Advertisement
E-Paper

ইতিহাসের ময়দানে নয়া অধ্যায় কেজরীর শপথে

ভারতের রাজনীতির ইতিহাসে বারবার ফিরে আসে এক ময়দান, নাম তার রামলীলা। দিল্লির অধিকাংশ ভোটারের মন জিতে পুরনো দিল্লির এই রামলীলাতেই কাল শপথ নেবেন অরবিন্দ কেজরীবাল এবং তাঁর মন্ত্রীরা। পঁচাশি বছরের এই ময়দানটির মুকুটে যুক্ত হবে আরও একটি রঙিন পালক।

অগ্নি রায়

শেষ আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:৪৫

ভারতের রাজনীতির ইতিহাসে বারবার ফিরে আসে এক ময়দান, নাম তার রামলীলা।

দিল্লির অধিকাংশ ভোটারের মন জিতে পুরনো দিল্লির এই রামলীলাতেই কাল শপথ নেবেন অরবিন্দ কেজরীবাল এবং তাঁর মন্ত্রীরা। পঁচাশি বছরের এই ময়দানটির মুকুটে যুক্ত হবে আরও একটি রঙিন পালক।

এই সেই রামলীলা ময়দান, যেখানে বসে এক দিন চোখের জল ফেলেছিলেন স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু। সময়টা ১৯৬৩-র এক সন্ধ্যা। ভারত-চিন যুদ্ধ শেষের আবেগ তখনও ছুঁয়ে আছে দেশকে। শহিদ সেনাদের স্মরণ করে লতা মঙ্গেশকরের সেই প্রবাদপ্রতিম গান ‘অ্যায় মেরে ওয়াতন কি লোগো’ শুনে নিজের আবেগ ধরে রাখতে পারেননি পণ্ডিতজি। সাশ্রু জওহরলাল জড়িয়ে ধরেছিলেন কন্যাসমা লতাকে।

নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর থেকেই রেডিওতে অবিরাম চলছে রামলীলায় যাওয়ার আহ্বান। আম আদমি পার্টি (আপ)-এর তরফে প্রচারে বলা হচ্ছে, ‘এই জয় সবার। সবাই আসুন রামলীলায়। কেজরীবাল একা নন, সবাই মুখ্যমন্ত্রী! শপথ গ্রহণে দিল্লির সব মানুষ হাজির থাকুন!’ সাধারণ ভাবে মুখ্যমন্ত্রীরা শপথ নেন রাজভবনে। এই প্রথা এক বারই ভেঙেছিল তা-ও কেজরীবালের হাতেই। ২০১৩-র ডিসেম্বরে প্রথম দফার মুখ্যমন্ত্রিত্বের সময় এই রামলীলাতেই শপথ নিয়েছিলেন তিনি। তখন এই আপ শীর্ষ নেতা বলেছিলেন, “এই স্থান নির্বাচন আমার কাছে শ্রদ্ধার্ঘ্যের মতো।” দুর্নীতি রুখতে জনলোকপাল বিলের দাবিতে অণ্ণা হজারের আন্দোলনে দিল্লির মানুষ এক দিন ভেঙে পড়েছিলেন এই ময়দানেই। সেই আন্দোলনই জন্ম দিয়েছিল কেজরীবালের। তাই হজারের সঙ্গে মতপার্থক্য থাকা সত্ত্বেও সে দিন কেজরীবাল বলেছিলেন, “আমার গুরু অণ্ণাজিই। ব্যক্তিগত ভাবে তাঁকে ফোন করে থাকতে অনুরোধ করব।”

সওয়া এক বছর অতিক্রান্ত। কেজরীবালও আজ অনেক বিচক্ষণ, আবেগহীন। হজারেকে এ বারে ফোন করে আসতে বলছেন এখনও পর্যন্ত সে খবর নেই। তবে এটা ঠিকই, আম আদমি পার্টির জন্মস্থানের সেই গণ আন্দোলনের স্মৃতিকে সঙ্গে রাখতে চাইছেন বলেই কেজরীবাল এ বারও বেছে নিয়েছেন রামলীলাকে।

রামলীলায় শপথ নেওয়ার ঘটনাটি নিঃসন্দেহে এই ময়দানের লীলায় নতুন এক সংযোজন। এটি যে গোড়া থেকে মাঠ ছিল না, সেটাও মনে করিয়ে দিচ্ছেন কেউ কেউ। ১৯৩০ সালের আগে এখানে ছিল এক বিশাল ঝিল। পরে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর আস্তানা গড়তে সেটি বুজিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু স্বাধীনতার পর এ’টিই হয়ে ওঠে বিভিন্ন গণআন্দোলনের মঞ্চ। ১৯৫২ সালে এখানে জম্মুু ও কাশ্মীর নিয়ে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের সমর্থকদের সত্যাগ্রহ আন্দোলনে চিন্তায় পড়ে গিয়েছিল তৎকালীন কংগ্রেস সরকার। ১৯৬৫ সালে ভারত-পাক যুদ্ধের সময় প্রধানমন্ত্রী লালবাহাদুর শাস্ত্রী বিশাল জনসভা করেছিলেন এই রামলীলায়। তখন সময় ছিল সঙ্কটের। এক দিকে পাকিস্তানের হামলা, অন্য দিকে খাদ্যশস্যের প্রবল অনটন। রামলীলার সেই জনসভাতেই প্রথম আওয়াজ তুলেছিলেন লালবাহাদুর— ‘জয় জওয়ান, জয় কিষাণ’। আবার ব্রিটেনের রানি এলিজাবেথ বিরাট জনতার মুখোমুখি হয়েছিলেন রামলীলাতেই।

ইতিহাস বলছে, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে সমর্থন করে পাকিস্তানকে পরাস্ত করার পর এখানেই বিজয়োৎসব করেছিলেন ইন্দিরা গাঁধী। আবার জরুরি অবস্থা জারির আগে ও পরে, তাঁর বিরুদ্ধে জনরোষের সাক্ষীও এই ময়দানই। ১৯৭৫ সালে জয়প্রকাশ নারায়ণের নেতৃত্বে এখানে জনসভার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ইন্দিরা জরুরি অবস্থা জারি করেছিলেন। গাঁধী, নেহরু, বল্লভভাই পটেল, ইন্দিরা, জয়প্রকাশ, বিশ্বনাথ প্রতাপ সিংহ, অটলবিহারি বাজপেয়ী রামলীলা ময়দানে বক্তৃতা দেননি এমন নেতা বিরল ভারতের ইতিহাসে।

সেই ময়দানের ইতিহাসে এ বার একটি নতুন অধ্যায় যোগ করতে চলেছেন ইতিহাস তৈরি করে জিতে আসা অরবিন্দ কেজরীবাল।

kejriwal oath ceremony
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy