ভারতীয় বংশোদ্ভূত জ়োহরান মামদানি যখন প্রচার তুঙ্গে নিয়ে মুসলমান নির্যাতনের প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে নিশানা করছেন, বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর-সহ মন্ত্রকের শীর্ষ কর্তারা নিজেদের মধ্যে বৈঠক করেছিলেন। প্রাথমিক ভাবে স্থির হয়েছিল, মামদানির এই প্রচারের সমুচিত জবাব দেওয়া হবে। কূটনৈতিক সূত্রে আজ এই তথ্য জানা গিয়েছে। আরও জানা গিয়েছে, শেষ পর্যন্ত পাল্টা প্রতিক্রিয়া থেকে বিরত থাকে বিদেশ মন্ত্রক। কারণ, কর্তাদের মত ছিল, বিষয়টিকে গুরুত্ব দিলে মামদানি আরও ‘নজর কাড়তে’ পারেন। যদিও মামদানির ভারতে আসার ভিসা প্রত্যাখ্যান করা হতে পারে, এমন সম্ভাবনার কথাও কূটনৈতিক মহলে শোনা যাচ্ছে।
৫০ শতাংশেরও বেশি ভোট পেয়ে নিউ ইয়র্কের মেয়র হওয়ার পর আপাতত মামদানি সবারই নজরে। যা ভারতকে কিছুটা অস্বস্তির মধ্যেই ফেলেছে বলে মনে করা হচ্ছে। প্রচারের সময়ে তাঁর বিরুদ্ধে মোদী সরকারের অভিযোগ ছিল, তিনি মেরুকরণের চেষ্টা করছেন নিউ ইয়র্কে, যেখানে অনাবাসী ভারতীয়ের সংখ্যা বিপুল। আজ মামদানির জয়ের পর সরকারি ভাবে কোনও প্রক্রিয়া দিতে চায়নি নয়াদিল্লি। সাপ্তাহিক সাংবাদিক বৈঠকে প্রশ্ন করা হলে খুবই দায়সারা উত্তর দেওয়া হবে বলে জানা গিয়েছে। বিদেশ মন্ত্রকের এক শীর্ষপর্যায়ের কর্তার কথায়, “আমেরিকার একটি শহরের মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন মামদানি। তাঁর সঙ্গে ভারত-আমেরিকা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের কোনও যোগ নেই। আমরা ওয়াশিংটন ডিসি-র সঙ্গে কাজ করি। কোনও শহরের মেয়রের সঙ্গে নয়। মেয়রের কাজ সেই শহরের নাগরিক সুবিধা-অসুবিধাগুলির দিকে নজর রাখা, তার বেশি কিছু নয়। যেহেতু ভারতীয় অনাবাসী এবং ভারতীয় বংশোদ্ভূত বহু মানুষ ওই শহরে থাকেন, আমরা নিউ ইয়র্ক সিটির সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখব।”
প্রসঙ্গত, প্রচারে দীপাবলির সময়ে কুইন্স-এ বেশ কিছু মন্দিরে গিয়েছিলেন মামদানি। সেখানে মোদীর নাম করে তিনি বলেছিলেন, বহুত্ববাদী যে ভারতকে দেখে বড় হয়েছেন, তা বদলে গিয়েছে। এখন মোদী এবং তাঁর দলের কাছে ‘এক বিশেষ সম্প্রদায়ের’ ভারতীয়রই জায়গা রয়েছে। এই মন্তব্যগুলি সে সময় রক্তচাপ বাড়িয়েছিল ভারতের। তবে আমেরিকায় ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত রণেন সেনের কথায়, “মামদানি ভারতীয় বংশোদ্ভূত ঠিকই কিন্তু তাঁর নিউ ইয়র্কের মেয়র হওয়ার সঙ্গে ভারত-আমেরিকা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ভাল-মন্দের যোগ নেই। ওঁর হাতে বিদেশনীতি বদলের ক্ষমতা নেই। উনি নিজেও শুধুমাত্র আমেরিকা এবং নিউ ইয়র্ক নিয়েই চিন্তিত। তা ছাড়া, উনি যে বক্তৃতাটা দিলেন, তাতে রিপাবলিকান বা ডেমোক্র্যাট কেউই খুব স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবেন এমন নয়। আসলে মামদানি, ট্রাম্প এবং ডেমোক্র্যাট উভয়ের বিরুদ্ধেই কথা বলছেন। উনি অনেকটা আমাদের দেশের কানহাইয়া কুমারের মতো।”
আর এক প্রাক্তন কূটনীতিক পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তীর বক্তব্য, “নয়াদিল্লি নিঃসন্দেহে মামদানিকে খুবই সতর্ক নজরে রাখবে। তবে নির্বাচনী প্রচারের সময় জেতার জন্য অনেকেই অনেক কিছু বলে থাকেন। পরে প্রশাসনে ঢুকে গেলে প্রচারের বিদ্বেষ সে ভাবে থাকে না। মোদী-বিরোধী যে বিবৃতি তিনি দিয়ে গিয়েছেন, তার প্রভাব এই সরকারের অনাবাসী ভোট ব্যাঙ্কের উপর পড়বে কি না সেটা দেখার।”
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)