ভিন্দেশি বনাম ভূমিপুত্র। প্রবীণ বনাম নবীন।
উত্তরপ্রদেশের বিধানসভা ভোটে মূল প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপির মুখ তথা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ঠেকাতে কংগ্রেস ও সমাজবাদী পার্টির জোটের প্রচারের মূল সুর আপাতত এটাই। আর এটাতেই বিপাকে পড়ছেন রাজ্যের বিজেপি নেতৃত্ব।
শুরুটা হয়েছিল বিহার ভোটের সময় থেকে। বিহারে বিধানসভা ভোটের প্রচারে গিয়ে মোদী নিজেকে ‘বিহারের লোক’ দাবি করায় পাল্টা প্রশ্ন তুলে লালুর কটাক্ষ ছিল, ‘মোদী যেখানেই প্রচারে যান, সেখানেই দাবি করেন তিনি নাকি ওই রাজ্যের লোক’! বিহার ভোটে বিজেপির হারের পরে অনেকেই বলেছিলেন, লালুর কটাক্ষ ‘কাজে’ দিয়েছে! উত্তরপ্রদেশেঘুরপথে সেই কৌশলকেই ‘কাজে’ লাগাতে চাইছে কংগ্রেস-সপা জোট।
তাদের বলার রসদও আছে। কংগ্রেস-সপা জোটের নেতাদের বক্তব্য, লোকসভা ভোটের সময় উত্তরপ্রদেশের বারাণসী কেন্দ্রের পাশাপাশি গুজরাতের বডোদরা কেন্দ্রেও দাঁড়িয়েছিলেন মোদী। এবং তিনি আসলে গুজরাতেরই লোক। অন্য দিকে উত্তরপ্রদেশের ভোটে তাঁর দুই মূল প্রতিদ্বন্দ্বী কংগ্রেসের রাহুল গাঁধী এবং সপার অখিলেশ যাদব— দু’জনেই উত্তরপ্রদেশের। একজন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, অন্য জন অমেঠী কেন্দ্রের দীর্ঘদিনের সাংসদ।
প্রচারে সুকৌশলে উঠছে বৃদ্ধতন্ত্র বনাম যুব শক্তির লড়াইও। জোট নেতাদের বক্তব্য, ষাটোর্ধ্ব মোদী না মধ্য চল্লিশের রাহুল-অখিলেশ জুটি, নতুন প্রজন্ম না পুরনো প্রজন্ম— এই ভোটে বেছে নিতে হবে উত্তরপ্রদেশের মানুষকে। তাঁদের আশা, নতুন প্রজন্মের দিকেই ঝুঁকবেন ভোটাররা, যাঁদের একটা বড় অংশ যুব সম্প্রদায়ের।
পারিবারিক দ্বন্দ্ব এবং জোট নিয়ে জটের ধাক্কায় মাঝে থমকে যাওয়া প্রচার অভিযান শুরু করে আজ পরোক্ষে সেই বার্তা দিয়েছেন অখিলেশও। সুলতানপুরের সভায় তিনি বলেন, ‘‘কংগ্রেসের সঙ্গে জোট হওয়ায় এখন তো আমরা প্রতিপক্ষকে দাঁড়াতেই দেব না।’’
একই কথা বলছে কংগ্রেসও। প্রচারের তারকা হিসেবে আজ যে জনা ৪০ নাম নির্বাচন কমিশনে জমা দিয়েছে তারা, সেখানে সনিয়া গাঁধী, মনমোহন সিংহের মতো নামের পাশাপাশি আছে রাহুল এবং প্রিয়ঙ্কার নামও। আর তাতেই নতুন করে উজ্জীবিত উত্তরপ্রদেশের জোট-নেতৃত্ব। বিশেষত প্রিয়ঙ্কাকে ঘিরে উত্তরপ্রদেশের কংগ্রেস কর্মীদের আবেগ মাথায় রাখছেন সকলেই। কংগ্রেস অবশ্য স্পষ্ট করে দিয়েছে, উত্তরপ্রদেশে তাদের তারকা প্রচারক একজনই। তিনি রাহুল গাঁধী। জোট সঙ্গী অখিলেশকে সঙ্গে নিয়ে রাহুলই উত্তরপ্রদেশে প্রচার চালাবেন।
উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেসের দায়িত্বপ্রাপ্ত গুলাম নবি আজাদের কথায়, ‘‘প্রার্থী বাছাই থেকে নির্বাচনী প্রচার, জোট গঠন থেকে যৌথ সভার কর্মসূচি— সবই একা হাতে সামলাচ্ছেন রাহুল। দলের প্রচারের মুখ রাহুলই।’’ আসলে উত্তরপ্রদেশে জোট গঠনের কৃতিত্ব প্রিয়ঙ্কা গাঁধীর— এমন প্রচার চালিয়ে ভাই-বোনের মধ্যে বিভাজন ঘটাতে তলেতলে সক্রিয় হয়েছিল বিজেপি। তাদের এই কৌশল ধরতে পেরেই সতর্ক হন কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব। এতে পরিবারের অন্দরে অস্বস্তি তৈরি হওয়ার পাশাপাশি সমর্থকদের কাছেও ভুল বার্তা যেতে পারে বুঝেই তড়িঘড়ি আসরে নামেন তাঁরা। তার পরেই দল আজও ফের স্পষ্ট করে দিল, কংগ্রেসকে জেতানোর প্রশ্নে প্রিয়ঙ্কাও সক্রিয় থাকবেন ঠিকই, কিন্তু তাঁর মূল ভূমিকা হবে রাহুলকে পিছন থেকে সাহায্য করা।
ইতিমধ্যেই ঠিক হয়েছে উত্তরপ্রদেশে ১৪টি জনসভা করবেন রাহুল ও অখিলেশ। কংগ্রেস শিবির বলছে, উত্তরপ্রদেশে মোদীকে রুখতে অতিমাত্রায় সক্রিয় রাহুল। তাই রাজ্য কংগ্রেসের সভাপতি রাজ বব্বরের সঙ্গে যখন সপা নেতৃত্বের সমস্যা তৈরি হয়েছে, তখনই হস্তক্ষেপ করেছেন রাহুল। কংগ্রেসের এক নেতার কথায়, ‘‘জোট প্রশ্নে উভয় শিবিরে যখনই জটিলতা দেখা দিয়েছে, তখনই রাহুল সরাসরি কথা বলেছেন অখিলেশের সঙ্গে।’’ এর ফলে নিচুতলায় কখনও বিভ্রান্তি দেখা দিলেও দু’দলের শীর্ষ স্তরে কখনই বোঝাপড়ার অভাব হয়নি। এমনকী সপার সঙ্গে অজিত সিংহের রাষ্ট্রীয় লোকদলের জোট ভেস্তে যাওয়ার পরে কংগ্রেস তাদের সঙ্গে জোট করবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন রাহুলই। কংগ্রেস বলছে, রাহুলের এই অতিসক্রিয়তা মানে এটা নয় যে উত্তরপ্রদেশে প্রচারে সনিয়া গাঁধী বা প্রিয়ঙ্কার কোনও ভূমিকা নেই। দলের পথপ্রদর্শক হিসেবেই থাকবেন সনিয়া। শারীরিক অবস্থা বুঝে বিহারের মতো প্রচারে নামবেন তিনি। তবে আপাতত অমেঠী ও রায়বরেলীতে মা-ভাইয়ের লোকসভা কেন্দ্রেই নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখতে চাইছেন প্রিয়ঙ্কা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy