গত পাঁচ বছরে দেশে বেকারত্বের হার কেমন, বিশদে জানতে চেয়ে সংসদে পাঁচটি প্রশ্ন তুলেছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এ বার রীতিমতো পরিসংখ্যান সমেত তার জবাব দিল কেন্দ্রের শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রক। সেই হিসাব থেকে বোঝা যাচ্ছে, গত পাঁচ বছরে দেশে সামগ্রিক ভাবে বেকারত্বের হার কমেছে বটে, তবে যুব সমাজের পরিসংখ্যান এখনও খুব একটা সন্তোষজনক নয়।
সারা দেশে বেকারত্বের হার নিয়ে কেন্দ্রের কাছে লিখিত আকারে পাঁচটি প্রশ্ন রেখেছিলেন অভিষেক। তিনি লিখেছিলেন, বেকারত্ব নিয়ে কেন্দ্রের কাছে যদি গ্রাম-শহর, নারী-পুরুষ, যুবসমাজ এবং রাজ্য-ভিত্তিক তথ্য থাকে, তা হলে তা প্রকাশ করা হোক। অন্যথায় কেন এ বিষয়ে বিস্তারিত পরিসংখ্যান নেই, তার জবাব দিক কেন্দ্র। অভিষেকের প্রশ্ন ছিল, গত কয়েক বছরে সামগ্রিক ভাবে দেশে বেকারত্বের হারে কী পরিবর্তন হয়েছে? বিশেষত, নারী ও যুবকদের মধ্যে বেকারত্ব কি উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে? যদি তা হয়ে থাকে, তা হলে তার নেপথ্যে সম্ভাব্য কারণ কী কী? গত পাঁচ বছরে নারী ও যুবকদের কর্মসংস্থানের জন্য ঠিক কতটা উদ্যোগী হয়েছে কেন্দ্র? কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্যই বা কেন্দ্র কী করেছে? তাতে কতজন উপকৃত হয়েছেন?
শ্রম ও কর্মসংস্থান বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী সুশ্রী শোভা করন্দলাজে অভিষেকের প্রশ্নগুলির উত্তর দিয়েছেন। সঙ্গে দেশে বেকারত্বের সাম্প্রতিক পরিসংখ্যানও তুলে ধরেছে শ্রম মন্ত্রক। জানানো হয়েছে, দেশে সামগ্রিক বেকারত্বের হার ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। অন্তত তেমনটাই বলছে দেশে গত পাঁচ বছরের বার্ষিক পিরিয়ডিক লেবার ফোর্স সার্ভে (পিএলএফএস)-এর তথ্য। কেন্দ্র জানিয়েছে, ২০১৯-২০ সালে দেশে ১৫ বছর বা তার বেশি বয়সের ব্যক্তিদের বেকারত্বের হার ছিল ৪.৮ শতাংশ, ২০২০-২১ সালে ৪.২ শতাংশ, ২০২১-২২ সালে ৪.১ শতাংশ, ২০২২-২৩ সালে ৩.২ শতাংশ এবং ২০২৩-২৪ সালে ৩.২ শতাংশ। অর্থাৎ, পাঁচ বছরে দেশে বেকারত্বের হার কমেছে।
আরও পড়ুন:
তবে বেকারত্বের সামগ্রিক হার কমলেও যুবসমাজের বেকারত্বের হার বিশেষ সন্তোষজনক নয়। শ্রম মন্ত্রক জানিয়েছে, ২০১৯-২০ সালে দেশে ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সিদের বেকারত্বের হার ছিল ১৫ শতাংশ, ২০২০-২১ সালে ১২.৯ শতাংশ, ২০২১-২২ সালে ১২.৪ শতাংশ, ২০২২-২৩ সালে ১০ শতাংশ এবং ২০২৩-২৪ সালে ১০.২ শতাংশ। এ ছাড়া, শহর-গ্রাম এবং লিঙ্গভিত্তিক পরিসংখ্যানও প্রকাশ করা হয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, কর্মসংস্থানে মহিলারা পুরুষের চেয়ে পিছিয়ে রয়েছেন। শুধু তা-ই নয়, গ্রামাঞ্চলের মহিলাদের চেয়ে বেকারত্বে এগিয়ে রয়েছেন শহুরে মেয়েরা। ২০১৯-২০ সালে দেশের গ্রামাঞ্চলে ৪.৫ শতাংশ পুরুষ এবং ২.৬ শতাংশ মহিলা কর্মহীন ছিলেন, সেখানে ২০২৩-২৪ সালে তা যথাক্রমে ২.৭ এবং ২.১ শতাংশে এসে ঠেকেছে। ২০১৯-২০ সালে শহরাঞ্চলে কর্মহীন ছিলেন ৬.৪ শতাংশ পুরুষ এবং ৮.৯ শতাংশ মহিলা। ২০২৩-২৪ সালে তা কমে হয়েছে যথাক্রমে ৪.৪ এবং ৭.১ শতাংশ।
তবে কেন্দ্রের দাবি, তারা হাত গুটিয়ে বসে নেই। বরং বেকারত্ব আরও কমাতে পিএম এমপ্লয়মেন্ট জেনারেশন প্রোগ্রাম (পিএমইজিপি), মহাত্মা গান্ধী ন্যাশনাল রুরাল এমপ্লয়মেন্ট গ্যারান্টি স্কিম, স্টার্ট আপ ইন্ডিয়া দীনদয়াল অন্ত্যোদয় যোজনা-র মতো নানা প্রকল্প শুরু হয়েছে। এ ছাড়াও, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিক্ষেত্রে পাঠরতা ছাত্রীদের বিশেষ বৃত্তি প্রদানরে ব্যবস্থা করা হয়েছে। উৎপাদন ক্ষেত্রে কর্মসংস্থান বাড়াতে আনা হয়েছে ‘এমপ্লয়মেন্ট লিঙ্কড ইনসেনটিভ’ (ইএলআই)-এর মতো প্রকল্প।