম্প্রতি ‘স্টেট ফাইনান্সেস’ শীর্ষক রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের রিপোর্ট বলছে, পশ্চিমবঙ্গে মোট কর বাবদ আয় ১০০ টাকা হলে, তার মধ্যে নিজস্ব কর বাবদ আয় মাত্র ৫৪ টাকা। হরিয়ানা, মহারাষ্ট্র, তেলঙ্গানা, তামিলনাড়ু, গুজরাত, কর্নাটক, কেরল, পঞ্জাবের মতো রাজ্যে কর বাবদ ১০০ টাকা হলে তার মধ্যে ৭০ টাকার বেশি আসে নিজস্ব কর বাবদ আয় থেকে।

রিজার্ভ ব্যাঙ্কের রিপোর্ট অনুযায়ী, জিএসটি চালুর আগের দু’বছরে পশ্চিমবঙ্গের কর বাবদ আয় ১০০ টাকা হলে তার মধ্যে ৫১.৯০ টাকা আসত নিজস্ব কর থেকে। জিএসটি চালুর পরে, কোভিডের আগে পর্যন্ত—মাঝের এই দু’বছরে তা বেড়ে ৫৪.৪০ টাকা হয়। কোভিডের পরের দু’বছরে তা কার্যত একই জায়গায় রয়েছে—৫৪.২০ টাকা। কর ছাড়া অন্যান্য আয়ের ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের হাল আরও খারাপ। সেখানে রাজ্যের মোট আয় ১০০ টাকা হলে, কোভিডের বছর ও তার পরের দু’বছরে কর ছাড়া অন্যান্য উৎস থেকে রাজ্যের নিজস্ব আয় মাত্র ২.৬০ টাকা।

নবান্ন সূত্রের যুক্তি, তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পরে নিজস্ব কর বাবদ আয় বাড়ানোর নানারকম চেষ্টা হয়েছে। বাম জমানার তুলনায় উন্নতিও হয়েছে। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সাম্প্রতিক রিপোর্টেও পশ্চিমবঙ্গের কর ব্যবস্থার সংস্কারের প্রশংসা করে বলা হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গ ই-রেজিস্ট্রেশন, রিটার্নের ই-ফাইলিং, করের ই-পেমেন্ট ব্যবস্থা চালু করে কর ব্যবস্থার সরলীকরণ করেছে। রাজস্ব ফাঁকি রুখতে পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ চালু করেছে।

পশ্চিমবঙ্গের বিরোধীদের অভিযোগ, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার ভোটের জন্য খয়রাতির পিছনে বেশি খরচ করছে। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের রিপোর্ট অনুযায়ী, গত তিন বছরে রাজ্যের জিডিপি-র ১১ শতাংশের মতো অর্থ উন্নয়ন খাতে খরচ হচ্ছে। সামাজিক ক্ষেত্রে খরচ ৯ শতাংশের বেশি।

সেই তুলনায় আর পরিকাঠামো তৈরি বা মূলধনী খরচ ২ শতাংশ বা তারও কম। গত দুই অর্থ বছরে ছিল মাত্র ১.৩ ও ১.৪ শতাংশ। চলতি অর্থ বছরে ২ শতাংশ খরচের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। অসম, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, কর্নাটক, তেলঙ্গানা, উত্তরপ্রদেশ, অন্ধ্রপ্রদেশ, ছত্তীসগঢ়, বিহার, ঝাড়খণ্ডও পরিকাঠামো খাতে পশ্চিমবঙ্গের তুলনায় বেশি খরচ করছে।

নবান্ন সূত্রের যুক্তি, কোভিড-উত্তর পরিস্থিতিতে মানুষের আর্থিক দুর্দশা ঘোচাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার সামাজিক খাতে খরচ করছে। লক্ষ্মীর ভান্ডারের মতো প্রকল্পে মানুষের হাতে টাকা তুলে দেওয়া হয়েছে। রাজ্যের অর্থনীতিতে তার সুফলই মিলেছে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Nabanna Central Government West Bengal

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy