Advertisement
E-Paper

‘মেঘের বীজ’ বোনা হল, দূষণে অতিষ্ঠ দিল্লি কৃত্রিম বৃষ্টি নামার অপেক্ষায়! ‘বারিশওয়ালা’ হতে পারবে কি আইআইটি কানপুর?

দিন দিন মাত্রা ছাড়াতে থাকা বায়ুদূষণের মোকাবিলা করতে দীর্ঘ দিন ধরেই দিল্লিতে ‘ক্লাউড সিডিং’ করে কৃত্রিম ভাবে বৃষ্টি ঝরানোর কথা ভাবছিল সরকার। এই গুরুদায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল আইআইটি কানপুরকে। গত সপ্তাহে এই প্রক্রিয়ার প্রথম ধাপের পরীক্ষাটি করা হয়।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০২৫ ১৮:০৭
দিল্লির দূষণের চিত্র।

দিল্লির দূষণের চিত্র। ছবি: পিটিআই।

দিল্লির দূষণ কমাতে কৃত্রিম মেঘ তৈরি করে বৃষ্টি ঝরানোর দ্বিতীয় ধাপও সম্পন্ন হয়ে গেল! মঙ্গলবার দিল্লি সরকারের বহু প্রতীক্ষিত ‘ক্লাউড সিডিং’ প্রক্রিয়ার দ্বিতীয় ধাপটি সেরে ফেলা হয়েছে। দিল্লির বুরারি, ময়ূরবিহার এবং করোলবাগে পরীক্ষামূলক ভাবে প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয়েছে। বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, এর জেরে আগামী কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই কৃত্রিম বৃষ্টি নামতে পারে দিল্লিতে।

মঙ্গলবার বেলায় ক্লাউড সিডিং-এর জন্য একটি সেসনা ২০৬এইচ বিমান উত্তরপ্রদেশের কানপুর থেকে দিল্লির উদ্দেশে রওনা দেয়। গন্তব্য ছিল রাজধানীর উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের খেকরা, বুরারি, ময়ূরবিহার এবং করোলবাগ। সেখানে বিমানের মাধ্যমে মেঘের উপর ছড়িয়ে দেওয়া হয় সিলভার আয়োডাইড জাতীয় রাসায়নিক এবং ভোজ্য লবণ। কৃত্রিম ভাবে বাড়ানো হয় শুষ্ক মেঘের আর্দ্রতা। তার পর কাজ শেষে মেরঠে অবতরণ করে বিমানটি। সাধারণত, এই প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার ১৫ মিনিট থেকে চার ঘণ্টার মধ্যে যে কোনও সময় বৃষ্টি হতে পারে। কিন্তু আবহাওয়া দফতরের তথ্য বলছে, বিকেল ৫টার আগে দিল্লিতে বায়ুমণ্ডলের আর্দ্রতা থাকবে মাত্র ২০ শতাংশ। ফলে বিকেলের আগে বৃষ্টি নামানো সম্ভব নয়।

দিন দিন মাত্রা ছাড়াতে থাকা বায়ুদূষণের মোকাবিলা করতে দীর্ঘ দিন ধরেই দিল্লিতে ‘ক্লাউড সিডিং’ করে কৃত্রিম ভাবে বৃষ্টি ঝরানোর কথা ভাবছিল সরকার। এই গুরুদায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল আইআইটি কানপুরকে। বস্তুত তারাই বাস্তবের ‘বারিশওয়ালা’। ঠিক যেমনটি ‘থোড়াসা রুমানি হো জায়ে’ ছবিতে নায়ক নানা পাটকর। বৃষ্টি নামানোর আশ্চর্য ক্ষমতায় উজ্জ্বল। কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর এই পরিকল্পনার সঙ্গে ঘুরে ফিরে এসেছে সেই প্রসঙ্গ।

গত সপ্তাহে এই প্রক্রিয়ার প্রথম ধাপের পরীক্ষাটি করা হয়। সে দিনও কানপুর আইআইটি থেকে রওনা দেয় বিমান। সে যাত্রায় কানপুর থেকে মেরঠ, খেকরা, বুরারি, সাদকপুর, ভোজপুর, আলিগড় হয়ে ফের কানপুরে ফিরে আসে বিমানটি। তবে ওই দিন বাতাসের আর্দ্রতা কম থাকায় কৃত্রিম বৃষ্টি নামানো যায়নি। মঙ্গলবার আবহাওয়া অনুকূল থাকায় সেই সম্ভাবনা রয়েছে। আর যদি তা-ই হয়, তা হলে ঐতিহাসিক এক মুহূর্তের সাক্ষী হয়ে থাকবেন দিল্লিবাসী! প্রথম বার সফল কৃত্রিম বৃষ্টি হবে দেশের রাজধানীতে।

এ বিষয়ে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্ত বলেন, ‘‘আমরা দূষণ রুখতে অনেক দিন ধরে কৃত্রিম বৃষ্টির বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছি। আমরা প্রথম বার পরীক্ষামূলক ভাবে ক্লাউড সিডিং করছি। যদি এই পরীক্ষা সফল হয়, তা হলে দিল্লিবাসীর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি সমাধান বেরিয়ে আসবে। আমি প্রার্থনা করি, এই পরীক্ষা সফল হোক এবং দিল্লি এর থেকে উপকৃত হোক।”

কী এই ক্লাউড সিডিং?

কৃত্রিম মেঘ তৈরি করে বৃষ্টি ঝরানোর পদ্ধতিকে ক্লাউড সিডিং বলে। খরা অধ্যুষিত অঞ্চলে কিংবা কোনও জায়গায় জল সরবরাহ বাড়াতে আশ্রয় নেওয়া হয় কৃত্রিম বৃষ্টিপাতের। যা করা হয় কৃত্রিম মেঘের ‘বীজ বপন’ করে। কৃত্রিম বৃষ্টির অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে প্রথমে আবহাওয়ায় খানিকটা রদলবদল করা হয়। সে জন্য ড্রোন বা বিমানের মাধ্যমে মেঘের উপর ছড়িয়ে দেওয়া হয় সিলভার আয়োডাইড জাতীয় রাসায়নিক, ড্রাই আইস কিংবা ভোজ্য লবণ। এর পর ক্যালশিয়াম ক্লোরাইড এবং ক্যালশিয়াম অক্সাইডের মিশ্রণের প্রলেপ দেওয়া হয় মেঘের গায়ে। এতে শুকনো মেঘের আর্দ্রতা বেড়ে যায়। আয়তনে এবং ওজনেও ভারী হয়ে যায় মেঘগুলি। অবশেষে শুকনো মেঘগুলি জলভরা মেঘে পরিণত হয়। আর তা থেকেই কৃত্রিম ভাবে নামানো হয় বৃষ্টি। কখনও কখনও আবার মেঘের জল কম উষ্ণতায় জমে গিয়ে স্ফটিকের মতো বরফকণায় পরিণত হয়। তখনও একই ভাবে বিমান থেকে রাসায়নিক ছিটিয়ে মেঘের মধ্যে জমে থাকা জল বা বরফকণার অতিশীতল অবস্থা নষ্ট করে দেওয়া হয়। বরফ পরিণত হয় জলকণায়। তাতে মেঘের জলধারণ ক্ষমতা কমে এবং মাধ্যাকর্ষণের প্রভাবে বৃষ্টির ফোঁটা হয়ে তা মাটিতে ঝরে পড়ে।

Cloud Seeding Delhi Delhi Air Pollution IIT Kanpur Artificial Rain
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy