Advertisement
E-Paper

ভারত-পাক যুদ্ধ হলে সৌদি কি পাকিস্তানের পাশে? না কি নয়া চুক্তির নিশানা অন্য এক দেশ? ‘বন্ধুত্ব’ দিয়েই ব্যাখ্যা রিয়াধের

বুধবার সৌদি আরবে গিয়ে সে দেশের যুবরাজ মহম্মদ বিন সলমনের সঙ্গে দেখা করে প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর করেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। নয়াদিল্লিও এ নিয়ে সতর্ক। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ২১:৩০
(বাঁ দিকে) পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ় শরিফ। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (ডান দিকে)।

(বাঁ দিকে) পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ় শরিফ। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (ডান দিকে)। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

পাকিস্তানের সঙ্গে ‘কৌশলগত এবং পারস্পরিক’ প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে সৌদি আরব। ভারতের সঙ্গেও তাঁদের সম্পর্ক যথেষ্ট বন্ধুত্বপূর্ণ। দুই পরস্পর ‘শত্রু’র সঙ্গে বন্ধুত্ব রেখে কি নির্ঝঞ্ঝাটে এগোতে পারবে পশ্চিম এশিয়ার দেশটি? না কি পাক চুক্তির পর কোনও এক পক্ষকে সমর্থন করা সৌদি আরবের জন্য বাধ্যতামূলক হয়ে পড়ল? আন্তর্জাতিক মহলে তা নিয়ে চর্চা চলছে। বুধবার সৌদি আরবে গিয়ে সে দেশের যুবরাজ মহম্মদ বিন সলমনের সঙ্গে দেখা করে চুক্তি স্বাক্ষর করেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ় শরিফ। নয়াদিল্লিও এ নিয়ে সতর্ক। বিদেশ মন্ত্রক বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

কী আছে এই প্রতিরক্ষা চুক্তিতে?

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে জারি করা বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘এই চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, পাকিস্তান এবং সৌদি আরবের মধ্যে কোনও একটি দেশ যদি অন্য কোনও দেশের আগ্রাসনের শিকার হয়, তবে তা উভয় দেশের উপরেই আঘাত হিসাবে দেখা হবে।’’ আলাদা করে কোনও দেশের নাম এই বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়নি। তবে অনেকেই মনে করছেন, এই চুক্তি ভারতের চিন্তা বাড়িয়ে দিল। পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার জবাবে গত ৬ মে মধ্যরাতে পাকিস্তানে সেনা অভিযান চালিয়েছিল ভারত। পাক জঙ্গিঘাঁটিগুলিকে ধ্বংস করা হয়েছিল। ভবিষ্যতে তেমন পরিস্থিতি আবার তৈরি হলে কি সৌদিকেও পাশে পাবে পাকিস্তান? ভারত-পাক যুদ্ধ আবার বাধলে সৌদি থেকেও পাকিস্তানের সমর্থনে উড়ে আসবে যুদ্ধবিমান?

দিল্লির সঙ্গে বিবাদ নয়

প্রাথমিক ভাবে চুক্তির শর্ত শুনে তেমনটা মনে হলেও বিশেষজ্ঞদের অনেকেরই ধারণা, ভারতের সঙ্গে এত সহজে বিবাদে জড়াতে চাইবে না সৌদি। সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের এই সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তরে সতর্ক জবাব দিয়েছেন সে দেশের আধিকারিক। মেনে নিয়েছেন, ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রেখে চলতে হবে তাঁদের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সৌদির ওই আধিকারিক বলেছেন, ‘‘নির্দিষ্ট কোনও দেশ বা নির্দিষ্ট কোনও ঘটনার জবাব দিতে সৌদি-পাক প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়নি। ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক অনেক দৃঢ় হয়েছে। আগামী দিনে এই সম্পর্কের বাঁধন যাতে আরও শক্ত হয়, আঞ্চলিক শান্তি যাতে বজায় থাকে, আমরা সেই চেষ্টা করব।’’

নিশানায় অন্য দেশ?

অনেকে অবশ্য মনে করছেন, ভারত নয়, বরং পাকিস্তানের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর করে আসলে ইজ়রায়েলকে বার্তা দিতে চাইল সৌদি। চুক্তি স্বাক্ষরের সময়কাল দেখে অনেকে তা মনে করছেন। পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলির মধ্যে একমাত্র ইজ়রায়েল পরমাণু অস্ত্রের অধিকারী। পরমাণু অস্ত্রধর পাকিস্তানকে চুক্তিতে বেঁধে নিয়ে ইজ়রায়েলের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে শক্তি বাড়ল সৌদি আরবের। ইজ়রায়েল দীর্ঘ দিন ধরে পশ্চিম এশিয়ায় যুদ্ধে রত। প্যালেস্টাইনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে তাঁদের যুদ্ধ চলছে। কিছু দিন আগেই মধ্যস্থতাকারী দেশ কাতারের রাজধানী দোহায় তারা হামলা চালিয়েছে। হামাস নেতাদের নিশানা করা হয়েছিল সেই হামলায়। আরব দেশগুলি ইজ়রায়েলের এই আগ্রাসন একেবারেই ভাল চোখে দেখছে না। তাই বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ বলছেন, পাকিস্তানের সঙ্গে সৌদির প্রতিরক্ষা চুক্তি ভারত নয়, ইজ়রায়েলকে প্রচ্ছন্ন বার্তা দিচ্ছে।

ভারত কী বলল

সৌদি-পাক চুক্তি প্রসঙ্গে বৃহস্পতিবার সকালেই ভারতের বিদেশ মন্ত্রক একটি বিবৃতি জারি করেছে। তাতে বলা হয়েছে, ‘‘সৌদি আরব এবং পাকিস্তানের মধ্যে কৌশলগত পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। আমরা সেই সংক্রান্ত রিপোর্ট দেখেছি। এই চুক্তি দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি একটি সমঝোতায় আনুষ্ঠানিক সিলমোহর দেয়। এমন একটি চুক্তির বিষয়ে যে ভাবনাচিন্তা চলছে, আমরা তা আগেই জানতে পেরেছিলাম।’’ বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল আরও বলেন, ‘‘আমাদের জাতীয় স্বার্থ এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে আমরা এই চুক্তির প্রভাব খতিয়ে দেখব। ভারতের জাতীয় স্বার্থরক্ষার ক্ষেত্রে সরকার সর্বদা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।’’

পাক-সৌদি সম্পর্ক

পাকিস্তানের সঙ্গে সৌদি আরবের সম্পর্ক অনেক দিনের। দু’টিই মুসলিমপ্রধান দেশ। পারস্পরিক বিশ্বাস, কৌশলগত স্বার্থ এবং অর্থনৈতিক নির্ভরশীলতা এই দুই দেশের সম্পর্ককে আরও জোরদার করেছে। সৌদিতে সেনা মোতায়েন করে রাখা আছে পাকিস্তানের। অন্তত দেড় থেকে দু’হাজার পাকিস্তানি সেনা সৌদিতে রয়েছে। তারা সৌদির বাহিনীকে প্রযুক্তিগত এবং অন্যান্য সাহায্য করে থাকে। পাকিস্তানকে আবার নিয়মিত ঋণ দেয় সৌদি। পাক অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে সম্প্রতি ৩০০ কোটি ডলারের ঋণ পাকিস্তানের জন্য মঞ্জুর করেছে সৌদি সরকার, যার মেয়াদ ডিসেম্বর পর্যন্তও বৃদ্ধিও পেয়েছে। এ ছাড়া, এই দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক লেনদেনও চলে।

উল্লেখ্য, গত মে মাসে ভারত এবং পাকিস্তান যে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছিল, তাতেও সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছিল সৌদি। দুই দেশকেই শান্তি বজায় রাখার বার্তা দিয়েছিল তারা। সৌদির প্রতিনিধি নয়াদিল্লিতে এসে শান্তির বার্তা দিয়ে গিয়েছিলেন। কথা বলেছিলেন দিল্লির আধিকারিকদের সঙ্গে। ফলে একটা বিষয় স্পষ্ট, ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রেখে চলাই এই দেশটির বিদেশনীতির অন্যতম অঙ্গ। বিশেষজ্ঞদের মতে, পাকিস্তানের সঙ্গে স্বাক্ষরিত প্রতিরক্ষা চুক্তির ক্ষেত্রেও সেই নীতি মেনে চলা হবে। তবে পরিস্থিতি কত দিন অনুকূলে থাকে, সেটাও দেখার।

Pakistan Saudi Arabia Shehbaz Sharif India Pakistan Tension
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy