দু’দফায় ‘ক্লাউড সিডিং’ প্রক্রিয়ার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ হয়েছে দিল্লিতে। আইআইটি কানপুরের তত্ত্বাবধানে চালানো এই পরীক্ষায় তিন কোটি ২১ লক্ষ টাকা খরচ করা হয়েছে। কিন্তু এত চেষ্টার পরেও মঙ্গলবার দিল্লিতে কৃত্রিম বৃষ্টি ঝরেনি। কেন? ব্যাখ্যা দিলেন আইআইটি কানপুরের ডিরেক্টর মণীন্দ্র আগরওয়াল।
মণীন্দ্র বলেন, ‘‘মঙ্গলবার মেঘের আর্দ্রতা ছিল মাত্র ১৫ শতাংশ। মেঘের আর্দ্রতা এত কম থাকলে বৃষ্টির সম্ভাবনা এমনিতেই বেশি থাকে না। তাই আমাদের পরীক্ষা সফল হয়নি।’’ যদিও এই ব্যর্থতাকে ভবিষ্যতের জন্য অভিজ্ঞতা সঞ্চয় হিসেবেই দেখছেন আইআইটি-র ডিরেক্টর। মণীন্দ্রের কথায়, ‘‘মেঘের আর্দ্রতা কম থাকা সত্ত্বেও যখন ক্লাউড সিডিং করা হয়, তখন পরিবেশের উপর অল্প হলেও প্রভাব পড়ে। আশানুরূপ ফলাফল হয়তো মেলে না, তবে কিছু প্রভাব তো পড়েই। এ ক্ষেত্রেও ১৫টি কেন্দ্রের তথ্য সংগ্রহ করে দেখা গিয়েছে, বাতাসে পিএম ২.৫ এবং পিএম ১০-এর ঘনত্ব ৬ থেকে ১০ শতাংশ কমে গিয়েছে।’’ ভবিষ্যতে এই ধরনের পরীক্ষা করতে গেলে এই পর্যবেক্ষণ কাজে লাগবে বলে মনে করছেন গবেষকেরা।
দূষণ রুখতে রাজধানীতে কৃত্রিম ভাবে বৃষ্টি নামানোর পিছনে সম্প্রতি বিপুল পরিমাণ টাকা ঢেলেছে দিল্লি সরকার। মাস কয়েক আগে এ ধরনের পাঁচটি পরীক্ষা করার জন্য কানপুর আইআইটি-র সঙ্গে ৩.২১ কোটি টাকার সমঝোতাপত্র স্বাক্ষরিত হয়। অর্থাৎ, প্রতিটি পরীক্ষামূলক প্রয়োগের জন্য খরচ হওয়ার কথা ৬৪ লক্ষ টাকা! ইতিমধ্যে তিনটি পরীক্ষা হয়ে গিয়েছে। কিন্তু এক বারও বৃষ্টি নামেনি দিল্লিতে। এর পরেই বিশেষজ্ঞদের একাংশের মত, দূষণ রোধে দিল্লিতে কৃত্রিম ভাবে বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং অস্থায়ী পদক্ষেপ। তা ছাড়া, কৃত্রিম বৃষ্টির ফলে বাতাসে দূষণবর্ধক উপাদানের পরিমাণ সাময়িক ভাবে কমলেও কয়েক দিনের মধ্যে ফের দূষণ মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে বলে মনে করা হচ্ছে। সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টের গবেষক অনুমিতা রায়চৌধুরীও বলছেন, ‘‘ক্লাউড সিডিং-এর পরেও দিল্লিতে এখনও উল্লেখযোগ্য বৃষ্টিপাত হয়নি। তবে এটা স্পষ্ট যে, বৃষ্টিতে দূষণবর্ধক উপাদানের পরিমাণ পরিমাণ সাময়িক ভাবে কমলেও দূষণ দ্রুত ফিরবে।’’
আরও পড়ুন:
মঙ্গলবার বেলায় ক্লাউড সিডিং-এর জন্য একটি সেসনা ২০৬এইচ বিমান উত্তরপ্রদেশের কানপুর থেকে দিল্লির উদ্দেশে রওনা দিয়েছিল। গন্তব্য ছিল রাজধানীর উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের খেকরা, বুরারি, ময়ূরবিহার এবং করোলবাগ। সেখানে বিমানের মাধ্যমে মেঘের উপর ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল সিলভার আয়োডাইড জাতীয় রাসায়নিক এবং ভোজ্য লবণ। কৃত্রিম ভাবে বাড়ানো হয় শুষ্ক মেঘের আর্দ্রতা। তার পর কাজ শেষে মেরঠে অবতরণ করে বিমানটি। সাধারণত, এই প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার ১৫ মিনিট থেকে চার ঘণ্টার মধ্যে যে কোনও সময় বৃষ্টি হয়। দিল্লিতে তেমনটা হয়নি। তাতে অবশ্য দমছেন না আইআইটি-র গবেষকেরা। তাঁদের কথায়, ‘‘পরীক্ষার মানেই তো সফল কিংবা অসফল হওয়া! যদি আমরা ব্যর্থতাকে ভয় পাই, যদি আমরা হাত গুটিয়ে বসে থাকি, তা হলে অগ্রগতি কী ভাবে হবে?’’