Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

গোয়েন্দা সমন্বয় বাড়ুক, আর্জি হাসিনার দূতের

খাগড়াগড়ের জমিতে দাঁড়িয়ে আজ জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্নে সরব হয়েছেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। একই সুরে কেন্দ্রের শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে ওই একই বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে গেল ঢাকা। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক পরামর্শদাতা এইচ টি ইমাম তাঁর সদ্যসমাপ্ত নয়াদিল্লি সফরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দেখা করে বর্ধমান কাণ্ডে জামাত ও প্রতিবেশী রাজ্যের যোগাযোগ আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। একই উদ্বেগ তিনি জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের কাছেও।

রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীর সঙ্গে কলকাতায় বাংলাদেশের নবনিযুক্ত ডেপুটি হাইকমিশনার জকি আহাদ। মঙ্গলবার রাজভবনে।- নিজস্ব চিত্র

রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীর সঙ্গে কলকাতায় বাংলাদেশের নবনিযুক্ত ডেপুটি হাইকমিশনার জকি আহাদ। মঙ্গলবার রাজভবনে।- নিজস্ব চিত্র

অগ্নি রায় ও অনমিত্র সেনগুপ্ত
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০১৫ ০৩:২৭
Share: Save:

খাগড়াগড়ের জমিতে দাঁড়িয়ে আজ জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্নে সরব হয়েছেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। একই সুরে কেন্দ্রের শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে ওই একই বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে গেল ঢাকা। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক পরামর্শদাতা এইচ টি ইমাম তাঁর সদ্যসমাপ্ত নয়াদিল্লি সফরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দেখা করে বর্ধমান কাণ্ডে জামাত ও প্রতিবেশী রাজ্যের যোগাযোগ আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। একই উদ্বেগ তিনি জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের কাছেও। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকও মনে করছেন ইমামের ওই আশঙ্কা অমূলক নয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের হাতে আসা একটি রিপোর্টে ভারত বাংলাদেশের সন্ত্রাস-সংযোগ নিয়ে রীতিমতো উদ্বেগজনক তথ্য উঠে এসেছে।

খাগড়াগড় নিয়ে বাংলাদেশের আশঙ্কা অবশ্য নতুন নয়। এর আগে একাধিক বার বাংলাদেশের মন্ত্রীরা ঢাকা থেকে বা নয়াদিল্লি এসে প্রশ্ন তুলেছেন। তথ্য জানতে চেয়েছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনারের কাছ থেকেও। এ ব্যাপারে ভারতীয় গোয়েন্দাদের সম্পূর্ণ সহযোগিতা করার আশ্বাসও দিয়েছিলেন তাঁরা। ওই ঘটনার পরে তিন মাস অতিক্রান্ত। সম্প্রতি ভারত সফরে এসে এই ধরনের ঘটনা যাতে ভবিষ্যতে না ঘটে, সে জন্য দু’দেশের নিরাপত্তা সমন্বয় আরও বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন হাসিনার পরামর্শদাতা ইমাম। পরে তিনি বলেছেন, “বর্ধমান বিস্ফোরণের ঘটনা ও সেটিকে কেন্দ্র করে জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি) ও তাদের ভারতীয় সহযোগীদের গাঁটছড়া বাঁধার বিষয়টি আরও এক বার প্রমাণ করে দিয়েছে যে দু’দেশের মধ্যে নিরাপত্তা সমন্বয় কতটা দরকার। এ ব্যাপারে ভারতকে সব রকম সাহায্য করতে প্রস্তুত বাংলাদেশ।” শুধু পশ্চিমবঙ্গই নয়, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের উন্নয়নের বিষয়েও যে ঢাকা আগ্রহী, সে কথা ভারতীয় নেতৃত্বকে জানিয়েছেন ইমাম। তাঁর কথায়, “ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের উন্নয়নের একটি বড় দিক রয়েছে, যা কিনা নিরাপত্তার সঙ্গে যুক্ত। তা ভুলে গেলে চলবে না।” ইমাম জানান, বাংলাদেশকে এই মুহূর্তে হিংস্র মৌলবাদের শিকার হতে হচ্ছে। সেই মৌলবাদকে বিভিন্ন দেশের ইসলামিক জঙ্গি সংগঠন প্রভাবিত করছে এমন প্রমাণ হাতে এসেছে ঢাকার।

সেই প্রভাব পরিধি বিস্তার করেছে বাংলাদেশ সংলগ্ন অসম ও পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তবর্তী জেলাগুলিতে বলেই মনে করছে কেন্দ্র। খাগড়াগড় কাণ্ডের পর পশ্চিমবঙ্গ, বিহার ও উত্তরপ্রদেশের ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সম্পর্কে তথ্য চায় কেন্দ্র। রাজ্যের উত্তরে সন্তুষ্ট না হওয়ায় এ বিষয়ে খোঁজ নেওয়ার দায়িত্ব পড়ে বিএসএফের উপর। কিন্তু দায়িত্ব যখন হাতে এসেছিল তখনও বোঝা যায়নি চিত্র এতটা গুরুতর। কিন্তু খাগড়াগড় বিস্ফোরণের তদন্তে নেমে ভারত ও বাংলাদেশ সীমান্তে অনুমোদনহীন ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা দেখে চমকে উঠেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। মন্ত্রকের মতে, প্রতিষ্ঠানগুলির একটি বড় অংশ ভারত-বিরোধী কার্যকলাপে যুক্ত থাকার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে।

বর্ধমানের খাগড়াগড়ে বিস্ফোরণের পর শিমুলিয়া ও লালগোলার একাধিক ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম তদন্তে উঠে আসে। তদন্তে দেখা যায় ওই ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলিতে কেবল পুরুষরাই নয়, নাশকতার প্রশিক্ষণ পেয়েছিলেন মহিলারাও। তার পরেই নড়েচড়ে বসে কেন্দ্র। সীমান্ত পাহারার দায়িত্বে থাকা বিএসএফকে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে থাকা সংখ্যালঘু ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির সম্বন্ধে বিশদে খোঁজ নিতে বলা হয়। প্রাথমিক রিপোর্টে জানা গিয়েছে, অসম থেকে পশ্চিমবঙ্গ এই অংশে প্রায় ২০ হাজার ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যাদের এক-তৃতীয়াংশ সরকারি অনুমোদনহীন। মন্ত্রক জানিয়েছে, অনুমোদনহীন ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একটি বড় অংশের কার্যকলাপ সন্দেহজনক। এদের অধিকাংশ বিদেশ থেকে অনুদান পেয়ে থাকেন। স্থানীয় গ্রামবাসীরাই জানেন না তাঁদের গ্রামের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি কারা চালান বা সেখানে কারা পড়তে আসেন। এর মধ্যে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান খাগড়াগড় কাণ্ডের পর বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কেন্দ্রের মতে, সেগুলি যে ভারত-বিরোধী কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিল, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। খাগড়াগড় কাণ্ডের পর ধরপাকড় শুরু হওয়ায় তা তড়িঘড়ি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অসম থেকে পশ্চিমবঙ্গচিত্রটি কম-বেশি একই।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক বলছে, পশ্চিমবঙ্গের উত্তর দিনাজপুর থেকে শুরু হয়ে মালদহ, মুর্শিদাবাদ হয়ে ভারত বিরোধী কাজের শিকড় ছড়িয়েছে উত্তর ২৪ পরগনা পর্যন্ত। বাদ যায়নি দক্ষিণ ২৪ পরগনাও। সীমান্তের এ প্রান্তের মতোই বাংলাদেশেও বেশ কিছু দিন আগে পর্যন্ত ৫০টি স্থানে জঙ্গি শিবির চালু ছিল বলে তদন্তে জানা গিয়েছে। সীমান্ত সংলগ্ন এলাকা চৌগাছা, জীবননগর, মেহেরপুর, ফুটিয়া, দেবগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, কেশবপুর, বড়িশাপুর এলাকায় জঙ্গি শিবিরের হদিস জানতে পেরেছেন গোয়েন্দারা। ওই শিবিরগুলিতে জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ ও ভারত-বিরোধী নাশকতায় উৎসাহ দিতে সক্রিয় ভূমিকা নিয়ে এসেছে পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই ও লস্করের মতো পাক জঙ্গি গোষ্ঠীগুলি। তবে এখন খাগড়াগড় কাণ্ডের দু’তরফে ধরপাকড় শুরু হওয়ায় শিবিরগুলিতে তৎপরতা কমে গিয়েছে। কিছু শিবির শেখ হাসিনা প্রশাসন নষ্ট করে দিয়েছে। ধরপাকড় শুরু হওয়ায় কিছু শিবির বন্ধ হয়ে গিয়েছে।

অসম-পশ্চিমবঙ্গ ছাড়িয়ে মৌলবাদী জাল যে বিহারেও ছড়িয়েছে, তার প্রমাণও এসেছে গোয়েন্দাদের হাতে। ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আড়ালে জেহাদ ছড়ানোর অভিযোগ উঠেছে কিছু প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। প্রশ্ন কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের ভূমিকা নিয়েও। অসম-পশ্চিমবঙ্গের মতো নেপাল লাগোয়া বিহার সীমান্তের কিষাণগঞ্জ, আরারিয়া, মধুবনীর মতো জেলাগুলির পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানিয়েছে, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি ওই এলাকাগুলিতে এমন কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন কাজ করছে যাদের ভূমিকা যথেষ্ট সন্দেহজনক। ওই সব সংগঠনের জন্য সৌদি আরব, কুয়েতের মতো বেশ কিছু দেশ থেকে নিয়মিত ভাবে টাকা আসছে। যা ব্যবহার হচ্ছে রাষ্ট্র-বিরোধী কাজে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE