ভারতে আমেরিকার নতুন রাষ্ট্রদূত হিসাবে সার্জিয়ো গোরকে নিয়োগ করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এরিক গার্সেট্টির স্থলাভিষিক্ত হতে চলেছেন তিনি। গার্সেট্টি ২০২৩ সালের মে মাস থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত ভারতের রাষ্ট্রদূত ছিলেন। কিন্তু বয়স এবং অভিজ্ঞতায় আমেরিকার বহু প্রবীণ কূটনীতিককে পাশ কাটিয়ে ট্রাম্প কেন বছর আটত্রিশের সার্জিয়োকে বেছে নিলেন, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই জল্পনা শুরু হয়েছে।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম ‘ব্লুমবার্গ’-এর প্রতিবেদন অনুসারে, সার্জিয়োর ভারত সম্পর্কে অভিজ্ঞতা খুব বেশি নয়। তবে ওই প্রতিবেদনেই বলা হয়েছে, রাষ্ট্রদূত হতে গেলে সংশ্লিষ্ট দেশ সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা রাখতেই হবে, এমনটাও নয়। বহু ক্ষেত্রে আমেরিকার দুই দল (ডেমোক্রেটিক এবং রিপাবলিকান)-এর প্রেসিডেন্টরা দলীয় সমর্থক, তহবিলে অর্থ প্রদানকারী কিংবা ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের ওই পদ দিয়ে পুরস্কৃত করেন। যেমন ভারতে আমেরিকার প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত গার্সেট্টি লস এঞ্জেলসের ডেমোক্র্যাট মেয়র ছিলেন। ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জো বাইডেনের হয়ে প্রচার করেছিলেন তিনি। তবে কি ট্রাম্পও কোনও কাজের প্রতিদানস্বরূপ সার্জিয়োকে ভারতে পাঠালেন?
গত কয়েক দিন ধরেই শুল্ক নিয়ে ভারত-মার্কিন সম্পর্কে টানাপড়েন চলছে। রাশিয়া থেকে অশোধিত তেল আমদানি করার জন্য ইতিমধ্যেই ভারতীয় পণ্যে ৫০ শতাংশ শুল্ক চাপিয়েছে আমেরিকা। রাশিয়ার তেল আমদানি অব্যাহত থাকলে ভারতের উপর অতিরিক্ত জরিমানা ধার্য করারও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ট্রাম্প। এই আবহে সার্জিয়োকে ভারতে পাঠিয়ে ওয়াশিংটন সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বার্তা দিচ্ছে কি না, তা নিয়েও জল্পনা তৈরি হয়েছে। আর এক মার্কিন সংবাদমাধ্যম ‘পলিটিকো’ অবশ্য একটি সূত্রকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বার্তা নিয়ে সার্জিয়ো ভারতে যাচ্ছেন না। তা হলে? এই প্রসঙ্গে অবহিত এক মার্কিন আধিকারিককে উদ্ধৃত করেছে পলিটিকো। তিনি বলেছেন, “নিজের ঘনিষ্ঠ সার্জিয়োকে পাঠিয়ে মোদী সরকারকে জোরালো বার্তা দিতে চলেছেন ট্রাম্প।” একই সঙ্গে তাঁর সংযোজন, “সার্জিয়ো ভারতে আমেরিকার রাষ্ট্রদূত হওয়ার অর্থ, নয়াদিল্লির সঙ্গে বাণিজ্যিক বোঝাপড়াকে গুরুত্ব দিয়েই দেখছে ট্রাম্প প্রশাসন। এ ক্ষেত্রে ট্রাম্পের বার্তা সরাসরি পৌঁছে যাবে নয়া রাষ্ট্রদূতের কাছে।”
আরও পড়ুন:
সার্জিয়োর জন্ম সাবেক সোভিয়েট ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত থাকা উজবেকিস্তানে। ছোটবেলায় তিনি মাল্টা চলে যান। তাঁর পড়াশোনা অবশ্য আমেরিকাতেই। ছাত্রজীবনেই রিপাবলিকান পার্টির কাজকর্মে জড়িয়ে পড়েন তিনি। ট্রাম্পের হয়ে প্রচারকৌশল নির্ধারণ এবং তহবিল সংগ্রহেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল তাঁর। সার্জিয়োকে খুব ভাল বন্ধু বলে নিজেই উল্লেখ করেছেন ট্রাম্প। শুক্রবার সমাজমাধ্যমে তিনি লেখেন, ‘‘সার্জিয়ো দারুণ বন্ধু। বহু বছর ধরে উনি আমার পাশে আছেন। আমার হয়ে নির্বাচনী প্রচারে ছিলেন, আমার বই প্রকাশ করেছেন, আমাদের আন্দোলনকে সমর্থন করে অনেক কাজ করেছেন। আমেরিকার জনগণের কাছ থেকে আমরা যে দায়িত্ব পেয়েছি, তা বাস্তবায়নে সার্জিয়োর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’’ হোয়াইট হাউসের অন্যতম নীতিকৌশলী স্টিভ ব্যাননের মতে, সার্জিয়ো দিন কিংবা রাত, যে কোনও সময় যে কোনও প্রয়োজনে ট্রাম্পের কাছে যেতে পারেন। সার্জিয়োর নিয়োগকে স্বাগত জানিয়েছেন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভান্স। সমাজমাধ্যমে তিনি লেখেন, “আমরা ভারতে দারুণ এক জন রাষ্ট্রদূতকে পাঠাতে চলেছি।”
ভারত এবং দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াকে ‘বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল এলাকা’ বলেছেন ট্রাম্প। জানিয়েছেন, এই অঞ্চলের জন্য তাঁর এমন কাউকে নিয়োগ করা প্রয়োজন ছিল, যাঁকে চোখ বুজে ভরসা করা যায়। রাষ্ট্রদূত হিসাবে সার্জিয়ো ভাল কাজ করবেন, আশা প্রকাশ করেছেন প্রেসিডেন্ট। ভারতে নতুন রাষ্ট্রদূত নিয়োগের সিদ্ধান্ত থেকে দু’টি জিনিস স্পষ্ট। ভারতে নিজের আস্থাভাজন হিসাবে কাউকে চাইছেন ট্রাম্প, যাঁকে তিনি দ্রুত পরামর্শ দিতে পারবেন আবার খোঁজখবরও নিতে পারবেন। দুই, ভারত সম্পর্কে তিনি যে নীতিই নিন না কেন, তা রূপায়ণ করতে ট্রাম্প এমন কাউকে চেয়েছেন, যিনি আগে থেকেই মার্কিন প্রেসিডেন্টের রাজনীতি কিংবা সম্ভাব্য কৌশল সম্পর্কে ওয়াকিবহাল।