বেঙ্গালুরুর চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামর বাইরে আইপিএল জয়ের উচ্ছ্বাসকে কেন্দ্র করে যে বিপর্যয় ঘটেছে বুধবার, তার ব্যাখ্যা দিলেন কর্নাটকের কংগ্রেস সরকারের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া। জানালেন, চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের সামনে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহতের সংখ্যা ৩৩। চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের ধারণক্ষমতা মাত্র ৩৩ হাজার। কিন্তু সেখানে দু’লক্ষের বেশি মানুষ প্রবেশের চেষ্টা করেছিলেন। তার ফলে স্টেডিয়ামের ছোট দরজা ভেঙে যায়। তৈরি হয় পদপিষ্টের মতো পরিস্থিতি। কর্নাটক সরকারেরই নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করার কথা ছিল, মেনে নিয়েছেন সিদ্দারামাইয়া। জানিয়েছেন, এই ঘটনাকে নিয়ে তিনি কোনও রকম রাজনীতি করতে চান না। এমন ঘটনা তাঁরা কেউ আশা করেননি। তবে ইতিমধ্যে পদপিষ্টের ঘটনাকে কেন্দ্র করে কর্নাটক সরকারকে তুলোধনা করতে শুরু করেছে বিজেপি।
দীর্ঘ ১৭ বছর অপেক্ষার পর অবশেষে ১৮তম আইপিএল জিতেছে রয়াল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু (আরসিবি)। বিরাট কোহলিদের সঙ্গে উৎসবে শামিল হতে বুধবার চিন্নাস্বামী স্টেডিয়াম এবং তার বাইরে লক্ষ লক্ষ মানুষ জড়ো হয়েছিলেন। সেখানে ধাক্কাধাক্কিতে পদপিষ্টের পরিস্থিতি তৈরি হয়। মৃতদের পরিবারকে ১০ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে, ঘোষণা করেছেন কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী। সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেন, ‘‘এত মানুষ চলে আসবেন, আমরা ভাবতে পারিনি। স্টেডিয়ামের ধারণক্ষমতা ৩৩ হাজার। সেখানে দু’তিন লক্ষ মানুষ ঢোকার চেষ্টা করছিলেন। স্টেডিয়ামের দরজাটাও ছোট। ভিড়ের ঠেলায় তা ভেঙে যায়। এই জমায়েত কেউ আশা করেননি। তবে যা হয়েছে, আমি তার জন্য কোনও অজুহাত দিতে চাই না।’’
আরও পড়ুন:
বুধবারের ঘটনায় ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ের তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন সিদ্দারামাইয়া। তার জন্য ১৫ দিন সময় দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের সামনে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাঁদের মধ্যে বেশির ভাগই কমবয়সি। আমি গভীর ভাবে শোকাহত। এই যন্ত্রণা আইপিএল জয়ের আনন্দকে মুছে দিল। যা হয়েছে, তা হওয়ার কথা ছিল না।’’ হাসপাতালে আহতদের দেখতে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। জানিয়েছেন, আহতেরা সকলেই আপাতত বিপন্মুক্ত। কর্নাটকের উপমুখ্যমন্ত্রী ডিকে শিবকুমার বলেন, ‘‘ভিড় সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছিল পুলিশ। এই বিপুল ভিড় নিয়ন্ত্রণ করাই যাচ্ছিল না। কমবয়সিদের জমায়েতে তো আর লাঠিচার্জ করা যায় না! সেই কারণেই ট্রফি নিয়ে শোভাযাত্রার সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হয়েছে। মাত্র ১০ মিনিটে অনুষ্ঠান শেষ হয়ে গিয়েছে। তার পরেও বিপর্যয় এড়ানো যায়নি।’’
দীর্ঘ ১৭ বছর অপেক্ষার পর অবশেষে ১৮তম আইপিএল জিতেছে রয়াল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু (আরসিবি)। প্রথম দিন থেকে এই দলের সঙ্গে ছিলেন কোহলি। এত দিনে তাঁর হাতে কাঙ্ক্ষিত ট্রফি উঠেছে। তাই এই আইপিএল জয়ের উচ্ছ্বাসও বাঁধ ভেঙেছে বেঙ্গালুরুতে। বুধবার রাজ্য সরকারের তরফেই আইপিএল জয়ী দলের সংবর্ধনার অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছিল। ট্রফি নিয়ে কোহলিরা প্রথমে যান কর্নাটকের বিধানসৌধে, সেখান থেকে চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে। তাঁদের দেখতে ভিড় ক্রমশ বাড়ছিল। একটা সময়ের পর পরিস্থিতি আর সামাল দিতে পারেনি পুলিশ। বিধানসৌধের সামনেও লক্ষাধিক মানুষের জমায়েত হয়েছিল বলে জানিয়েছেন সিদ্দারামাইয়া। তবে সেখানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণেই ছিল। বিপত্তি ঘটে চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের বাইরে।
তবে সিদ্দারামাইয়ার বক্তব্যে বিতর্ক থামছে না। কর্নাটকের কংগ্রেস সরকারকে কটাক্ষ করে বিজেপির আইটি সেলের প্রধান অমিত মালবীয় সমাজমাধ্যমে লেখেন, ‘‘বেঙ্গালুরুতে উৎসব দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। এই ঘটনা অনায়াসে এড়ানো যেত। প্রশাসনের কোনও দূরদর্শিতাই নেই! ভিড় নিয়ন্ত্রণ করতে চূড়ান্ত ব্যর্থ কর্নাটক সরকার। তাদের অবহেলার কারণেই এতগুলো মানুষের প্রাণ গেল।’’ সিদ্দারামাইয়া বলেন, ‘‘বিজেপি এই ঘটনা নিয়ে রাজনীতি করছে। আমি তা করতে চাই না।’’
বেঙ্গালুরুর ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সমাজমাধ্যমে লিখেছেন, ‘‘বেঙ্গালুরুর বিপর্যয় সত্যিই হৃদয়বিদারক। যাঁরা প্রিয়জনকে হারিয়েছেন, তাঁদের প্রতি আমার সমবেদনা। আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি।’’ লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী বলেছেন, ‘‘এই শোকের মুহূর্তে আমি বেঙ্গালুরুর মানুষের সঙ্গে আছি। কর্নাটক সরকারের উচিত ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলিকে সম্ভাব্য সকল সহায়তা প্রদান করা। যাঁরা প্রিয়জনকে হারিয়েছেন, তাঁদের প্রতি সমবেদনা রইল।’’ কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গেও শোকপ্রকাশ করেছেন সমাজমাধ্যমে। লিখেছেন, ‘‘আরসিবির জয়ের উদ্যাপনের সময়ে যে মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে, আমি তাতে গভীর শোকাহত। মৃতদের পরিবারের প্রতি আমার সমবেদনা জানাচ্ছি। আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি।’’