পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার জবাবে পাকিস্তানকে প্রত্যাঘাত করেছে ভারত। সেনার এই অভিযানের নাম দেওয়া হয়েছে ‘অপারেশন সিঁদুর’। বুধবার সকালে সাংবাদিক বৈঠক করে এ সংক্রান্ত ব্যাখ্যা দিয়েছে ভারতীয় সেনা। সাংবাদিক বৈঠকে বিদেশসচিব বিক্রম মিস্রীর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন দুই অগ্নিকন্যাও। একজন কর্নেল সোফিয়া কুরেশি, অন্য জন উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিংহ। কী ভাবে পাকিস্তানের জঙ্গি ঘাঁটিগুলিকে নিশানা করে করে ধ্বংস করা হয়েছে, সেই ব্যাখ্যাই দিয়েছেন দু’জনে।
ব্যোমিকা নামের অর্থ আকাশকন্যা। কী অদ্ভূত সমাপতন! এ হেন মেয়ে যে বড় হয়ে আকাশে উড়ে বেড়াবেন, তাতে অবাক হওয়ার মতো কিছু নেই। ছোটবেলা থেকেই আকাশে ও়ড়ার স্বপ্ন দেখতেন ব্যোমিকা। ইচ্ছা ছিল, বড় হয়ে ভারতীয় বায়ুসেনায় যোগ দেবেন। স্কুলজীবন থেকেই ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর (এনসিসি)-এর অংশ ছিলেন ব্যোমিকা। স্কুলের পর ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে স্নাতক স্তরের পড়াশোনা শেষ করেন। তার পর পড়াশোনার পাট চুকিয়ে ২০০৪ সালে যোগদান করেন সশস্ত্র বাহিনীতে। প্রথমে ভারতীয় বায়ুসেনায় হেলিকপ্টার পাইলট হিসাবে কাজে যোগ দেন। তার পর ২০১৭ সালে উইং কমান্ডার পদে বহাল হন। উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় ২,৫০০ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে ওড়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে ব্যোমিকার। জম্মু-কাশ্মীর এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের বহু দুর্গম অঞ্চলে ‘চেতক’ বা ‘চিতা’র মতো হেলিকপ্টার উড়িয়েছেন তিনি।
আরও পড়ুন:
ব্যোমিকা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন একাধিক উদ্ধার অভিযানেও। ২০২০ সালের নভেম্বরে অরুণাচল প্রদেশে ব্যোমিকার নেতৃত্বে একটি উদ্ধার অভিযান হয়েছিল। অত্যধিক উচ্চতা এবং রুক্ষ আবহাওয়ার কারণে এই অভিযানটি ছিল অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। তাতেও সফল হয়েছিলেন আকাশকন্যা। এত কিছুর পাশাপাশি পর্বতারোহণেরও অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর। ২০২১ সালে ব্যোমিকা মাউন্ট মনিরং (২১,৬৫০ ফুট)-এ আরোহণ করেন। সেই অভিযানে ছিলেন ভারতীয় সেনার তিন শাখার মহিলা প্রতিনিধিরাও।
গত ২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ে পর্যটকদের উপর জঙ্গি হামলার ঘটনায় ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছিল। ওই ঘটনায় পাকিস্তানকে দায়ী করে একাধিক পদক্ষেপ করে ভারত। তার জবাবে মঙ্গলবার মধ্যরাতে পাকিস্তান এবং পাক অধিকৃত কাশ্মীরের বেশ কিছু অংশে প্রত্যাঘাত করা হয়। ভারতীয় সেনার দাবি, পাকিস্তানের ন’টি জায়গায় হামলা চালানো হয়েছে। যদিও প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের প্রকাশ করা সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে কোনও শহরের নাম উল্লেখ করা হয়নি। মন্ত্রকের দাবি, যে সব জায়গায় বসে ভারতে সন্ত্রাসবাদী হানার পরিকল্পনা হয়েছিল এবং নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, সেখানেই ভারত আঘাত হেনেছে। এ-ও জানানো হয়েছে, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর কোনও পরিকাঠামোয় আঘাত হানা হয়নি। কোনও সাধারণ নাগরিকেরও ক্ষতি হয়নি। বুধবার সকালে এই ‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে সেনার তরফে যে সাংবাদিক বৈঠক করা হয়েছিল, তাতে ছিলেন বিদেশসচিব বিক্রম মিস্রী। তাঁর সঙ্গেই দুই মহিলা অফিসার ছিলেন, যাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন ব্যোমিকা। কী ভাবে কোথায় কোথায় হামলা চালানো হয়েছে, তিনি সাংবাদিকদের সামনে তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন।