বিহারের বিধানসভা নির্বাচনে রাষ্ট্রীয় জনতা দলের (আরজেডি) শোচনীয় পরাজয়ের ঠিক পরের দিন পরিবার ত্যাগ করেছেন দলের প্রধান লালুপ্রসাদ যাদবের কন্যা রোহিণী আচার্য। সংবাদমাধ্যমে ঘোষণা করেছেন, ‘‘আমার কোনও পরিবার নেই।’’ কয়েক মাস আগে বাবাকে নিজের একটি কিডনি দান করেছিলেন রোহিণী। এর মধ্যে কী এমন হল যে, পরিবার ছেড়ে বেরিয়ে আসতে হল? দলের পরাজয়ের কারণেই কি এই সিদ্ধান্ত? লালুর পরিবারে ভাঙন ধরালেন কে? বা কারা?
রোহিণী নিজেই দু’টি নাম করেছেন। বলেছেন, ‘‘সঞ্জয় যাদব আর রমীজ়কে গিয়ে জিজ্ঞেস করুন। ওরাই আমাকে পরিবার থেকে বার করে দিয়েছে। ওরা কোনও দায়িত্ব নিতে চায় না।’’ এর সঙ্গে অবশ্য ভাই তেজস্বী যাদবের দিকেও আঙুল তুলেছেন রোহিণী। তেজস্বী এ বার আরজেডির মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী ছিলেন। কিন্তু গত নির্বাচনে যে দল বিহারে ‘এক’ নম্বর ছিল, এ বার তা এক ধাক্কায় তিন নম্বরে নেমে গিয়েছে। আরজেডি পেয়েছে সবমিলিয়ে ২৫টি আসন (বিজেপি ৮৯ এবং জেডিইউ ৮৫)।
তেজস্বী যাদব ঘনিষ্ঠ সঞ্জয় যাদব। —ফাইল চিত্র।
বিহারের রাজনীতিতে তুলনামূলক পরিচিত নাম সঞ্জয় যাদব। তেজস্বীর বিশেষ ঘনিষ্ঠ তিনি। ২০১২ সাল থেকে আরজেডির সঙ্গে রয়েছেন। ২০২৪ সালে দল তাঁকে রাজ্যসভাতেও পাঠিয়েছিল। কিন্তু রমীজ় নামটির সঙ্গে সকলে পরিচিত নন। বিহারের রাজনীতি এবং লালুর পরিবারের অন্দরের খবরাখবর যাঁরা রাখেন, তাঁরা ছাড়া রমীজ়কে তেমন কেউ চেনেন না। এর আগে তিনি কখনও সে ভাবে প্রকাশ্যে আসেননি।
আরও পড়ুন:
বস্তুত, রমীজ়ও তেজস্বীর পুরনো বন্ধু। একসময় পেশায় ক্রিকেটার ছিলেন। ক্রিকেট খেলার সূত্রে তেজস্বীর সঙ্গে তাঁর আলাপ এবং বন্ধুত্ব। সূত্রের খবর, আরজে়ডির সমাজমাধ্যম সামলানোর দায়িত্ব রমীজ়ের হাতে তুলে দিয়েছেন তেজস্বী। দলের প্রচারের কাজও তিনি দেখাশোনা করেন। রমীজ় আসলে উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা। সম্পূর্ণ নাম রমীজ় নেমাত খান। তিনি বলরামপুর লোকসভা কেন্দ্রের প্রাক্তন সাংসদ রিজ়ওয়ান জ়াহিরের জামাই। রমীজ়ের স্ত্রী জ়েবা রিজ়ওয়ানও রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। রমীজ়ের বিরুদ্ধে একাধিক অপরাধের অভিযোগ রয়েছে। এমনকি, খুনের মামলাতেও তিনি অভিযুক্ত। ২০২১ সালে তুলসীপুরে পঞ্চায়েত নির্বাচনে হিংসার অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল। এ ছাড়া, তুলসীপুর নগর পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ফিরোজ় পাপ্পুকে খুনের অভিযোগে রমীজ়, তাঁর শ্বশুর এবং স্ত্রীকে ২০২২ সালে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। ২০২৪ সালের জুলাই মাসে গ্যাংস্টার আইনে ফের গ্রেফতার করা হয় রমীজ়কে। গত এপ্রিলে জামিন পেয়েছেন।
তেজস্বী যাদব ঘনিষ্ঠ রমীজ় খান। —ফাইল চিত্র।
এক সময় দিল্লি এবং ঝাড়খণ্ডের হয়ে পেশাদার ক্রিকেট খেলতেন রমীজ়। ২০০৮-০৯ সালে ঝাড়খণ্ডের অনূর্ধ্ব ২২ দলকে নেতৃত্বও দিয়েছিলেন। সেই সময় থেকে তেজস্বীর সঙ্গেও তাঁর পরিচয়। ২০১৬-তে তিনি আরজেডি-তে যোগ দেন। লালুকন্যা রোহিণীর দাবি, গোটা দেশ যখন আরজেডি-র এই পরাজয়ের কারণ জানতে চাইছে, তখন সঞ্জয় এবং রমীজ়ের নাম নেওয়ায় তাঁকে পরিবারের মধ্যে হেনস্থার শিকার হতে হয়েছে। এমনকি, মারধরের অভিযোগও তুলেছেন তিনি। বলেছেন, ‘‘গোটা দেশ জানতে চায়, দল কেন এ ভাবে হেরে গেল। আর যখন আপনি সঞ্জয় যাদব, রমীজ়ের নাম নেবেন, আপনাকে বাড়ি থেকে বার করে দেওয়া হবে, অপমান করা হবে, এমনকি মারাও হবে।’’ এর চেয়ে বেশি কিছু আর বলতে চাননি লালুকন্যা। তবে পারিবারিক ভাঙনের নেপথ্যে এই দুই নামের ভূমিকা যে রয়েছে, তা তাঁর এই বক্তব্য থেকেই স্পষ্ট।