বিজেপি সভাপতি অমিত শাহের সঙ্গে কিরণ বেদী। নয়াদিল্লিতে বৃহস্পতিবার। ছবি: পি টি আই।
দল ভাঙা শুরু হয়েছে আগেই। এ বার বিপক্ষের প্রধান প্রতিপক্ষের প্রশংসা করে মতবিরোধে জড়িয়ে পড়লেন আম আদমি পার্টির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য প্রশান্তভূষণ ও শান্তিভূষণ। ঘটনাচক্রে যাঁরা পিতা-পুত্র।
এমনিতেই আপ নেতা অরবিন্দ কেজরীবালের জনপ্রিয়তার সূচক নিম্নগামী। মতপার্থক্যে দল ছেড়েছেন কেজরীবাল ঘনিষ্ঠ সাজিয়া ইলমি-সহ একাধিক নেতা। প্রচারে সে ভাবে সক্রিয় ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে না কুমার বিশ্বাস, যোগেন্দ্র যাদবের মতো শীর্ষ আপ নেতাদের। এই পরিস্থিতিতে আজ বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী কিরণ বেদী প্রসঙ্গে মতপার্থক্যে জড়িয়ে পড়লেন শান্তি ও প্রশান্তভূষণ।
রাজধানীর মাটিতে কেজরীবালকে টক্কর দিতে বিজেপির বাজি হলেন তাঁরই প্রাক্তন সহযোগী কিরণ বেদী। বিজেপি শিবিরও মনে করছে, দিল্লির বিজেপি নেতারা নন, কেজরীবালকে বধ কেউ যদি করতে পারেন, তা কিরণ বেদীই। শান্তিভূষণ বিজেপির ওই পদক্ষেপকে ‘মাস্টার স্ট্রোক’ বলে হঠাৎই প্রশংসা করে বসেন। তাঁর মতে প্রাক্তন আইপিএস কিরণ বেদী দিল্লির জন্য এক জন যোগ্য মুখ্যমন্ত্রী প্রার্থী। শান্তির ওই বক্তব্যের বিরোধিতায় সরব হন তাঁর ছেলে প্রশান্ত। ছেলে প্রশান্তের বক্তব্য, “শান্তিভূষণের বক্তব্যের সঙ্গে আমি একমত নই। কারণ কিরণ প্রথম থেকেই রাজনীতিতে যোগ দেবেন না বলে এসে হঠাৎ বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হয়েছেন।” বাবা-ছেলের এই কাজিয়া শুরু হতেই মধ্যস্থতায় নেমে পড়ে আপ শিবির। দলের মুখপাত্র দিলীপ পাণ্ডের বক্তব্য, “প্রত্যেকেরই মত প্রকাশের স্বাধীনতা রয়েছে। তার মানে এই নয় যে, আপ শিবির দ্বিধাবিভক্ত।” শান্তিভূষণের বক্তব্যের পিছনে তাঁর উপরে বিজেপি শিবিরের প্রভাব খাটানোর আশঙ্কাও উড়িয়ে দিচ্ছে না আপ নেতৃত্ব।
শান্তিভূষণের মতে, কেজরীবাল বা বেদী মুখ্যমন্ত্রী যেই হোন না কেন, তাতে আখেরে দিল্লিরই লাভ। কারণ অণ্ণা হজারের দুই শিষ্য ব্যক্তিগত জীবনে সৎ। তাঁর আশা এতে অণ্ণা হজারের খুশি হওয়া উচিত। শান্তিভূষণের কথায়, “অণ্ণার দুর্নীতি বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সৈনিক ছিলেন ওই দু’জন। দু’জনের যেই মুখ্যমন্ত্রী হোন না কেন, এক জন সৎ ব্যক্তি অন্তত মুখ্যমন্ত্রী পদে বসবেন।” যাঁর উদ্দেশে শান্তিভূষণ ওই কথা বলছেন, সেই অণ্ণা অবশ্য কাল শুধু বলেন, “কিরণ বেদী সম্পর্কে মন্তব্য করতে চাই না। কারণ রাজনীতি একটা নোংরা জায়গা।” কিরণকে ঘিরে বিজেপির অভ্যন্তরেও বিতর্ক কিছু কম নেই। বেদীকে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী ঘোষণা করার পর থেকেই দিল্লির বিজেপির দফতরে গত তিন দিন ধরে হাঙ্গামা চলছে। যদিও বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ কলকাতা থেকে ফিরেই দিল্লি বিজেপি নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। অমিত শাহ বিক্ষুব্ধদের বলেন, কয়েক মাস ধরে কোনও এক নেতাকে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী করতে ঐকমত্যের চেষ্টা হয়েছিল। সে রকম কাউকে পাওয়া যায়নি, যিনি কেজরীবালকে টক্কর দিতে পারেন। তাই কিরণকেই বেছে নিয়েছে দল।
গত বছরের চেয়ে কেজরীবালের জনপ্রিয়তায় কিছুটা ভাটা পড়লেও, ভোট যত এগোচ্ছে তত শক্তি বাড়াচ্ছেন তিনি। এই অবস্থায় একদা কেজরীবালের সহযোহী কিরণ বেদীকে নিয়ে আসা ছাড়া উপায় ছিল না দলের কাছে। আজ শান্তিভূষণ ঠিক সে কথাটাই বলেছেন। বিজেপি মুখপাত্র সম্বিত পাত্র বলেন, “আপের প্রতিষ্ঠাতা সদস্যই বলছেন যে, কিরণ বেদীকে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী ঘোষণা করা বিজেপির মোক্ষম চাল। এর পরে কেজরীবালের বিশ্বাসযোগ্যতা কোথায় গিয়ে ঠেকল?”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy