Advertisement
E-Paper

ঘনিষ্ঠদের বড় দায়িত্ব দিয়ে ঘর গোছালেন নরেন্দ্রভাই

মন্ত্রিসভার বহর কমেছে। কিন্তু একই ধরনের মন্ত্রকগুলি মিশিয়ে দেওয়া হয়নি। প্রত্যাশা ছিল, বিশেষজ্ঞদের মন্ত্রী করা হতে পারে। তা-ও হয়নি। যে ধাক্কাটি মন্ত্রিসভার গঠনের সময়ই দেওয়া উচিত ছিল, সে পথেও হাঁটেননি তিনি। ‘ন্যূনতম সরকার, সর্বোচ্চ প্রশাসন’ এই আশ্বাস দিয়ে ক্ষমতায় আসার দশ দিন পরে আজ কার্যত চমকহীন এক মন্ত্রিসভা পেশ করলেন নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদী।

দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায় ও প্রেমাংশু চৌধুরী

শেষ আপডেট: ২৭ মে ২০১৪ ০৩:৪৮
শপথবাক্য পাঠ করছেন নরেন্দ্র মোদী। সোমবার রাজেশ কুমারের তোলা ছবি।

শপথবাক্য পাঠ করছেন নরেন্দ্র মোদী। সোমবার রাজেশ কুমারের তোলা ছবি।

মন্ত্রিসভার বহর কমেছে। কিন্তু একই ধরনের মন্ত্রকগুলি মিশিয়ে দেওয়া হয়নি।

প্রত্যাশা ছিল, বিশেষজ্ঞদের মন্ত্রী করা হতে পারে। তা-ও হয়নি।

যে ধাক্কাটি মন্ত্রিসভার গঠনের সময়ই দেওয়া উচিত ছিল, সে পথেও হাঁটেননি তিনি।

‘ন্যূনতম সরকার, সর্বোচ্চ প্রশাসন’ এই আশ্বাস দিয়ে ক্ষমতায় আসার দশ দিন পরে আজ কার্যত চমকহীন এক মন্ত্রিসভা পেশ করলেন নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদী।

রাজ্য ছেড়ে মোদী রাজধানীর গুজরাত ভবনে আস্তানা গাড়ার পর থেকে গত ছ’দিন ধরে মন্ত্রিসভার চেহারা নিয়ে রুদ্ধদ্বার আলোচনা চলছিল সেখানে। বিজেপির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা করছিলেন ভাবী প্রধানমন্ত্রী। দল সূত্রে ইঙ্গিত মিলেছিল, প্রশাসনে গতি আনতে এক দিকে যেমন মন্ত্রিসভার বহর কমাবেন তিনি, তেমনই মিশিয়ে দেওয়া হবে একই ধরনের একাধিক মন্ত্রককে। আজ রাষ্ট্রপতি ভবনের সামনের চত্বরে প্রায় পাঁচ হাজার অভ্যাগতের সামনে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা শপথ নেওয়ার পরে দেখা গেল, দেশের পঞ্চদশ প্রধানমন্ত্রী একটি প্রত্যাশা পূরণ করেছেন, অন্যটি নয়।

বিদায়ী মনমোহন সিংহ সরকারে মন্ত্রী ছিলেন ৭৮ জন। ৩৩ জন পূর্ণমন্ত্রী। ১২ জন স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী এবং ৩৩ জন প্রতিমন্ত্রী। অটলবিহারী বাজপেয়ীর জমানায় মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন ৫৬ জন। মোদী আজ ৪৫ জনকে মন্ত্রী করেছেন। যার মধ্যে প্রধানমন্ত্রীকে বাদ দিয়ে ২৩ জন পূর্ণমন্ত্রী। ১০ জন স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী। বাকি ১২ জন প্রতিমন্ত্রী।

ফলে আগের দুই প্রধানমন্ত্রীর তুলনায় মন্ত্রিসভার বহর অনেকটাই কমিয়েছেন মোদী। কিন্তু এক ধাক্কায় মন্ত্রকের সংখ্যা কমানোর যে প্রত্যাশা তাঁর কাছে ছিল, সেটা পূরণ করতে পারেননি তিনি। এত দিন মনে করা হচ্ছিল, পরিবহণ সংক্রান্ত সমস্ত মন্ত্রক, অর্থাৎ রেল, ভূতল পরিবহণ এবং জাহাজ মন্ত্রক মিশিয়ে দেবেন মোদী। মিশে যাবে কৃষি এবং খাদ্য মন্ত্রক বা গ্রামোন্নয়ন এবং পঞ্চায়েত মন্ত্রক। নতুন সরকারের কাছে শিল্প মহলেরও তেমনই প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে এর কোনওটাই হয়নি।

প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের সূত্রে অবশ্য বলা হচ্ছে, এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। একাধিক মন্ত্রক মিশিয়ে দিতে গেলে আমলাতান্ত্রিক রীতিনীতির মধ্যে দিয়ে যেতে হবে। কারণ বিভিন্ন মন্ত্রক মেশাতে গেলে সরকারি স্তরে বহু পদ বিলুপ্ত হবে। ওই সব পদের আমলাদের কোথায় সরানো হবে, তা নিয়ে ভাবতে হবে। তাই প্রাথমিক ভাবে একই মন্ত্রীকে একাধিক মন্ত্রকের দায়িত্ব দিয়ে সেই পথে এগোনোর চেষ্টা শুরু হয়েছে।

সরকারের এই যুক্তিতে অবশ্য খুশি নয় শিল্পমহল। তাদের বক্তব্য, এই ধরনের সংস্কার একেবারে গোড়াতেই এক ধাক্কায় করা দরকার। না হলে পরে রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতার চাপে এগোনো কঠিন হয়ে পড়ে। তা ছাড়া, একই ধরনের মন্ত্রকগুলি যদি এক জন মন্ত্রীর হাতে দেওয়া হতো, তা হলেও সংস্কারের একটা বার্তা যেত। কিন্তু তেমনটাও করা হয়নি।

সবিস্তারে দেখতে ক্লিক করুন...

সংস্কারের কাজে তেমন সফল না হলেও নিজের মন্ত্রিসভা কিন্তু সুকৌশলেই সাজিয়েছেন মোদী। গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রকগুলির ভার নিজের আস্থাভাজনদের হাতেই তিনি সঁপে দিয়েছেন। যাতে মূল রাশটি নিজের হাতে থাকে। পাশাপাশি দূরে সরিয়ে রেখেছেন লালকৃষ্ণ আডবাণীকে। মুরলীমনোহর জোশী মন্ত্রী হতে চাইলেও ঠাঁই দেননি তাঁকে। সব মিলিয়ে মন্ত্রিসভায় বিরোধী স্বর যতটা সম্ভব কমিয়ে গোড়ার দিনেই টিম মোদীর ভিতটা পোক্ত করে ফেললেন নয়া প্রধানমন্ত্রী।

আর সেই কাজ করতে গিয়ে লোকসভা ভোটে হারা দুই প্রার্থীকে আজ পূর্ণমন্ত্রী করেছেন মোদী। প্রথম জন তাঁর দীর্ঘদিনের সেনাপতি অরুণ জেটলি। রাত পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক ভাবে মন্ত্রক বণ্টন করা না-হলেও বিজেপি সূত্রের খবর দু’টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রক অর্থ এবং প্রতিরক্ষা পেয়েছেন জেটলি। যা নিয়ে প্রশ্নও উঠেছে দল এবং প্রশাসনের অন্দরে। তবে প্রশাসনের অন্য সূত্র বলছে, এমন নয় যে আগামী পাঁচ বছরই এই দুই মন্ত্রক জেটলির হাতে থাকবে। জেটলিকে মোদী বলেছেন, যত দিন না উপযুক্ত কাউকে পাওয়া যাচ্ছে, তত দিন তিনি যেন দু’টি মন্ত্রকই সামলে দেন।

বিজেপি সূত্রে খবর, প্রাক্তন সেনাপ্রধান ভি কে সিংহ বা মুরলীমনোহর জোশীর মতো কেউ কেউ প্রতিরক্ষামন্ত্রী হওয়ার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু মোদী চান সৎ এবং তাঁর আস্থাভাজন কাউকে ওই পদে বসাতে। এই অবস্থায় অর্থমন্ত্রীর হাতে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক দেওয়া একটি প্রশাসনিক যুক্তিও আছে বলে বিজেপি সূত্রে দাবি করা হচ্ছে। তাদের মতে, প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের সংস্কার করতে চান মোদী। তিনি চান, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলির দক্ষতা আরও বাড়িয়ে বাহিনীর পরিকাঠামো গড়ার ক্ষেত্রে বিদেশি রাষ্ট্রের উপর নির্ভরতা কমাতে। এই সংস্কারের সঙ্গে অর্থ মন্ত্রক ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। তাই এই দুই মন্ত্রক এক জনের হাতে থাকলে সংস্কারের সুবিধা হবে।

কিন্তু কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার চারটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রকের দু’টির দায়িত্ব পেয়ে জেটলিই যে মোদীর পরে সব থেকে প্রভাবশালী হয়ে উঠলেন, সে ব্যাপারে কোনও সন্দেহ নেই। যদিও আজ প্রধানমন্ত্রীর পরে শপথ নিয়েছেন বিজেপি সভাপতি রাজনাথ সিংহ। তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক পাবেন বলে মনে করা হচ্ছে। তার পরে শপথ নেন সুষমা স্বরাজ। যাঁর হাতে বিদেশ মন্ত্রক যাচ্ছে বলে খবর।

কিন্তু রাজনাথ বা সুষমা কেউই মোদীর আস্থাভাজন নন। বিশেষ করে সুষমা। গত লোকসভার বিরোধী দলনেত্রী তো গোড়া থেকেই দলের অন্দরে মোদীর বিরোধিতা করে এসেছেন। তাঁদের পাল্লা যাতে ভারী না হয়, সেই জন্যই ভোটে হারা কাউকে মন্ত্রী করা ঠিক নয় এই যুক্তিতে কান দেননি মোদী। জেটলি জোড়া দায়িত্ব পেয়েছেন। অন্য দিকে নিজের আর এক ঘনিষ্ঠ, অমেঠীতে রাহুল গাঁধীকে কড়া চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দেওয়া স্মৃতি ইরানিকেও আজ পূর্ণমন্ত্রী করেছেন মোদী। বিজেপি সূত্রে খবর, গুরুত্বপূর্ণ মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক দেওয়া হচ্ছে তাঁকে। বাজপেয়ী জমানায় যে মন্ত্রক সামলাতেন মুরলীমনোহর জোশী।

পেট্রোলিয়ামের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রকও হেভিওয়েট কাউকে না দিয়ে মোদী নিজের আস্থাভাজন ধর্মেন্দ্র প্রধানকে দিচ্ছেন বলে জানা গিয়েছে। এই মন্ত্রকটি নিয়ে বরাবরই শিল্প মহলের চাপ থাকে। ধর্মেন্দ্রকে স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী করে তার রাশ বকলমে মোদী নিজের হাতেই রাখলেন বলে মনে করা হচ্ছে। আর এক আস্থাভাজন পীযূষ গয়ালকে মোদী একই সঙ্গে বিদ্যুৎ ও কয়লা মন্ত্রকের দায়িত্ব দিয়েছেন বলে খবর।

বিজেপির এক নেতার কথায়, “আসলে নরেন্দ্র মোদী একটি পরীক্ষা নিরীক্ষার মধ্যে দিয়ে যেতে চাইছেন। হয়তো অদূর ভবিষ্যতেই মন্ত্রিসভার আরও সম্প্রসারণ বা পরিমার্জন হবে।”

bjp modi premangshu chowdhury diganta bandyopadhyay
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy