Advertisement
E-Paper

কিরণই মুখ দিল্লিতে, মোক্ষম চাল বিজেপির

দলে যোগ দেওয়ার চার দিনের মাথায় সোজা দেশের রাজধানী দিল্লিতে বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হয়ে গেলেন কিরণ বেদী। নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহের উপস্থিতিতে তিন ঘণ্টার বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, কিরণকে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী ঘোষণা করেই ভোটে যাবে কেন্দ্রের শাসক দল। রাত এগারোটায় অমিত শাহ নিজে এই ঘোষণা করে কিরণের জন্য একটি ‘নিরাপদ আসন’ও বেছে দেন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হর্ষ বর্ধনের গড় কৃষ্ণনগরেই কিরণকে প্রার্থী করা হয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০১৫ ০৩:০১
রোড-শোয়ে কিরণ বেদী।  নয়াদিল্লিতে। ছবি: পিটিআই

রোড-শোয়ে কিরণ বেদী। নয়াদিল্লিতে। ছবি: পিটিআই

দলে যোগ দেওয়ার চার দিনের মাথায় সোজা দেশের রাজধানী দিল্লিতে বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হয়ে গেলেন কিরণ বেদী। নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহের উপস্থিতিতে তিন ঘণ্টার বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, কিরণকে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী ঘোষণা করেই ভোটে যাবে কেন্দ্রের শাসক দল। রাত এগারোটায় অমিত শাহ নিজে এই ঘোষণা করে কিরণের জন্য একটি ‘নিরাপদ আসন’ও বেছে দেন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হর্ষ বর্ধনের গড় কৃষ্ণনগরেই কিরণকে প্রার্থী করা হয়েছে। আগামী কুড়ি দিনে গোটা দিল্লি জুড়ে প্রচার করবেন কিরণ। আজ রোড-শো শুরু করে বিজেপি নেতৃত্বকে ধন্যবাদ জানান তিনি।

মহারাষ্ট্র, হরিয়ানা, ঝাড়খণ্ড কিংবা জম্মু-কাশ্মীরমোদী ক্ষমতায় আসার পরে কোনও রাজ্যেই ভোটের আগে মুখ্যমন্ত্রীর মুখ স্থির করে লড়েনি বিজেপি। কিন্তু দিল্লিতে বিজেপির প্রধান প্রতিপক্ষ কংগ্রেস নয়, বরং অরবিন্দ কেজরীবালের মতো এক আঞ্চলিক নেতা। যে কেজরীবাল ক্রমশই তাঁর হারানো জমি শক্ত করতে শুরু করে দিয়েছেন। এই অবস্থায় কলহে দীর্ণ দিল্লি বিজেপি গত কয়েক মাসে কোনও এক নেতার নামে ঐকমত্য করতে পারেনি। অন্য নেতাদের কাছে গ্রহণযোগ্য হবেন এবং কেজরীবালকে টক্কর দিতে পারবেন এমন কোনও নাম পাওয়া যায়নি।

অথচ মোদী ও অমিত শাহের পক্ষে দিল্লির তখ্ত হারানোর ঝুঁকি নেওয়া সম্ভব ছিল না। এই অবস্থায় কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার রাজনীতি করতে কিরণ বেদীর মতো কেজরীবালের একদা সহযোগীকে দলে টেনে মোক্ষম চাল দিতে চেয়েছিলেন এই জুটি।

প্রশ্ন ছিল, কিরণ বেদীকে মুখ্যমন্ত্রীর মুখ হিসেবে তুলে ধরলেও আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা করা হবে কি না? কিন্তু বিজেপি নেতৃত্ব দেখলেন, ঘোষণা না করলে দলের মধ্যে বিদ্রোহ শুরু হচ্ছে। জগদীশ মুখি থেকে দিল্লির বিজেপি সাংসদ মনোজ তিওয়ারি বেসুরো বাজছেন। তাই নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহ স্থির করলেন, ঘোষণা করেই আমনে-সামনে টক্কর হবে প্রতিপক্ষের সঙ্গে। দলে বিদ্রোহকেও খতম করে দেওয়া হবে। তাই আজ ঘোষণার পরে অমিত শাহ নিজেই বললেন, “কিরণ বেদী আসার পরে দলে উৎসাহ জেগেছে। তাঁর নেতৃত্বেই বিজেপি নির্বাচন লড়বে এবং সংগঠনের উঁচু থেকে নিচু তলা পর্যন্ত সকলেই নতুন শক্তিতে লড়াই করবে।”

কিন্তু অমিত শাহ জানেন, বিতর্ক এখানেই থামবে না। কেজরীবালের আম আদমি পার্টি ও কংগ্রেস ইতিমধ্যেই বলতে শুরু করেছে, বিজেপি নেতাদের মধ্যে যোগ্যতা নেই বলেই কিরণ বেদীকে প্যারাসুটে নামানো হয়েছে। ফলে, যে বিজেপির নিজেদের নেতাদের উপরেই ভরসা নেই মানুষ তাদের কী ভরসা করবে?

অমিত শাহকেও তাই ব্যাখ্যা দিয়ে বলতে হয়েছে, অতীতে সমাজের অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তি বিজেপিতে যোগ দিয়ে শীর্ষ পদে থেকেছেন। যেমন উত্তরাখণ্ডে ভুবনচন্দ্র খান্ডুরি। আর আগে শিবরাজ সিংহ চহ্বাণ থেকে বসুন্ধরা রাজে সিন্ধিয়াকে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তুলে ধরেই ভোটে লড়েছে বিজেপি। পুরোটাই দলের রণকৌশল।

কী সেই রণকৌশল?

এক, কেজরীবালের সঙ্গেই অণ্ণা আন্দোলনে ছিলেন কিরণ। ফলে তাঁর স্বচ্ছ ভাবমূর্তি নিয়ে বিরোধীরাও প্রশ্ন তুলতে পারবেন না।

দুই, মোদীভিত্তিক প্রচার হলে কেজরীবাল কটাক্ষ করতেন, প্রধানমন্ত্রী তো আর মুখ্যমন্ত্রী হবেন না। এ বার সেই প্রশ্নের জবাব দেওয়া গেল।

তিন, সংবাদমাধ্যমে কেজরীবালের হাওয়াও গত চার দিনে কেড়ে নিতে পেরেছেন বেদী। সাম্প্রতিক সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, গত চার দিনে কেজরীবালের জনপ্রিয়তায় অল্প হলেও ভাটা পড়ছে।

চার, কিরণের পিছনে হিন্দুত্বের কোনও তকমা নেই। ফলে অনায়াসে তিনি গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করতে পারেন।

পাঁচ, কংগ্রেসের মুখ্যমন্ত্রী মুখ অজয় মাকেনের দিকে যে পঞ্জাবি সম্প্রদায় ঝুঁকছিলেন তাঁদের কাছেও কিরণ গ্রহণযোগ্য।

ছয়, দিল্লিতে মহিলা নিরাপত্তা একটি বড় বিষয়। দেশে প্রথম মহিলা আইপিএস অফিসারকে সামনে রেখে মহিলাদের মন জয় করা সম্ভব।

সাত, কেজরীবালের ৪৯ দিনের সরকার চালানোর অভিজ্ঞতার তুলনায় কিরণ তাঁর ৪০ বছরের প্রশাসনিক অভিজ্ঞতাকে সামনে নিয়ে আসছেন। ফলে, তুল্যমূল্য বিচারেও কিরণ এগিয়ে।

আট, দলের বিক্ষুব্ধদের মুখ বন্ধ করার মোক্ষম উপায় ছিল আনুষ্ঠানিক ঘোষণা। যে কারণে আজ লালকৃষ্ণ আডবাণীর কাছেও সংগঠন সচিব রামলালকে পাঠান অমিত শাহ। আডবাণীও ঘোষণার পক্ষেই সায় দেন।

আডবাণীর সম্মতি নেওয়ার পিছনে অমিত শাহের কৌশল ছিল, দিল্লির বিক্ষুব্ধ নেতাদের আডবাণীর সঙ্গে মিলে ঘোঁট পাকানোর রাস্তা বন্ধ করা।

কেজরীবালের কেন্দ্রে তাঁর মোকাবিলায় দাঁড় করানো হয়েছে বিজেপি যুব মোর্চার নেত্রী নুপুর শর্মাকে। টিকিট পেয়েছেন আম আদমি পার্টির প্রাক্তন নেতা বিনোদ বিন্নি ও আজ কংগ্রেস থেকে বিজেপিতে যোগ দেওয়া প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কৃষ্ণা তিরথও। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের মেয়ে শর্মিষ্ঠার বিরুদ্ধে গ্রেটার কৈলাশ কেন্দ্রে এখনও প্রার্থী ঘোষণা করেনি বিজেপি।

নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহের কৌশলের ফল দেখতে উদগ্রীব রাজধানী।

arvind kejriwal narendra modi kiran bedi delhi assembly election
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy