Advertisement
E-Paper

রাস্তায় প্রসব সোনামণির, আর্তি শুনেও মুখ ফিরিয়ে থাকল লাতেহার

জাতীয় সড়কের ধারে খোলা আকাশের নীচে সদ্য প্রসব হওয়া সন্তানকে নিয়ে শুয়ে রয়েছেন মা সোনামণি। যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছেন তিনি। পাশে বসে অসহায় আরও তিনটি ছোট ছোট সন্তান। পথচলতি মানুষ আছে, কিন্তু কেউই ফিরে দেখছে না। এমনই অমানবিক দৃশ্যের সাক্ষী হয়ে থাকল ঝাড়খণ্ডের লাতেহার।

আর্যভট্ট খান

শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:১৬
সদ্যোজাতকে নিয়ে রাস্তার ধারে আশ্রয় নিয়েছেন সোনামণি। — নিজস্ব চিত্র

সদ্যোজাতকে নিয়ে রাস্তার ধারে আশ্রয় নিয়েছেন সোনামণি। — নিজস্ব চিত্র

জাতীয় সড়কের ধারে খোলা আকাশের নীচে সদ্য প্রসব হওয়া সন্তানকে নিয়ে শুয়ে রয়েছেন মা সোনামণি। যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছেন তিনি। পাশে বসে অসহায় আরও তিনটি ছোট ছোট সন্তান। পথচলতি মানুষ আছে, কিন্তু কেউই ফিরে দেখছে না। এমনই অমানবিক দৃশ্যের সাক্ষী হয়ে থাকল ঝাড়খণ্ডের লাতেহার।

ওড়িশার কলাহান্ডির দানা মাঝি তাঁর স্ত্রীর দেহ ঘাড়ে করে বহু পথ হেঁটে বাড়ি নিয়ে গিয়েছিলেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় সে ছবি দেখে দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় বয়েছিল। আর লাতেহারের হেসলা গ্রামের সোনামণি, ৭৫ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে খোলা আকাশের নিচেই পুত্র সন্তানের জন্ম দিলেন। বহু কাকুতি মিনতিতে তাঁকে ১০০ মিটার দূরের হাসপাতালে পৌঁছতে কেউ এগিয়ে আসেনি।

পূর্ণ গর্ভবতী সোনামণি তাঁর তিন সন্তানের আধার কার্ড তৈরি করানোর জন্য হেসলা গ্রাম থেকে বেরোন গত কাল দুপুরে। তাঁর এক আত্মীয়া, মানু কুমারী বলেন, ‘‘ওই শারীরিক অবস্থার কারণে ওকে একা একা, তিনটে বাচ্চাকে নিয়ে সদরে যেতে নিষেধ করেছিলাম। কিন্তু ও বলল, ওই দিনই ওকে যেতে বলা হয়েছে।’’

স্বামী নন্দকিশোর কাজে চলে যাওয়ায় অন্তঃসত্ত্বা সোনামণি একাই তিনটি বাচ্চা নিয়ে, দশ কিলোমিটার হেঁটে লাতেহারে আসেন। কিন্তু শুক্রবারের সপ্তাহান্তে ততক্ষণে সরকারি অফিসে কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। সন্ধ্যা নেমে যাওয়ায় বাড়ি ফেরার পথে তিনি জাতীয় সড়কের ধারে একটা ধাবায় তিনটি বাচ্চাকে নিয়ে আশ্রয় নেন। রাতে ধাবা বন্ধ হয়ে গেলে তার পাশে একটা গাছের নিচে শুয়ে পড়েন তাঁরা।

আজ লাতেহারের জেলা স্বাস্থকেন্দ্রে শুয়ে সোনামণি জানান, রাত থেকেই তাঁর শরীর বেশি খারাপ করছিল। ভোর বেলা তার প্রচন্ড প্রসব যন্ত্রণা ওঠে। পথচলতি সবার কাছেই তিনি হাতজোড় করে সাহায্য চান। কেউ এগিয়ে আসেনি। শেষে রাস্তার ধারেই তাঁর বাচ্চা হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত কেউ হাসপাতালে খবর দেয়। কোন লাভ হয়নি।

স্থানীয় বাসিন্দা অজয় প্রসাদের অভিযোগ, ‘‘ওই হেলথ সেন্টারের এক অফিসার মর্নিং ওয়াকে বেরিয়েছিলেন। তাঁকে আমরা বিষয়টা জানাই। কিন্তু উনিও আমাদের কথায় কান দেননি।’’ হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত চিকিৎসক সুরেন্দ্রপ্রসাদ সিংহকে খবর দিয়েও লাভ হয়নি। শেষ পর্যন্ত পুলিশের সহায়তায় তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। লাতেহারের এসপি অনুপ বিরথারে বলেন, ‘‘ফোনে গ্রামের লোকদের কাছে শুনেই মহিলাকে লাতেহারের জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিই।’’

হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন বরাতজোর বেঁচে গিয়েছেন ওই মহিলা ও তাঁর সদ্যোজাত। হাসপাতালের ডেপুটি সুপার এস পি সিংহ বলেন, ‘‘মা ও সদ্যোজাত, দু’জনেই এখন ভাল আছে। গত কয়েকদিন ধরে টানা বৃষ্টি হচ্ছে। ভাগ্যিস এ দিন ভোরে বৃষ্টি হয়নি।’’ মাত্র একশো মিটার দূরে থেকেও কেন তৎপরতা দেখায়নি স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি? কেন অ্যাম্বুল্যান্স বা গাড়ি পাঠানো হয়নি? চিকিৎসক সুরেন্দ্র প্রসাদ নীরব। তবে লাতেহার জেলার সিভিল সার্জেন রাজেশ্বর সিংহ গাফিলতির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘‘খবর পাবার পরে গাড়ি পাঠাতে দেরি হয়নি। আমাদের কাছে খবর আসে ছ’টা নাগাদ। আমরা পনেরো মিনিটের মধ্যেই অ্যাম্বুলেন্স পাঠাই। কিন্তু ততক্ষনে ওই মহিলার বাচ্চা জন্মে গিয়েছে। পরে আমাদের অ্যাম্বুল্যান্সেই ওকে জেলা হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়।’’

Ranchi Woman gave birth Child Street
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy