ভোটগ্রহণ আর গণনা শুধুই সময়ের অপেক্ষা। অসমে ক্ষমতায় আসছে বিজেপিই— আজ রাজ্যে কয়েকটি নির্বাচনী জনসভায় জোরের সঙ্গে এমনই দাবি করলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ।
একটি সংবাদসংস্থা ও সমীক্ষাকারী সংস্থার জনমত সমীক্ষায় ওই ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। তার উল্লেখ করে এ দিন দুলিয়াজন, মাহমরা, থাওরা, মরাণের সমাবেশে রাজনাথ বলেন, ‘‘সমীক্ষা দেখিয়ে দিয়েছে আমরাই রাজ্যে ক্ষমতায় আসছি। কংগ্রেসের দীর্ঘ অপশাসন শেষ করতে আমাদের উপরে আস্থা রাখার জন্য ধন্যবাদ।’’
সব সভাতেই অসমীয়া ভাষায় ‘রঙালি বিহু’র শুভেচ্ছা জানিয়ে ভাষণ শুরু করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। গত কালই বিজেপি নেতাদের ‘ভারতমাতা কী জয়’ স্লোগান নিয়ে আপত্তি তুলে ই-মেল করেছিল আলফা। এ দিনের জনসভায় রাজনাথ ‘জয় আই অসম’ও বলেন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর দাবি, গত দু’বছরে কেউ এনডিএ সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির কোনও অভিযোগ আনতে পারেনি। যে বিশ্বাস রেখে অসমবাসী লোকসভা ভোটে বিজেপিকে জিতিয়েছিল, তা থেকেই এ বার যেন বিজেপি প্রার্থীদের জেতানো হয়।
তাঁর অভিযোগ, স্বাধীনতার পর থেকে কংগ্রেসই সব চেয়ে বেশি দিন অসম শাসন করেছে। তাও রাজ্যে এত বেকারত্ব, অনুন্নয়ন, জল ও বিদ্যুতের অভাব। সেচের ব্যবস্থা হয়নি। তিনি বলেন, ‘‘দেশের সব চেয়ে গরীব রাজ্যগুলির মধ্যে একটি হল অসম।’’
চা বাগান শ্রমিকদের উদ্দেশে রাজনাথ বলেন, ‘‘প্ল্যান্টেশন লেবার অ্যাক্টের সফল রূপায়ণে তরুণ গগৈ কোনও ব্যবস্থা নেননি, তাই বাগানের শ্রমিকদের এত দুরবস্থা। অন্য রাজ্য ও ভিনদেশের পর্যটকরা অসমের চা বাগানের হাল দেখে দেশের সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা নিয়ে ফেরেন। রাজ্যে বিজেপি সরকার এলে চা বাগানের ভোল বদলে দেওয়া হবে।’’
অনুপ্রবেশ নিয়ে কংগ্রেসকে তোপ দেগে তিনি বলেন, ‘‘কংগ্রেস ইচ্ছাকৃত ভাবে অনুপ্রবেশে মদত দিয়েছে। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত সিল করা হয়নি। ওই পথে জাল টাকা ঢুকে দেশে ছড়িয়ে পড়ছে।’’ তিনি জানান, বিজেপি সীমান্ত পুরোপুরি বন্ধ করতে ইতিমধ্যে বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনা করেছে। জাল টাকা রুখতে তিনিও এ বার আরও কঠোর হবেন।
আলফার আঁতুড়ঘর হিসেবে পরিচিত উজানি অসমে রাজনাথ বলেন, ‘‘এখানে এত নাশকতা হয়, তা-ও কংগ্রেস চুপ থাকে। কয়েক মাস আগে আদিবাসী হত্যাকাণ্ডের পর আমি গুয়াহাটি এসে মুখ্যমন্ত্রী ও ইউনিফায়েড কম্যান্ডের সঙ্গে বৈঠকে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলাম। তারপর থেকে জঙ্গিদের দমন করায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে।’’ জঙ্গিদের উদ্দেশে তাঁর বার্তা— ‘শুধু হিংসায় সমাধান হবে না। নাশকতার শিকার গরিবরাই হন। অস্ত্র রেখে আলোচনায় আসুন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে আমি কথা দিচ্ছি সব প্রসঙ্গে কথা বলতে রাজি। কিন্তু হিংসা চালালে আমরাও কঠোর ব্যবস্থা নেব।’
অটলবিহারী বাজপেয়ীর সরকারের সময় ‘ডোনার’ মন্ত্রক তৈরির উল্লেখ করে রাজনাথ জানান, ফের এনডিএ ক্ষমতায় আসতেই মোদী ৩৩ হাজার কোটি টাকা উত্তর-পূর্বের উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘উত্তর-পূর্বে সব রাজ্য একে অন্যের সঙ্গে রেল, সড়ক, ইন্টারনেটে জুড়ে গেলে এখানকার বিকাশ কেউ রুখতে পারবে না।’’ তিনি জানান, বদরপুর-আগরতলা ব্রডগেজের কাজ শেষ। আগরতলা থেকে বাংলাদেশ হয়ে পশ্চিমবঙ্গ পর্যন্ত রেল লাইনের কাজও দ্রুত শেষ করা হবে। জোর দেওয়া হবে নদীপথে পণ্য পরিবহণে। সে জন্য ১৭টি জলপথকে চিহ্নিত করা হয়েছে। রাহুল গাঁধী গত কাল বলেছিলেন— ‘বিজেপি ক্ষমতায় থাকলেই সংঘর্ষ হয়।’ রাজনাথ পাল্টা প্রশ্ন ছোড়েন, ‘‘১৯৮৩ সালে নেলির হত্যাকাণ্ডের সময় কোন সরকার ছিল, ১৯৮৪ সালের সংঘর্ষ, বড়োভূমির সংঘর্ষগুলির সময় অসমে কারা ছিলেন ক্ষমতায়?’’
বয়স নিয়ে ব্যঙ্গ করায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কড়া সমালোচনা করেছিলেন তরুণ গগৈ। তিনি বলেছিলেন, ‘‘মোদী দক্ষ অভিনেতা।’’ তার পরিপ্রেক্ষিতে রাজনাথ এ দিন বলেন, ‘‘আমি মুখ্যমন্ত্রীকে শ্রদ্ধা করি। অভিনেতা মানে অ্যাক্টর। অর্থাৎ যে 'অ্যাক্ট' বা কর্ম করেন। প্রধানমন্ত্রী গত ২২ মাসে শুধুই কাজ করেছেন। তাই মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে অভিনেতা বলে স্বীকৃতিই দিয়েছেন।’’