Advertisement
E-Paper

ভারতের সামনে তিনটি রাস্তা খোলা, ট্রাম্পের ৫০ শতাংশ শুল্কের মোকাবিলা কী ভাবে সম্ভব? ত্রাতা হতে পারে কে

নতুন করে আরও ২৫ শতাংশ যোগ হওয়ায় মোট শুল্কের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫০ শতাংশ, যা বিভিন্ন দেশের উপর আরোপিত মার্কিন শুল্কের মধ্যে সর্বোচ্চ। বিশেষজ্ঞেরা মনে করছেন, তিনটি পথ এখন ভারতের সামনে খোলা আছে।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০২৫ ২০:২৪
মার্কিন শুল্কের মোকাবিলার চেষ্টায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

মার্কিন শুল্কের মোকাবিলার চেষ্টায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

আমেরিকার ৫০ শতাংশ শুল্ক-কোপের মোকাবিলা করতে ভারতের সামনে তিনটি পথ খোলা রয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা। বুধবারই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, ভারতের পণ্যে আরও ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হচ্ছে। আগে ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপানো হয়েছিল। নতুন করে আরও ২৫ শতাংশ যোগ হওয়ায় মোট শুল্কের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫০ শতাংশ, যা বিভিন্ন দেশের উপর আরোপিত মার্কিন শুল্কের মধ্যে সর্বোচ্চ। ট্রাম্পের বক্তব্য, রাশিয়া থেকে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ ভাবে খনিজ তেল কেনা চালিয়ে যাচ্ছে ভারত। সেই কারণে ইউক্রেনে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে রাশিয়ার সুবিধা হচ্ছে। এই পরিস্থিতির মোকাবিলার জন্যেই ভারতের পণ্যে শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, অবিলম্বে এই সমস্যার সমাধান প্রয়োজন। না হলে ভারতের অর্থনীতিতে তার প্রভাব পড়তে পারে। ৫০ শতাংশ শুল্ক দিতে হলে আমেরিকায় রফতানি প্রায় বন্ধ হতে বসবে।

যে তিন পথের কথা বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, তার মধ্যে অন্যতম হল আলোচনা। অনেকেই মনে করছেন, আমেরিকা এবং ভারতের আধিকারিকেরা বাণিজ্য নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসতে পারেন। সেখানে আলোচনার মাধ্যমে জট কাটলেও কাটতে পারে। চলতি মাসের শেষের দিকে আমেরিকার বাণিজ্যদল ভারতে আসছে। প্রথম থেকেই ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যচুক্তি নিয়ে আশাবাদী ছিলেন ট্রাম্প। কিন্তু ভারত এ বিষয়ে ‘ধীরে চলো’ নীতি নিয়েছিল। ফলে ট্রাম্প হতাশ এবং বিরক্ত হয়েছেন। রুশ বাণিজ্য তো বটেই, ভারতের কৃষি-বাজারে প্রবেশাধিকার চেয়েছিল আমেরিকা। যাতে নয়াদিল্লি রাজি হয়নি। সূত্রের খবর, পর পর পাঁচ থেকে ছ’টি বৈঠক ভেস্তে গিয়েছে। তার পরেই এই পদক্ষেপ।


ভারতের তরফে নমনীয়তার কোনও ইঙ্গিত এখনও আসেনি। বরং এ ব্যাপারে নয়াদিল্লির অবস্থান স্পষ্ট। জাতীয় স্বার্থ এবং আন্তর্জাতিক বাজারের কথা মাথায় রেখে ভারত বাণিজ্যনীতি স্থির করে। রাশিয়া সস্তায় তেল বিক্রি করছে, তাই ভারত তাদের থেকে তেল কিনছে। বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, ‘‘কৃষকদের স্বার্থ আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। ভারত কখনও কৃষক, গোপালক বা মৎস্যজীবীদের স্বার্থের সঙ্গে আপস করবে না।’’ এর জন্য তাঁকে ব্যক্তিগত ভাবে চড়া মূল্য চোকাতে হবে, জানিয়েছেন মোদী। কিন্তু তার জন্যেও তিনি প্রস্তুত। ভারতের আধিকারিকেরা অবশ্য জানিয়েছেন, কিছু আমেরিকান সংস্থা এবং বাদাম, চি়জ়ের মতো পণ্যে তারা শুল্ক হ্রাস করতে প্রস্তুত।

এ ছাড়া, ট্রাম্পের মোকাবিলার আর একটি উপায় হতে পারে তাঁর দাবি মেনে নেওয়া এবং রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যে আপস করা। ভারত আগে জানিয়েছিল, নিষেধাজ্ঞা বা অন্য কোনও কারণে রাশিয়া থেকে তেল কেনা যদি আর সম্ভব না হয়, তখন বিকল্পের কথা ভাবা হবে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের আগে যে সমস্ত দেশের কাছ থেকে তেল কেনা হত, ভারত আবার তাদের কাছে ফিরে যেতে পারে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নাম ইরাক। তা ছাড়া, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরশাহির কাছ থেকেও তেল আমদানি করতে পারে ভারত। এই দেশগুলি থেকে এখনও তেল আসে ভারতে। আগামী দিনে রাশিয়া থেকে আমদানি বন্ধ হলে এই আমদানি বাড়তে পারে। এমনকি, আমেরিকার কাছ থেকেও খনিজ তেল আমদানি করে ভারত।

ভারতের সামনে তৃতীয় পথ হল, আমেরিকা-বিরোধী দেশগুলির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধি। ভারতের মতো ব্রাজ়িলের উপরেও চড়া শুল্ক আরোপ করেছে আমেরিকা। শুল্কের পরিমাণ সেখানেও ৫০ শতাংশ। ভারত এবং ব্রাজ়়িল ব্রিকস-এর সদস্য। ট্রাম্পের শুল্ক ঘোষণার পর ব্রা়জ়িলের প্রেসিডেন্ট লুলা দ্য সিলভা জানিয়েছিলেন, তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে ফোনে কথা বলবেন। চিন এবং রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনা করবেন। কী ভাবে শুল্ক সমস্যার মোকাবিলা করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হবে। বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, ট্রাম্পের হুমকির মাঝে অন্য দেশের সঙ্গে ভারতের ঘনিষ্ঠতা বাড়তে পারে। যে সমস্ত দেশ ভারতের মতোই আমেরিকার কোপে পড়েছে, তাদের সঙ্গে হাত মেলালে আমেরিকার মোকাবিলা করা যেতে পারে। ইতিমধ্যে রাশিয়ার সঙ্গে কথাবার্তা চালু হয়েছে। চলতি মাসের শেষে পুতিন আসছেন ভারত সফরে।

পরিসংখ্যান বলছে, ২০২৫ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত এক অর্থবর্ষে আমেরিকায় ৭.৬ লক্ষ কোটি টাকার পণ্য রফতানি করেছে ভারত। তার মধ্যে পোশাক থেকে শুরু করে রয়েছে ওষুধপত্র, রত্ন, গয়নাগাটি এবং পেট্রোরাসায়নিক পণ্য। তা ভারতের জিডিপি-র প্রায় ২ শতাংশ। ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হলে এই সমস্ত রফতানির অধিকাংশই বন্ধ হয়ে যেতে পারে। ফলে বাণিজ্য ধাক্কা খাবে। তাই এই জট কাটাতে অবিলম্বে পদক্ষেপ করা প্রয়োজন।

India US Tariff War India US Trade Donald Trump Narendra Modi India Russia Trade
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy