Advertisement
E-Paper

জমি অর্ডিন্যান্সের বিরোধিতায় তৃণমূল-বামেরা

এক দল মনে করে, জমি অধিগ্রহণে সরকারের ভূমিকা থাকা আবশ্যক। অন্য দলের দাবি, জমি কিনে নিতে হবে শিল্পপতিদেরই। সরকারের কোনও ভূমিকা সেখানে থাকবে না।এই পরস্পর-বিরোধী অবস্থান নিয়েই কেন্দ্রে বিজেপি সরকারের জমি অর্ডিন্যান্সের (অধ্যাদেশ) কড়া বিরোধিতায় নামল এ রাজ্যের দুই যুযুধান প্রতিপক্ষ সিপিএমএবং তৃণমূল।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:৪৯

এক দল মনে করে, জমি অধিগ্রহণে সরকারের ভূমিকা থাকা আবশ্যক। অন্য দলের দাবি, জমি কিনে নিতে হবে শিল্পপতিদেরই। সরকারের কোনও ভূমিকা সেখানে থাকবে না।এই পরস্পর-বিরোধী অবস্থান নিয়েই কেন্দ্রে বিজেপি সরকারের জমি অর্ডিন্যান্সের (অধ্যাদেশ) কড়া বিরোধিতায় নামল এ রাজ্যের দুই যুযুধান প্রতিপক্ষ সিপিএমএবং তৃণমূল।

রাজ্যে বাম জমানার পরিবর্তন ঘটিয়ে তৃণমূলের ক্ষমতায় আসার পিছনে বিরাট ভূমিকা ছিল সিঙ্গুর, নন্দীগ্রামকে ঘিরে জমি আন্দোলনের। স্বভাবতই জমি এখনও রাজ্য রাজনীতিতে যথেষ্ট স্পর্শকাতর বিষয়। কেন্দ্রীয় সরকার অধ্যাদেশ জারি করে কার্যত জমি অধিগ্রহণের পুরনো পন্থায় ফিরে যাওয়ায় আলাদা আলাদা কারণ দেখিয়েই প্রতিবাদে সরব হয়েছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সিপিএমের শীর্ষ নেতৃত্ব। জমি যে হেতু তাঁর পুরনো হাতিয়ার, তাই সময় নষ্ট না করে আজ, বুধবার থেকেই রাজ্য জুড়ে ওই ‘কালা অধ্যাদেশে’র প্রতীকী প্রতিলিপি পুড়িয়ে প্রতিবাদে নামার জন্য দলকে নির্দেশ দিয়েছেন মমতা। প্রতিবাদ হবে কলকাতাতেও।

খড়গপুরে মঙ্গলবার দলের কর্মী সম্মেলনে মমতা বলেছেন, “মাত্র দু’তিনটি লোককে পাইয়ে দেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার সারা ভারতবর্ষটাকে বিক্রি করে দিতে চায়! জমি বিল করা হয়েছে অর্ডিন্যান্স জারি করে। বন্দুকের উপরে দাঁড়িয়ে জমি দখল করে নেবে! আমি বলে রাখি, বাংলায় তা হতে দেব না!”

তৃণমূল নেত্রীর বক্তব্য, জোর করে জমি অধিগ্রহণের প্রতিবাদে তিনি ধর্মতলায় ২৬ দিন অনশন করেছিলেন। তাঁদের আন্দোলনের জেরেই গোটা দেশে জমি অধিগ্রহণ নিয়ে নতুন করে ভাবনা শুরু হয়েছিল। ইউপিএ জমানায় জমি অধিগ্রহণের আইনে প্রয়োজনীয় সংশোধনও আনা হয়েছিল। অথচ বিজেপি-র সরকার এখন আবার জবরদস্তি জমি অধিগ্রহণের পথেই ফিরে যাচ্ছে বলে তৃণমূলের অভিযোগ। দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, “কৃষক এবং সাধারণ মানুষের যে অধিকারের জন্য আমরা এত লড়াই করেছি, এত রক্ত ঝরেছে, তাকে এক কথায় এ ভাবে খারিজ করা হচ্ছে! কোনও ভাবেই এই অধ্যাদেশ বা পরবর্তী কালে বিল আমরা মানব না!”

সিপিএম নেতৃত্ব অবশ্য কেন্দ্রের অধ্যাদেশের বিরোধিতা করেও তৃণমূলের দ্বিচারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে ছাড়ছেন না। বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রের কথায়, “এখন ওঁরা কৃষক স্বার্থের কথা বলছেন। ওঁরা কয়লা নিয়ে অধ্যাদেশেরও বিরোধিতা করেছিলেন। অথচ ওঁদের সরকারই জমির ঊর্ধ্বসীমা আইন শিথিল করে কয়লা খনিকে ছাড় দিয়েছে! কৃষি বিপণন আইন সংশোধনও কি কৃষক স্বার্থের পক্ষে হয়েছিল?” সূর্যবাবুর অভিযোগ, মমতার সরকারের সব পদক্ষেপই পরস্পর-বিরোধী!

তবে তাঁরা যে কোনও সময়েই জমি অধিগ্রহণে সরকারি হস্তক্ষেপের বিপক্ষে ছিলেন না, সে কথাও মনে করিয়ে দিচ্ছেন সিপিএম নেতৃত্ব। দলের পলিটব্যুরো সদস্য সীতারাম ইয়েচুরি বলেছেন, “আমাদের বক্তব্য খুব পরিষ্কার। দালালদের হাত থকে বাঁচতে জমি অধিগ্রহণে সরকারের ভূমিকা থাকুক। আর বর্গাদার, খেতমজুর-সহ জমির উপরে নির্ভরশীল সকলকে পুনর্বাসন প্যাকেজের আওতায় আনা হোক। কিন্তু এই অধ্যাদেশে শুধু জমির মালিক ছাড়া আর কাউকে ক্ষতিপূরণের কথাবলা নেই।”

সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামে ঠেকে শিখে সিপিএম তাদের দলীয় অবস্থান ঠিক করে বলেছিল, অধিগ্রহণের সময় যথাসম্ভব ঊর্বর জমি এড়িয়ে চলতে হবে। কিন্তু কেন্দ্রীয় অধ্যাদেশে উর্বর-অনুর্বর কোনও বাছবিচারের জায়গা নেই। পাশাপাশিই ফরওয়ার্ড ব্লকের প্রবীণ রাজ্য সম্পাদক অশোক ঘোষের মতো বাম নেতাদের আশঙ্কা, জমি অধিগ্রহণের ‘ব্যতিক্রমী’ পাঁচটি ক্ষেত্র বলে যে সব সংস্থান রাখা হয়েছে, তাতে যে কোনও প্রকল্পেই ওই মডেলে জমি নেওয়া যাবে!

কৃষক স্বার্থের কথা বলতে গিয়েই বিজেপি-র জন্য রাজনৈতিক প্রশ্নও রেখেছেন ইয়েচুরি। তাঁর মন্তব্য, “বারবার আলোচনা করে ইউপিএ আমলে যখন পুনর্বাসনের নীতি তৈরি হয়েছিল, বিজেপি তাতে সামিল ছিল। এখন হঠাৎ একেবারে উল্টো পথে যাওয়ার দরকার হল কেন?”

land ordinance left front agitation tmc
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy