Advertisement
১৯ মে ২০২৪

গণধর্ষণে মূল অভিযুক্ত এ বার স্বামী

প্রতি বাইশ মিনিটে একটি। জানান দিচ্ছে ভারতে ধর্ষণের পরিসংখ্যান। উত্তরপ্রদেশে একের পর এক ধর্ষণের খবরের মধ্যে এ বার শিরোনামে মধ্যপ্রদেশ। এখানকার ভিলাই বোরখেড়ি গ্রামে নারকীয় অভিজ্ঞতার শিকার হতে হয়েছে এক আদিবাসী মহিলাকে। আর সেই কাজে মূল অভিযুক্ত তাঁর স্বামীই।

সংবাদ সংস্থা
খাণ্ডোয়া শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০১৪ ০২:৪৪
Share: Save:

প্রতি বাইশ মিনিটে একটি। জানান দিচ্ছে ভারতে ধর্ষণের পরিসংখ্যান। উত্তরপ্রদেশে একের পর এক ধর্ষণের খবরের মধ্যে এ বার শিরোনামে মধ্যপ্রদেশ। এখানকার ভিলাই বোরখেড়ি গ্রামে নারকীয় অভিজ্ঞতার শিকার হতে হয়েছে এক আদিবাসী মহিলাকে। আর সেই কাজে মূল অভিযুক্ত তাঁর স্বামীই।

গণধর্ষণেই মহিলার নির্যাতনের শেষ হয়নি। পরে তাঁকে প্রায় নগ্ন করে ঘুরিয়ে নিজের দশ বছরের ছেলের সামনে মূত্রপান করতে বাধ্য করেছে দুষ্কৃতীরা। ঘটনাটি ঘটেছে মঙ্গলবার রাতে। বৃহস্পতিবার ওই মহিলাকে উদ্ধার করেন তাঁর আত্মীয়রা। তাঁকে খাণ্ডোয়া জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শুক্রবার অভিযোগ দায়ের হওয়ার পরে শনিবার দশ অভিযুক্তকেই গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মহিলা বলেছেন, “মূল অভিযুক্ত আমার স্বামীই।” যদিও মহিলার স্বামী, কৈলাস রুমালিয়া নামে ওই ব্যক্তি ধর্ষণের অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

মহিলার বয়ান অনুযায়ী, কয়েক মাস আগে এক টুকরো জমি নিয়ে তাঁর সঙ্গে স্বামীর ঝামেলা হয়েছিল। যার জেরে কুড়ুল নিয়ে তাঁর উপরে চড়াও হয় কৈলাস। এই ঘটনার পরে পুলিশে অভিযোগ জানান মহিলা। তার পরে দশ বছরের ছেলেকে নিয়ে চলে যান অন্য গ্রামে বাপের বাড়িতে। মহিলার দাবি, গত মঙ্গলবার রাতে হঠাৎ তাঁর সঙ্গে দেখা করতে চায় কৈলাস। কুড়ুল মারার অভিযোগ নিয়ে সমঝোতায় পৌঁছতে স্বামী নিজের জায়গা অর্থাৎ ভিলাই বোরখেড়ি গ্রামে আসতে বলে তাঁকে।

অভিযোগ, ছেলেকে নিয়ে ওই গ্রামে পৌঁছতেই মহিলাকে দড়ি দিয়ে বেঁধে ফেলে কৈলাস। সঙ্গে ছিল আরও ন’জন। এদের মধ্যে কেউ স্বামীর আত্মীয়, কেউ আবার ওই গ্রামের বাসিন্দা। ছেলে-সহ মহিলাকে আটকে রাখা হয় একটি গুদামঘরে। সেখানে তাঁকে প্রথমে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় দুষ্কৃতীরা। তার পরে ঝাঁপিয়ে পড়ে মহিলার উপরে।

এখানেই শেষ নয়। মর্মান্তিক ওই অভিজ্ঞতার শিকার হওয়ার পরে দুষ্কৃতীদের কাছে একটু জল চেয়েছিলেন মহিলা। সেটাও তাঁকে দেওয়া হয়নি। মহিলার বক্তব্য, নাবালক সন্তানের সামনেই তাঁর গায়ে মূত্রত্যাগ করে সেটাই তাঁকে পান করতে বাধ্য করে এক দুষ্কৃতী। তার পরে গ্রামের রাস্তায় প্রায় নগ্ন অবস্থায় হাঁটতে বাধ্য করা হয় মহিলাকে। শেষমেশ আবার ওই গুদামঘরেই তাঁকে আটকে রেখে চলে যায় দুষ্কৃতীরা। একটা গোটা দিন পার হয়ে যাওয়ার পরে বৃহস্পতিবার বাপের বাড়ির লোকজন মহিলার খোঁজ করতে গিয়ে গুদামঘর থেকে উদ্ধার করেন তাঁকে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মহিলা আপাতত স্থিতিশীল।

গণধর্ষণ এবং নির্যাতনের অভিযোগে দশ জনকেই গ্রেফতার করেছে পুলিশ। যদিও স্বামীর দাবি, “জমি সংক্রান্ত বিবাদের জেরে ও আমাদের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ করছে।” ধর্ষণের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে কৈলাসের বক্তব্য, “আমি শুধু ওকে চড় মেরেছিলাম। আর এক বার লাঠি দিয়ে মেরেছিলাম।”

উত্তরপ্রদেশে পর পর ধর্ষণের ঘটনা নিয়ে কিছু দিন আগেই মুখ খুলেছিলেন এই রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাবুলাল গৌর। বলেছিলেন, “এটা আসলে একটা সামাজিক অপরাধ। ধর্ষণ কখনও ঠিক, কখনও ভুল। ঠিক-ভুল নির্ভর করে ছেলেমেয়েদের উপর।” ধর্ষণ নিয়ে অখিলেশ প্রশাসন যখন তীব্র সমালোচনার মুখে, তখন তাদের ‘অসহায়তা’ বুঝে সমব্যথী হয়েছিলেন এই বাবুলাল। তবে নিজের রাজ্যের ওই আদিবাসী মহিলার ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার কথা এখনও তাঁর কানে গিয়েছে কি না, জানা যায়নি। কিন্তু একটা বিষয় খুব পরিষ্কার। নির্ভয়া-কাণ্ডের পর থেকে দেশে ধর্ষণ-বিরোধী আইন যতই কড়া হোক, রাজ্যে রাজ্যে নির্যাতনের ছবিটা কিন্তু বদলাচ্ছে না। মধ্যপ্রদেশের ভিলাই বোরখেড়ি গ্রাম তারই জ্বলন্ত প্রমাণ।

আবার গণধর্ষণ, সেই বদায়ূঁতেই

ধর্ষণ ঠেকাতে হাজারো দাওয়াই। কিন্তু এত সব করেও স্বস্তি নেই উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদবের। কারণ আজ আবার গণধর্ষণের খবর মিলেছে সেই বদায়ূঁ থেকেই। গত শুক্রবার ৩২ বছরের এক মহিলাকে আটকে রেখে তিন জন ধর্ষণ করেছে বলে অভিযোগ। এদের মধ্যে এক জন আবার পুলিশকর্মীর ছেলে হিমাংশু। শুক্রবার রাতে বিয়াসুলি এলাকার ওই মহিলা ওষুধ কিনতে বেরোন। পুলিশ জানায়, দুই সন্তান-সহ ওই মহিলাকে একটি নির্মীয়মাণ বাড়িতে নিয়ে যায় হিমাংশু। মহিলার অভিযোগ, ওই বাড়িতে তাঁকে আটকে রাখে সে। পরে আরও দু’জনকে নিয়ে ফিরে আসে। তিন জন ধর্ষণ করে ওই মহিলাকে। পরের দিন মহিলাকে ছেড়ে দেয় তারা। পুলিশকে শনিবার সব জানান মহিলা। হিমাংশু, খলিফা ওরফে প্রমোদ-সহ তিন জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। তৃতীয় জনের পরিচয় জানা যায়নি। কাউকেই এখনও ধরতে পারেনি পুলিশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

rape madhyapradesh
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE