ইসলামাবাদে সার্ক সম্মেলনের আর তিন মাস বাকি। তার আগে কাশ্মীর ক্ষত থেকে শুরু করে নিষ্পত্তিহীন পঠানকোট মামলার মতো একাধিক বিষয়কে নিয়ে চলছে দ্বৈরথ। সম্প্রতি পাকিস্তানের মাটিতে দাঁড়িয়ে সন্ত্রাস প্রসঙ্গে কড়া বার্তাও দিয়ে এসেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ।
এই প্রেক্ষাপটেই পেশোয়ারের জেলে বন্দি মুম্বইয়ের ইঞ্জিনিয়ার হামিদ নেহাল আনসারিকে নিয়ে বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের টুইট চলতি টানাপড়েনে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। পেশোয়ারের জেলে খুনের আসামিদের হাতে গুরুতর আহত হয়েছেন হামিদ। ২০১২ সালে ভুয়ো পরিচয়পত্র নিয়ে আফগানিস্তান ঘুরে পাকিস্তানে ঢোকার অভিযোগে তাঁকে গ্রেফতার করেছিল পাকিস্তানের পুলিশ। আজ তাঁর উপর আক্রমণের ঘটনা নিয়ে বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ টুইট করেছেন, ‘‘হামিদ আনসারির উপর ধারাবাহিক আক্রমণের কথা শুনে আমি অত্যন্ত চিন্তিত। পাকিস্তানে আমাদের হাই কমিশনারকে বলেছি সে দেশের সরকারের কাছে আবেদন করতে, যাতে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয়।’’
এই বিষয়ে পাক সরকারের থেকে এখনও পর্যন্ত কোনও সাড়া পাওয়া যায়নি ঠিকই, কিন্তু গোটা বিষয়টিকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। এক সপ্তাহ পর দু’দেশের স্বাধীনতা দিবস। কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, এমন সময়ে সুষমার এই ধরনের অনুরোধ খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। কেননা, বিদেশমন্ত্রী এমন এক ব্যক্তির উপর অত্যাচারের কথা তুলে ধরলেন, যিনি অনুপ্রবেশের অভিযোগে গত চার বছর পাকিস্তানের হাজতে রয়েছেন। কিন্তু তাঁর জন্য প্রকাশ্যে এক বারও স্বর তোলেনি সাউথ ব্লক। তা হলে এই সময়ে ঠিক কেন এমন পদক্ষেপ করতে গেলেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী?
কূটনৈতিক সূত্রের মতে, এটি এক ধরনের পরীক্ষা। এক কূটনৈতিক কর্তার ব্যাখ্যা, ‘‘দু’টি পরমাণু শক্তিধর দেশের মধ্যে সংঘর্ষের উত্তাপ অত্যন্ত বেড়ে গেলে, তাকে কিছুটা প্রশমিত করতে সাধারণত কিছু অটো মেকানিজম কাজ করতে থাকে।’’ অর্থাৎ সরকারি শীর্ষ স্তরে সংঘর্ষের বাতাবরণের মধ্যেও গোপন স্তরে ট্র্যাক-টু বা থ্রি-র কূটনৈতিক প্রয়াস চলতেই থাকে। সব সময়ে তাতে যে কাজ হয়, এমনটা নয়। সুষমার এই বার্তা দেওয়ার ‘সময়’ দেখে কূটনৈতিক শিবিরের মতামত, পাকিস্তান ভারতীয় বিদেশমন্ত্রীর আবেদনে সাড়া দিচ্ছে কিনা, সেটা এখন দেখার বিষয়। রাজনৈতিক শিবিরের একাংশ মনে করছেন, এমনটাও হতে পারে যে বিষয়টি নিয়ে আগে থেকেই নওয়াজ শরিফ সরকারের সঙ্গে ভারতের রাষ্ট্রদূতের কথা হয়ে গিয়েছে। সবুজ সঙ্কেত পাওয়ার পরেই একে প্রকাশ্যে আনতে টুইট করেছেন বিদেশমন্ত্রী। অন্য দিকে পাকিস্তান যদি সুষমার আবেদনে সাড়া না দেয়, তা হলে এটাই ধরে নিতে হবে যে পাক সেনা তথা আইএসআইয়ের চাপের কাছে এখনও মাথা নত করেই রয়েছে সে দেশের শীর্ষ নেতৃত্ব।
প্রকাশ্যে কাশ্মীর নিয়ে তুলকালাম রাজনীতি করলেও নওয়াজ সরকার এটা কখনওই চাইছে না সে দেশের সার্ক-এর অনুষ্ঠান ভেস্তে যাক। অথচ সার্ক-এর নিয়ম অনুযায়ী যে কোনও একটি সদস্য দেশ যদি যোগ দিতে অস্বীকার করে, তা হলে গোটা সম্মেলনই ভেস্তে যায়। ভারতের সঙ্গে সংঘর্ষের স্বর এখন আরও বৃহত্তর জায়গায় নিয়ে যাওয়ার পক্ষপাতী নন নওয়াজ।
সব মিলিয়ে তাই এত দিন অজ্ঞাত থাকা হামিদ নেহাল আনসারির ঘটনা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের প্রশ্নে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠল বলেই মনে করা হচ্ছে।