Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
অসম

কার দখলে ক্ষমতা, অঙ্ক কষছেন নেতারা

মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ গুয়াহাটিতে কার্যত নিজেকে ‘গৃহবন্দি’ রেখেছেন। আফ্রিকা সফর থেকে ফিরে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে দিল্লির হাসপাতালে ভর্তি প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অঞ্জন দত্ত। ভাঙাগড়ে রাজীব ভবনেও তেমন ভিড় চোখে পড়ছে না।

নিজস্ব সংবাদদাতা
গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ১৯ মে ২০১৬ ০৩:০৮
Share: Save:

মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ গুয়াহাটিতে কার্যত নিজেকে ‘গৃহবন্দি’ রেখেছেন। আফ্রিকা সফর থেকে ফিরে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে দিল্লির হাসপাতালে ভর্তি প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অঞ্জন দত্ত। ভাঙাগড়ে রাজীব ভবনেও তেমন ভিড় চোখে পড়ছে না।

বুথ-ফেরত সমীক্ষা অগ্রাহ্য করে কংগ্রেস নেতাদের বক্তব্য আসছে শুধু ই-মেল বিবৃতিতে।

ছবিটা একেবারে অন্য হেঙেরাবাড়িতে বিজেপির সদর দফতরে। সেখানে চলছে মন্ত্রিসভা গড়ার তোড়জোড়। নির্বাচন কমিশন বিজয় মিছিলে বিধিনিষেধ চাপালেও উৎসবের আয়োজনে এখন থেকেই সাজো-সাজো রব। সর্বানন্দ সোনোয়ালের মুখ্যমন্ত্রী হওয়া নিয়ে খানিক চাপান-উতোর থাকলেও এখন স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, জোটের মুখ্যমন্ত্রী হচ্ছেন সোনোয়ালই।

হাতিগাঁওতে চলছে অন্য সমীকরণ। এআইইউডিএফ প্রধান বদরুদ্দিন আজমল বুথ ফেরত সমীক্ষা উড়িয়ে এখনও দাবি করছেন, তাঁরা অন্তত ৩৫টি আসন পাচ্ছেন। অগপকে দলে টেনে তৃতীয় মোর্চার সরকার গড়তে আজমলের বাজি প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্ল মহন্ত। অগপ নেতা মহন্তকে ইতিমধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাব দিয়ে রেখেছেন তিনি।

আমবাড়িতে অগপর সদর দফতরে কিন্তু আপাতত অনিশ্চয়তার নীরবতা। এক দিকে দলের সভাপতি অতুল বরা বলছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী নিয়ে বিজেপিই সিদ্ধান্ত নেবে।’’ অন্য দিকে মুখ্যমন্ত্রী কে হবেন তা ঠিক হয়নি বলে বিতর্ক জিইয়ে রেখেছেন মহন্ত। পুরোপুরি বিজেপির কাঁধে ভর করে নির্বাচন লড়ার পরে অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থে এ বার শাসক দলের শরিক থাকতে চাইছে দল। যদিও মহন্ত এ দিন সাংবাদিক সম্মেলন করে দাবি করেন, তাঁর নাম ব্যবহার করে রাজনৈতিক চক্রান্ত চালানো হচ্ছে।

ফল ঘোষণার ২৪ ঘণ্টা আগে এটাই অসমের রাজনৈতিক পরিস্থিতির ‘কোলাজ’!

আগামী কাল ১২৬টি কেন্দ্রে ১ হাজার ৬৪ জন প্রার্থীর ভাগ্য জানা যাবে। ৫১টি ভোটগণনা কেন্দ্রে প্রস্তুতি ও নিরাপত্তা তুঙ্গে। রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী অফিসার বিজয়েন্দ্র জানান, আগামী কাল সকাল ৮টা থেকে শুরু হবে গণনা। ১ হাজার ৭৭১টি গণনা টেবিলে ৫ হাজার ৩১৩ জন গণনাকর্মী থাকছেন। সব কেন্দ্রে থাকছে ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা।

২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস মোট ভোটের ৩৯.৩৯ শতাংশ পেয়েছিল। আসন পেয়েছিল ৭৮টি। প্রধান বিরোধী দল এআইইউডিএফ ১২.৫৭ শতাংশ ভোট ও ১৮টি আসন পায়। বিজেপি ১১.৪৭ শতাংশ ভোট-সহ মাত্র ৫টি আসন পেয়েছিল। অগপর আসন ছিল ১০টি, ভোটের শতকরা হিসেব ১৬.২৯। বিপিএফ ৬.১৩ শতাংশ ভোট পায়। আসন পায় ১২টি। কিন্তু মোদী ঝড়ের প্রভাবে ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস ২৯.৬০ শতাংশ ভোট ও মাত্র তিনটি আসন পায়। বিজেপি ৩৬.৫০ শতাংশভোট পেয়েছিল। মোট ১৪টির মধ্যে ৭টি আসনই দখল করে বিজেপি। এআইইউডিএফ ১৪.৮০ শতাংশ ভোট-সহ তিনটি কেন্দ্রে জেতে।

এ বারের বিধানসভায় কংগ্রেস ১২২টি, অগপ ৩০টি, বিজেপি ৮৭টি, এআইইউডিএফটি ৭৪টি, বিপিএফ ১৪টি, সিপিএম ১৯, সিপিআই ১৫, ইউপিপি ১০টি আসনে লড়ছে।

সিংহভাগ বুথ ফেরত সমীক্ষায় রাজ্যে পালাবদলের ইঙ্গিত মিলেছে। অবশ্য মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈয়ের মতে, এক্সিট পোলে আস্থা রাখা চলে না। ২০১১ সালের বুথ ফেরত সমীক্ষাতেও পালাবদলের ইঙ্গিত ছিল। তার উল্টোটাই ঘটে। এ বারও কংগ্রেসই শেষ হাসি হাসবে।

সোনোয়াল দাবি করছেন, ‘‘বুথ ফেরত সমীক্ষা জনমানসেরই প্রতিফলন। আমরা যে মিশন ৮৪-এর লক্ষ্য নিয়ে লড়তে নেমেছিলাম। তা সফল হওয়া সময়ের অপেক্ষা।’’ অবশ্য প্রয়োজনীয় আসন না মিললে বিজেপি এআইইউডিএফের সঙ্গে হাত মেলাতে পারে বলে কানাঘুষো চললেও তা উড়িয়ে দেন সর্বানন্দ। বিজেপি দফতরে এখন চলছে অস্থায়ী মঞ্চ তৈরির কাজ। মিষ্টি, ফুল ও আতসবাজির আগাম অর্ডার দেওয়া হয়েছে।

অগপ সভাপতি অতুল বরা বলছেন, ‘‘জয় যেমন নিশ্চিত। তেমনই, জোটের নেতা বাছাই নিয়েও কোনও অনিশ্চয়তা নেই। আমরা একসঙ্গে লড়েছি। বহু ক্ষেত্রে একত্রে প্রচারও চালানো হয়েছে। প্রথম থেকেই সর্বানন্দ জোটের সর্বসম্মত নেতা।’’

বুথ ফেরতের হিসেব উড়িয়ে দিয়েছেন আজমল। উল্টে তিনি বলেন, ‘‘এমন দু’টি সংস্থা আমার কাছেও এসেছিল। বলেছিল আমাদের হয়ে সমীক্ষা দেখাবে। বোঝাই যাচ্ছে এই সব সমীক্ষা আদপেই নিরপেক্ষ নয়।’’ তিনি জানান, তৃতীয় মোর্চার ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা এখনও অটুট। তিনি অগপকে সঙ্গে নিয়ে সরকার গড়তে ইচ্ছুক। তাই মহন্তকে মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাবও দিয়ে রেখেছেন।

বিজেপি সাংসদ রাজেন গোঁহাই বলেন, ‘‘হয়তো আগে ক্ষমতায় থাকা মহন্ত ফের মুখ্যমন্ত্রী হতে চাইছেন। তা দুর্ভাগ্যজনক।" প্রাক্তন অগপ নেতা ও বর্তমান বিজেপি নেতা অতুল বরা (সিনিয়র) মনে করেন, প্রফুল্ল মহন্ত, উৎপদ দত্তরা হয়তো গোপনে আজমল ও কংগ্রেসের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন।’’ মহন্ত অবশ্য এ দিন দাবি করেন, তিনি মোটেই মুখ্যমন্ত্রী হতে আগ্রহী নন। তাঁর নাম ব্যবহার করে রাজনৈতিক চক্রান্ত চলছে। তাঁর ভাবমূর্তি হানি করার চেষ্টা চলছে। বিজেপি-অগপ জোট না করলে কংগ্রেস সহজেই ফের ক্ষমতা দখল করত। সেই জন্যই যৌথ লড়াই। মুখ্যমন্ত্রী বাছাইয়ের দায়িত্ব বিজেপিরই।

চুপচাপ থাকলেও রাজীব ভবনে কংগ্রেস কর্তারা এখনও বলছেন— আগামী কাল ছবি বদলে যাবে। বুথ ফেরত সমীক্ষা বিজেপির মদতপুষ্ট। এ সব নিছকই আমলা-সরকারি কর্মীদের উপরে চাপ তৈরির চেষ্টা। কংগ্রেস মুখপাত্র অপূর্ব ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘কংগ্রেসই ফের ক্ষমতায় আসতে চলেছে। গত বারের মতো এত বেশি আসন না পেলেও কংগ্রেসের সরকার গড়তে সমস্যা হওয়ার কথা নয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

state assembly election 2016
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE