Advertisement
E-Paper

ধর্মের বিভাজন থেকে কি সত্যি মুক্ত রাখার চেষ্টা হয়েছিল সংবিধানকে? প্রশ্ন জয়পুরে

২০০৯-এর অতিচর্চিত নির্বাচনের সময়ে বার বার খবরে আসা নির্বাচন কমিশনার নবীন চাওলার সঙ্গে তর্কে মাতলেন রাজস্থানের প্রাক্তন রাজ্যপাল মার্গারেট আলভা এবং লেখক মাধব খোসলা।

সুচন্দ্রা ঘটক

শেষ আপডেট: ২৫ জানুয়ারি ২০২০ ১৯:৪৭
জয়পুরে শনিবার আলোচনাসভায় ডান দিক থেকে নবীন চাওলা, মার্গারেট আলভা ও মাধব খোসলা। ছবি— জয়পুর লিট ফেস্টের টুইটার পেজ থেকে।

জয়পুরে শনিবার আলোচনাসভায় ডান দিক থেকে নবীন চাওলা, মার্গারেট আলভা ও মাধব খোসলা। ছবি— জয়পুর লিট ফেস্টের টুইটার পেজ থেকে।

ভারতীয় কারা, তা নিয়ে তো কতই হইচই হল। কিন্তু সংবিধান কী বলে? সেকুলার হওয়ার অর্থ কী? ভারতীয় সংবিধান কি আদৌ ধর্মনিরপেক্ষ?

শনিবার, তৃতীয় দিনের জয়পুর লিটারেচার ফেস্টিভাল প্রাঙ্গণ উত্তাল হল এমনই সব প্রশ্নে। ২০০৯-এর অতিচর্চিত নির্বাচনের সময়ে বার বার খবরে আসা নির্বাচন কমিশনার নবীন চাওলার সঙ্গে তর্কে মাতলেন রাজস্থানের প্রাক্তন রাজ্যপাল মার্গারেট আলভা এবং লেখক মাধব খোসলা। বর্তমান ভারতের কাযর্কলাপ কতটা সাংবিধানিক, শুরু থেকেই বার বার কথা ঘুরেছে সে প্রশ্নের আশপাশ দিয়ে। সংবিধান যদি নিজেকে সত্যিই ধর্মনিরপেক্ষ বলে, তবে এমন অশান্ত সময় কেন দেখতে হচ্ছে দেশকে? তবে কি সংবিধান না মেনেই কাজ হচ্ছে এত বছর ধরে?

সুপটু লেখক এবং চিন্তক নবীনবাবু তা কখনওই মানতে রাজি নন। তিনি নিজে হাতে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন সামলেছেন। দেশ-বিদেশের নেতাদের প্রশংসা কুড়িয়েছেন বিশেষ নজরে থাকা ২০০৯-এর নির্বাচন ‘শান্তির্পূণ’ ভাবে সামলে। নিজে শান্তিতেই বিশ্বাস করেন। মাদার টেরিজার জীবনীও লিখেছেন তিনি। তবে ক্ষণিকের অশান্তিকে দেশের পরিচয় বলে মানবেন কেন? তিনি শুধু বলেন, ‘‘আমাদের ধৈর্য ধরতে হবে একটু। বুদ্ধি করে দেখতে হবে সব বিষয়। তবে গিয়ে স্থিতি ফিরবে।’’

আরও পড়ুন: ‘খুব কষ্ট হচ্ছে’, বন্দিদশায় ওমর আবদুল্লার ছবি দেখে প্রতিক্রিয়া মমতার

স্থিতি যে ফেরা দরকার তা মানেন তিনি? ঝট করে উড়ে এল প্রশ্ন সঙ্গে বসে থাকা বক্তাদের কাছ থেকেই। যদি সংবিধান সমান হয় সকলের জন্য, তবে স্থিতিশীল থাকবে না কেন পরিস্থিতি? ভারতীয় সংবিধান নিয়ে গবেষণা করা লেখক মাধব খোসলা মনে করেন, সেই দেশভাগের সময় থেকেই এ ভাবে চলে আসছে। কখনও শান্ত, কখনও অশান্ত। কখনও কেউ জেগে ওঠেন, বুঝিয়ে দেন, কোনও পরিস্থিতি সহজ থাকার কথা নয়।

আলোচনা গড়ায় আরও দূর। প্রশ্ন ওঠে, ধর্মনিরপেক্ষ হওয়ার অর্থ কী? সকলকে নিজের নিজের ভগবানকে পুজো করতে দিলেই কি হয়? এসসি-এসটি-র সংরক্ষণের সুযোগ পান কত জন? শুধুই কি ‘নিম্নবর্ণের’ হিন্দুদের জন্য এই সংরক্ষণ? নিম্নবর্গের খ্রিস্টানদের তবে কী সুবিধে দিয়েছে সংবিধান? আলাদা কোনও সুযোগ রয়েছে কি? বিভিন্ন ধর্মের মহিলাদের দিকে তাকিয়েছে তো সংবিধান? ধর্মের বিভাজন, জাতপাতের বিভাজন থেকে কি সত্যি মুক্ত রাখার চেষ্টা হয়েছিল সংবিধানকে? মার্গারেট আলভার বক্তব্য, চেষ্টা হলেও, সে কাজ সহজ নয়। মাধবও তা-ই মনে করেন। কারণ, যাঁরা সংবিধান বানিয়েছেন, তাঁরা সকলেই বড় হয়েছেন এই অঞ্চলে। কারওরই সমস্ত সংস্কারমুক্ত হতে পারার কথা নয়। তাই বার বার সংবিধানকে চ্যালেঞ্জ করেই আরও ‘সুস্থ’ সমাজ গড়ার চেষ্টা করতে হবে। হাল ছাড়লে চলবে না কি?

তবে কি হাল না ছাড়লে এক দিন সত্যি ধর্মনিরপেক্ষ হয়ে উঠবে এ দেশ? সে প্রশ্ন ভবিষ্যতের জন্য তোলা থাকলেও নবীনবাবু মনে করান, ‘‘এ দেশ সাংবিধানিক পথে অবশ্যই চলবে। কথায় কথায় অসাংবিধানিক ধরে নেওয়ার কারণ নেই এখনও এ দেশের মানুষজনের ভাবনাচিন্তাকে।’’ তাঁর বিশ্বাস, এত দুর্দিনও আসেনি এখনও!

এই বিশ্বাসকে ঘিরেই দিনভর নানা আলোচনায় মেতে রইল সাহিত্য-চর্চা ফেস্টিভাল প্রাঙ্গণ। কেউ বললেন নিজের দলিত পরিচয়ের কথা, কেউ বললেন কী ভাবে উত্তর-পূর্ব ভারত নিয়ে চর্চা ভারতীয়দের মধ্যে যোগাযোগ বাড়ানোর দিকেই নিয়ে যাচ্ছে। সংবিধান নিয়ে সাধারণ জ্ঞান যে এ সব আলোচনাকেই অনেক শান্তিপূর্ণ করে রাখতে পারে, তা বার বার ফিরে এল নানা কথায়। এবং দর্শকদের মধ্যে থেকে উড়ে এল ঠাট্টা, সংবিধান-চর্চা যে একেবারেই সাংবিধানিক, সকলের আগে তা মনে রাখা প্রয়োজন!

Jaipur Literature Festival Constitution
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy