কেন্দ্রের দাবি মেনে হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজিং সার্ভিসের মাধ্যমে ভুয়ো খবর ছড়ানো রুখতে এ বার কড়া পদক্ষেপ নিল তারা।
ভুয়ো খবর ঘিরে হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীর আশঙ্কা এবং অভিযোগ— দুইয়ের দিকেই এ বার কড়া নজর থাকবে হোয়াট্সঅ্যাপ কর্তৃপক্ষের। ভারতে এক জন গ্রিভান্স অফিসার নিয়োগ করা হয়েছে বলে ঘোষণা করেছেন তাঁরা। এ বিষয়ে কার্যত ভারতের দীর্ঘ দিনের দাবিই মেনে নিলেন তাঁরা।
সাম্প্রতিক অতীতে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে ভুয়ো খবরের জেরে গণপিটুনির মতো একাধিক ঘটনা হয়েছে। ভারতের দাবি ছিল, ওই ধরনের ঘটনায় রাশ টানতে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে ভুয়ো খবর ছড়ানো বন্ধ করা প্রয়োজন। এ নিয়ে হোয়াটসঅ্যাপের নজরদারির প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করে ভারত। ভুয়ো খবর রুখতে হোয়াটসঅ্যাপ কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি আগেই জানিয়েছে কেন্দ্র। সে জন্য একটি গ্রিভান্স অফিসার পদের প্রয়োজনীয়তার কথাও বলে ভারত।
আরও পড়ুন
অমিতাভকে ভোটে দাঁড় করিও না, রাজীবকে বলেছিলেন ইন্দিরা
ভারতে গ্রিভান্স অফিসার পদে কোমল লাহিড়ির নিয়োগের কথা ঘোষণা করেছেন ফেসবুকের মালিকানাধীন ওই মেসেঞ্জার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ। হোয়াটসঅ্যাপের সিনিয়র ডিরেক্টর কোমল গ্লোবাল কাস্টমার অপারেশনস অ্যান্ড লোকালাইজেসনের দায়িত্বে রয়েছেন। সংস্থার ওয়েবসাইটে এই নিয়োগের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া জানানো হয়েছে, হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে যে কোনও ব্যবহারকারী সাহায্য চাইতে পারবেন, ইমেল করে যোগাযোগ করতে পারবেন গ্রিভান্স অফিসার কোমল লাহিড়ির সঙ্গে। যদিও সংবাদ সংস্থা সূত্রের খবর, অগস্টের শেষ ভাগেই এই নিয়োগ করেছে হোয়াটসঅ্যাপ।
আরও পড়ুন
বৃষ্টি নামাতে টায়ার, গাছের ডাল, নুন পোড়ানোর নির্দেশ শোলাপুরের জেলাশাসকের
বিশ্বের মধ্যে হোয়াটসঅ্যাপের সবচেয়ে বড় বাজার রয়েছে ভারতে। এ দেশের ২০ কোটিরও বেশি মানুষ এই মেসেজিং সার্ভিস ব্যবহার করেন। ভুয়ো খবর রুখতে গত জুলাইয়ে বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ করেছেন তাঁরা। একসঙ্গে অনেককে মেসেজ ফরোয়ার্ড করা কমাতে মিডিয়া মেসেজের পাশে কুইক ফরোয়ার্ড বাটনটি সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ওয়াকিবহাল মহলের ধারণা, কেন্দ্রের চাপে পড়েই ওই পদক্ষেপে এক রকম বাধ্য হয়েছে তারা।
গত মাসেই সুপ্রিম কোর্টে হোয়াটসঅ্যাপের বিরুদ্ধে একটি আবেদন জমা পড়েছিল। তাতে বলা হয়েছিল, ভারতের আইনের মোতাবেক চলছে না তারা। এমনকি, ভারতীয় আইন অনুযায়ী সংস্থায় কোনও গ্রিভান্স অফিসারের পদ নেই। সুপ্রিম কোর্ট তখন জানিয়েছিল, ওই আবেদন খতিয়ে দেখা হবে।
আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের আগে ভুয়ো খবরের জেরে গণপিটুনির মতো ঘটনা রুখতে কড়া অবস্থান নিয়েছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে ভুল তথ্য বা ভুয়ো খবর ছড়ালে তাতে সংস্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকেই কাঠগড়ায় তোলা হবে বলে জানিয়েছিল কেন্দ্র। এ নিয়ে হোয়াটসঅ্যাপকে কার্যত হুঁশিয়ারিও দিয়েছিল সরকার। হোয়াটসঅ্যাপ প্রধান ক্রিস ড্যানিয়েলের সঙ্গে বৈঠকে কেন্দ্রীয় তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদও গ্রিভান্স অফিসার নিয়োগের বিষয়ে জোর দিয়েছিলেন। পাশাপাশি, প্রতিটি মেসেজের উৎস নিয়েও হোয়াটসঅ্যাপকে সজাগ থাকতে হবে বলে দাবি করেছিলেন। তবে এ দেশের জন্য গ্রিভান্স অফিসার নিয়োগ করলেও প্রতিটি মেসেজের উৎস খুঁজে বার করার বিষয়ে কেন্দ্রের দাবির কাছে মাথা নত করেনি হোয়াটসঅ্যাপ। সংস্থার দাবি, এতে ব্যবহারকারীর গোপনীয়তার অধিকারে হস্তক্ষেপ করা হবে। সেই সঙ্গে ‘এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন’-এর নীতিভঙ্গও করা হবে।