Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
National

যুদ্ধ কিন্তু সমাধান নয়, বুঝছি তো?

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে পুরোদস্তুর যুদ্ধে এই উপমহাদেশের প্রাকৃতিক ও মানবসম্পদের কী কী ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে, তার পুঙ্খানুপুঙ্খ সমীক্ষা করেছে তিনটি মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়। সেই গবেষণার ফলাফলেরই কিছু অংশ এখানে তুলে ধরা হল।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ১৮:২০
Share: Save:

যুদ্ধ যুদ্ধ জিগির উঠেছে চার দিক জুড়ে। কেন যুদ্ধে গিয়ে পাকিস্তানে গুঁড়িয়ে দিয়ে আসা হচ্ছে না, এমন প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই। সাধারণ কথায়, বার্তায়, সোশ্যাল মিডিয়ার লেখাপত্রে যুদ্ধ চাই যুদ্ধ চাই ভাব। সবাই নন, হয়ত বেশির ভাগও নন, কিন্তু পাকিস্তানকে যুদ্ধে কুপোকাত্ করে জ্বালা জুড়োতে চাওয়া ভারতবাসীর সংখ্যাটা নেহাত কম নয়। উপেক্ষা করার মতো তো নয়ই। দেখার বিষয় হল, এমন অনেক মানুষ এখন যুদ্ধ চেয়ে গলা তুলছেন যাঁরা সাধারণ ভাবে রোজকার রাজনীতি, বিদেশ নীতি ইত্যাদি বিষয়আশয় নিয়ে মাথাই ঘামান না। পরিস্থিতি এঁদের আবেগকে ঠেলে দিয়েছে যুদ্ধের চাহিদার দিকে।

কিন্তু এঁদের বেশির ভাগই (সবাই নন) সেই গোত্রের মানুষ, যাঁরা পাশের বাড়ির ‘শত্রু’র সঙ্গে লাঠি হাতে নেমে পড়তে চান পরিণতি না ভেবেই। ভারত ও পাকিস্তানের মতো পরমাণু অস্ত্রে রীতিমতো শক্তিশালী দু’টি দেশের মধ্যে যদি যুদ্ধটা হয়, তা হলে এই ভারতীয় উপমহাদেশের পক্ষে তা কতটা বিপজ্জনক হয়ে উঠবে, তা জানেন শুধুই যুদ্ধ-বিশারদরা। তাঁরা বলছেন, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে পুরোদস্তুর যুদ্ধ বাধলে প্রতিবেশী দু’টি দেশেরই অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড ভেঙে চৌচির হয়ে যাবে। যার ফলে দু’টি দেশই পিছিয়ে যাবে অন্তত বেশ কয়েকটি দশক। দুই পরমাণু শক্তিধর প্রতিবেশী রাষ্ট্রের মধ্যে পুরোদস্তুর যুদ্ধ হলে তা শুধু এই উপমহাদেশের পক্ষেই নয়, গোটা দক্ষিণ এশিয়া বা এশিয়ার পক্ষেই অত্যন্ত ক্ষতিকারক হবে।

তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়- রাটগার্স বিশ্ববিদ্যালয়, কলোরাডো-বোল্ডার ও লস এঞ্জেলেসের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মিলিত গবেষণা এমনটাই জানাচ্ছে। ওই গবেষণা বলছে, বিশ্বের মোট জনসংখ্যার এক-পঞ্চমাংশ যেখানে থাকেন, সেই ভারতীয় উপমহাদেশের ভবিষ্যতটা একেবারেই অন্ধকার হয়ে যাবে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে পুরোদস্তুর যুদ্ধ বাধলে। দু’টি প্রতিবেশী দেশ মিলেজুলে যদি কম করেও ১০০টি পরমাণু অস্ত্র সেই যুদ্ধে ব্যবহার করে (যা দুই দেশের মোট পরমাণু অস্ত্রের অর্ধেক), তা হলে সরাসরি এই উপমহাদেশে দু’কোটি ১০ লক্ষেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারাবেন। গুরুতর জখম বা সারা জীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে যাবেন কম করে আরও ৫০ লক্ষ মানুষ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুরোদস্তুর যুদ্ধ বাধলে দু’টি দেশই খুব বড় বিপর্যয়ের মধ্যে পড়বে। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে পুরোদস্তুর যুদ্ধ হলে যে শুধুই প্রচুর রক্তপাত আর প্রাণহানি হবে তাই নয়, দু’টি দেশেরই প্রাকৃতিক ও মানবসম্পদের প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি তো হবেই, বেশ কয়েকটা দশক পিছিয়ে যাবে ভারত ও পাকিস্তান।

তিনটি মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই গবেষণা বলছে, মহাজাগতিক রশ্মি ও অতিবেগুনি রশ্মির মতো অত্যন্ত ক্ষতিকারক রশ্মিগুলির হাত থেকে আমাদের প্রতি মূহুর্তে বাঁচিয়ে রাখে পৃথিবীর ওপর চাদরের মতো বিছিয়ে থাকা যে ওজোন স্তর, তার অর্ধেকটাই ধুয়ে-মুছে সাফ হয়ে যাবে এই উপমহাদেশে দুই পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্রের যুদ্ধে। সেই যুদ্ধের ফলে ভয়াল ভূমিকম্প, বন্যা, দাবানল ও অগ্ন্যুৎপাতের মতো সর্বগ্রাসী প্রাকৃতিক মহা-দুর্যোগের ঘটনাগুলি তো বেড়ে যাবেই, গোটা উপমহাদেশে অচিরেই নেমে আসবে পারমাণবিক শৈত্য। যার ফলে বর্ষার একেবারে দফারফা হয়ে যাবে। আর তার জেরে বিশ্বজুড়েই ক্ষতিগ্রস্ত হবে চাষবাস। লক্ষ লক্ষ বর্গ কিলোমিটারের ক্ষেতের ফসল নষ্ট হয়ে যাবে। সেই ভয়াবহ যুদ্ধ আর পরমাণু যুদ্ধের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া এড়াতে শুধু এই দু’টি দেশই নয়, উপমহাদেশের একটি বড় অংশ থেকে ছিন্নমূল হয়ে শরণার্থী হয়ে যেতে হবে বহু শিশুকে। তার ফলে, বিশ্বে শিশু শরণার্থীদের সংখ্যাটা অন্তত ১০ গুণ বেড়ে যাবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘‘ইরাক, আফগানিস্তান ও সিরিয়া যুদ্ধই প্রমাণ করে দিয়েছে, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে পুরোদস্তুর যুদ্ধটা হলে সবচেয়ে বড় সমস্যাটি হবে- শিশু শরণার্থীজনিত সমস্যা। ওই তিনটি যুদ্ধ যে পাঁচ কোটি শরণার্থীর জন্ম দিয়েছে, তার ৭৫ শতাংশই শিশু শরণার্থী। ‘ইউনিসেফ’-এর একটি সমীক্ষা রিপোর্ট জানাচ্ছে, গত ১০ বছরে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে বিভিন্ন দেশে দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধের ফলে ইতিমধ্যেই অন্তত তিন কোটি শিশুকে দেশ ছাড়তে বাধ্য হতে হয়েছে। আর বিশ্বের সেই শিশু শরণার্থীর তিন-চতুর্থাংশই এসেছে মূলত ১০টি দেশ থেকে। সেই তালিকায় প্রথমেই রয়েছে আফগানিস্তান। আর তার পরের দু’টি স্থান সিরিয়া ও ইরাকের।’’

ফলে, ভারত ও পাকিস্তানের যুদ্ধে এই উপমহাদেশের ক্ষয়ক্ষতির খতিয়ানটা রীতিমতো ভয়াবহ হবে, এমনটাই দাবি তিনটি মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই যৌথ গবেষণায়।

আরও পড়ুন- প্রত্যাঘাতেই থামছে না ভারত, এ বার নতুন ছকে লড়াই

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE