অসমের এতিহ্যশালী টুপি ‘জাপি’ মাথায় সনিয়া গাঁধী। রবিবার লখিমপুরে। ছবি: রয়টার্স।
একই দিনে অসমের মাটিতে দাঁড়িয়ে একে অন্যকে তীব্র আক্রমণ করলেন লোকসভা ভোটের ময়দানে মূল দু’টি যুযুধান দলের সেনাপতিসনিয়া গাঁধী এবং রাজনাথ সিংহ।
লখিমপুরের জনসভায় বিরোধী বিজেপিকে বিচ্ছিন্নতাবাদী, সাম্প্রদায়িক দল বলে চিহ্নিত করে সমালোচনায় সরব হলেন কংগ্রেস সভানেত্রী। ঠিক তখনই করিমগঞ্জের সমাবেশে বিজেপি শীর্ষ নেতা কঠোর ভাষায় বিঁধলেন সনিয়ার দলকে। তিনি বললেন, “আমাদের কাছে হিন্দু-মুসলিম-শিখ-খ্রিস্টান সবাই এক।
দেশ ভাগের কারিগর কংগ্রেস এখন উল্টে বিজেপির নামেই এ সব অপপ্রচার চালাচ্ছে।”
অসমে আজ একটিই সভা ছিল সনিয়ার। লখিমপুরে। আগামীকাল সেখানেই জনসভা করবেন বিজেপি-র প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদী। রাজনাথের ছিল তিনটিকরিমগঞ্জ, ডিফুর ডকমকা ও তিসসুকার মাকুমে। প্রচারের নিরিখে রাজনাথ সিংহের তিনটি সভার চেয়ে অনেকটা এগিয়ে ছিল সনিয়ার সভা। দলীয় কোঁন্দলের ‘আঁচ’ আর নগণ্য জনসমাগমে সনিয়া বুঝলেন, লখিমপুরের প্রার্থী তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রানি নরহর গতিক খুব একটা সুবিধার নয়।
অসমের তিনিসুকিয়ায় বিজেপি সভাপতি রাজনাথ সিংহ। ছবি: পিটিআই।
কয়েক দিন ধরে লখিমপুর লোকসভা কেন্দ্রের বিধায়কদের বিদ্রোহই সংবাদ শিরোনামে। রানিকে ভোটের টিকিট দেওয়ার প্রতিবাদে এক জোট বলিন চেতিয়া, প্রদান বরুয়া, রাজু সাহু, সুমিত্রা পাতিররা। লখিমপুর-মাজুলির বিভিন্ন জায়গায় রানির বিরুদ্ধে বিক্ষোভও হয়। আগামীকাল লখিমপুর কেন্দ্রে সর্বানন্দ সোনোয়ালের সমর্থনে নরেন্দ্র মোদীর সভা হবে বড় একটি ময়দানে। এমনই পরিস্থিতিতে ভিড় জোটাতে নাজেহাল কংগ্রেস সনিয়ার জন্য বেছে নিয়েছিল ছোট মাঠ। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, ওই সভায় হাজির ছিলেন হাজার পাঁচেক মানুষ।
মাত্র ১০ মিনিট ভাষণ দেন সনিয়া। তিনি বলেন, ‘‘বিপরীত মেরুর দু’টি দলের দুই নেতা দেশের দায়িত্ব পাওয়ার লড়াইতে নেমেছেন। এক দিকে কংগ্রেস। যাঁরা স্বাধীনতার সময় থেকে দেশের জন্য রক্ত ঝরিয়েছে। অন্য দিকে বিজেপি। যারা ঘৃণা-সাম্প্রদায়িকতার তাস খেলে দেশবাসীর রক্ত ঝরিয়েছে।” সনিয়ার কথায়, “বিজেপির কথায়-কাজে আকাশপাতাল তফাৎ। আমরা সব প্রতিশ্রুতি পূরণ করেছি। খাদ্য সুরক্ষা আইন, তথ্য অধিকার আইন চালু করেছি। গরীব ও উপজাতিদের উন্নয়নে আমরা বদ্ধপরিকর। বিপদে আমরাই আপনাদের পাশে ছিলাম।” সরাসরি মোদীর নাম না-করে তিনি বলেন, “বিজেপির প্রতারণায় পা দেবেন না।”
কংগ্রেস সভানেত্রী যখন লখিমপুরে বিজেপির সমালোচনায় মুখর, তখনই করিমগঞ্জে রাজনাথ বলেন, “কংগ্রেসের মতো আমরা ভারতের বিভাজন চাই না। আমাদের চোখে সবাই সমান।” অনুপ্রবেশ-সমস্যা নিয়েও তিনি কংগ্রেসকে কাঠগড়ায় দাঁড় করান। ডিফুর জনসভায় রাজনাথ জানান, বিজেপি কেন্দ্রের ক্ষমতায় এলে স্বশাসিত ডিমা হাসাও এবং কার্বি আংলং রাজ্য নিয়ে ইতিবাচক পদক্ষেপ করবে।
পাক সেনার ভারত সীমান্ত অতিক্রম এবং ভারতীয় জওয়ানদের মাথা কেটে নিয়ে যাওয়ার কথা তুলে ধরেন রাজনাথ। আক্রমণ করেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহকে। বিজেপি সভাপতি বলেন, “মৌন প্রধানমন্ত্রী দেশের মাটিতে বিদেশি শক্তির আগ্রাসন নিয়ে কোনও কথাই বলেননি। অসমের রাজ্যসভার প্রতিনিধিই দেশের প্রধানমন্ত্রী। তবু অসমবাসী কিছুই পাননি।”
গত কাল প্রধানমন্ত্রী অসমে সড়ক ও চা শিল্পের উন্নতির খতিয়ান দিয়ে গিয়েছিলেন। আজ তারই বিরুদ্ধে সরব হন রাজনাথ। ব্রডগেজ ও পূর্ব-পশ্চিম করিডরের কাজ শেষ না-হওয়া এবং চা-শ্রমিকদের মজুরি বৈষম্য নিয়েও তিনি কংগ্রেস, মনমোহনের সমালোচনায় সরব হন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy