উত্তরপ্রদেশের নয়ডার এক অভিজাত এলাকা থেকে এক মহিলার মুন্ডুহীন নগ্ন দেহ উদ্ধার হয় গত ৬ নভেম্বর। তাঁর দু’টি হাতও কাটা ছিল। অভিজাত এলাকায় এ রকম এক ঘটনায় হুলস্থুল পড়ে যায়। কার দেহ, কোথা থেকে এল, তা নিয়েই তদন্ত চলছিল গত এক সপ্তাহ ধরে। পুলিশ জানিয়েছে, যে মহিলার দেহ উদ্ধার হয়েছে, তিনি পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা। তাঁকে খুন করার অভিযোগ উঠেছে প্রেমিকের বিরুদ্ধে।
তদন্তকারী এক আধিকারিক জানিয়েছেন, ধৃত যুবক ওই মহিলার প্রেমিক। তিনি নয়ডায় বাসচালকের কাজ করতেন। প্রেমিকাকে বাসের ভিতরে খুন করেন বলে প্রাথমিক ভাবে মনে করছে পুলিশ। মহিলার মাথা এবং হাত কেটে নেওয়া হয়। তার পর তাঁর নগ্ন দেহ সেক্টর ৮২-তে একটি নালায় ফেলে দিয়ে যান। তবে পশ্চিমবঙ্গের কোথাকার বাসিন্দা ওই মহিলা এবং তাঁর প্রেমিক, সে বিষয়ে কিছু জানায়নি পুলিশ।
পুলিশ চৌকি থেকে ২০০ মিটার দূরে ওই মহিলার দেহ উদ্ধার হয়। এক সাফাইকর্মী প্রথমে দেহটি নালায় পড়ে থাকতে দেখেন। তিনিই পুলিশে খবর দেন। ফরেন্সিক দল ঘটনাস্থল থেকে নমুনা সংগ্রহ করে। মহিলার কাটা মাথা এবং হাতের খোঁজে তল্লাশি শুরু করে পুলিশ। কিন্তু সেগুলির হদিস পাওয়া যায়নি। অতিরিক্তি ডেপুটি পুলিশ কমিশনার সুমিত শুক্ল জানিয়েছেন, প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, মহিলাকে অন্য কোথাও খুন করে দেহ ফেলে দিয়ে যাওয়া হয়েছে। দেহটি যাতে কেউ শনাক্ত করতে না পারে তার জন্য মাথা এবং হাত কেটে নেওয়া হয়। আশপাশের এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হয়।
গৌতমবুদ্ধ নগরের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার রাজীব নারায়ণ মিশ্র বলেন, ‘‘খুনিকে ধরতে নয়ডায় ৫৫ হাজার গাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়। কয়েক হাজার সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হয়। পুলিশের ৪০টি দলকে দিল্লি, পশ্চিম উত্তরপ্রদেশ এবং সংলগ্ন অঞ্চলগুলিতে পাঠানো হয়েছিল।’’ তিনি আরও জানিয়েছেন, যে এলাকায় মহিলার দেহ উদ্ধার হয়েছে, ওই দিন যে সব গা়ড়ি ওই এলাকা দিয়ে যাতায়াত করেছিল, সেই সব গাড়ির চালককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। কিন্তু বিশেষ সূত্র মেলেনি। তদন্ত এগোতেই একটি বেসরকারি বাসের হদিস পায় পুলিশ। সেই বাসের মালিক এবং চালকের তথ্য বার করা হয়। তার পরই মনু সিংহকে আটক করা হয়। জেরায় মনু দাবি করেন, ওই মহিলা তাঁর প্রেমিকা। আড়াই বছর ধরে সম্পর্ক ছিল তাঁদের। মহিলা বিবাহিত। ২০২৩ সালে স্বামীর সংসার ছেড়ে নয়ডায় চলে আসেন তাঁর দুই সন্তানকে নিয়ে। সেখানেই মনুর সঙ্গে পরিচয় হয় তাঁর।
মনুর দাবি, ওই মহিলা তাঁকে বিয়ে করার জন্য চাপ দেওয়া শুরু করেন। মনুও বিবাহিত। পুলিশ জানতে পেরেছে, ওই মহিলার কাছ থেকে দু’লক্ষ টাকা ধার নিয়েছিলেন মনু। সেই টাকা ফেরত দেওয়ার জন্যও চাপ দিচ্ছিলেন। প্রেমিকাকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেন মনু। তাঁকে বাসে করে ঘুরতে নিয়ে যান। নয়ডার একাধিক জায়গায় ঘোরার পর সেক্টর ৮২-তে পৌঁছোন তাঁরা দু’জনে। সেখানে বাসের ভিতরেই মহিলাকে খুন করেন। মাথা এবং হাত কেটে নেন। তার পর তাঁর দেহ নালায় ফেলে গাজ়িয়াবাদে পালিয়ে যান।