Advertisement
২১ মে ২০২৪

জমি তৈরি সংস্কারের, সাহসী হবেন কি জেটলি

ছক্কা হাঁকানোর এখনই সুযোগ। এর পরে আর সেই সুযোগ না-ও মিলতে পারে! আগামিকাল থেকে বাজেট অধিবেশন। সপ্তাহের শেষ দিনে শনিবার বাজেট পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। যে বাজেটকে অর্থনীতিবিদদের কেউ কেউ বলছেন, মেক অর ব্রেক’। কেউ বলছেন, ‘নাউ অর নেভার’। যার অর্থ নরেন্দ্র মোদী, অরুণ জেটলিকে এখনই আর্থিক সংস্কারের সাহসী সিদ্ধান্ত নিতে হবে। অর্থনীতির হাল ফেরাতে হলে এখনই তার উপযুক্ত সময়। মোদী সরকার আগামী দিনে কোন পথে চলবে, তা-ও এই বাজেটেই স্পষ্ট করে দিতে হবে। শুধুই আয়-ব্যয়ের হিসেবনিকেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না জেটলিকে। মোদী সরকারের আর্থিক নীতি বাজেটে প্রতিফলিত হতে হবে।

প্রেমাংশু চৌধুরী
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:২৫
Share: Save:

ছক্কা হাঁকানোর এখনই সুযোগ। এর পরে আর সেই সুযোগ না-ও মিলতে পারে!

আগামিকাল থেকে বাজেট অধিবেশন। সপ্তাহের শেষ দিনে শনিবার বাজেট পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। যে বাজেটকে অর্থনীতিবিদদের কেউ কেউ বলছেন, মেক অর ব্রেক’। কেউ বলছেন, ‘নাউ অর নেভার’। যার অর্থ নরেন্দ্র মোদী, অরুণ জেটলিকে এখনই আর্থিক সংস্কারের সাহসী সিদ্ধান্ত নিতে হবে। অর্থনীতির হাল ফেরাতে হলে এখনই তার উপযুক্ত সময়। মোদী সরকার আগামী দিনে কোন পথে চলবে, তা-ও এই বাজেটেই স্পষ্ট করে দিতে হবে। শুধুই আয়-ব্যয়ের হিসেবনিকেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না জেটলিকে। মোদী সরকারের আর্থিক নীতি বাজেটে প্রতিফলিত হতে হবে।

কেন এ কথা বলছেন অর্থনীতিবিদরা? এর পিছনে অর্থনৈতিক যুক্তি যেমন রয়েছে, তেমনই রাজনৈতিক কারণও রয়েছে।

মোদীর মন্ত্রিসভার সদস্যরা বলছেন, রাজনৈতিক দিক থেকে এটাই সাহসী সংস্কারের উপযুক্ত সময়। কারণ, দিল্লির নির্বাচনের পরেও মোদী সরকার যে সংস্কারের পথে অটল, তা প্রমাণ করা যাবে। আগামী বছর এপ্রিলে চারটি গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। পশ্চিমবঙ্গ, কেরল, তামিলনাড়ু ও অসম। এই চারটি রাজ্যেই ভাল ফল করার জন্য মরিয়া হয়ে ঝাঁপাবে বিজেপি। সে সময় অর্থাৎ চার রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের ঠিক আগে ফেব্রুয়ারির বাজেটে অর্থনীতির তেতো দাওয়াই দেওয়া কঠিন হয়ে উঠতে পারে।

অর্থনীতিবিদদের মত, তেতো দাওয়াইয়ের জন্য আন্তর্জাতিক ও দেশীয় অর্থনীতি এমনিতেই জেটলির জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে রেখেছে। মূল্যবৃদ্ধি যথেষ্ট কমে এসেছে। ইউপিএ সরকারের কাছে যা ছিল দুশ্চিন্তার কারণ, বিদেশি মুদ্রার লেনদেনে সেই ঘাটতিও এখন নিয়ন্ত্রণে। অশোধিত তেলের দাম কমে যাওয়ায় আমদানি খরচ কমেছে। বিদেশি আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলি এ দেশের শেয়ার বাজারে টাকা ঢালছে। ফলে শেয়ার বাজারের সূচকও ঊর্ধ্বমুখী। কেন্দ্রীয় সরকারকে স্বস্তি দিয়ে সুদের হার কমিয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডার পূর্বাভাস করেছে, আগামী অর্থবর্ষে ভারতের আর্থিক বৃদ্ধির হার চিনের থেকেও বেশি হবে।

এই অবস্থায় সাহসী সিদ্ধান্ত নেওয়া ছাড়া জেটলির সামনে অন্য কোনও পথ খোলা নেই বলেই মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। কারণ, শিল্পে উৎপাদন এখনও নিম্নমুখী। ফলে উৎপাদন শুল্ক বাবদ আয়ও কমেছে। সার্বিক ভাবেও রাজস্ব আদায় লক্ষ্যমাত্রা ছুঁতে পারছে না। ব্যাঙ্ক থেকে নেওয়া ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধির হার গত বছরের তুলনায় কম। কর্পোরেট সংস্থাগুলির ব্যালান্স শিটের অবস্থা তেমন সুবিধের নয়। তাই বেসরকারি সংস্থাগুলি নতুন লগ্নি করতে এগিয়ে আসছে না। বিদেশি সংস্থাগুলি শেয়ার বাজারে টাকা রাখতে রাজি হলেও এ দেশে কারখানা গড়তে এখনও রাজি নয়। এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে জেটলিকেই আর্থিক বৃদ্ধির হারকে ঠেলে তোলার জন্য স্পষ্ট পদক্ষেপ করতে হবে।

লোকসভা নির্বাচনে বিপুল ভোটে জিতে ক্ষমতায় আসার পর গত বছরের ১০ জুলাই প্রথম বাজেট পেশ করেছিলেন জেটলি। কিন্তু যতটা সাহসী সংস্কার দেখতে চেয়েছিল শিল্পমহল, জেটলির সেই বাজেটে তাঁর দেখা মেলেনি। সেন্টার ফর পলিসি রিসার্চের অর্থনীতিবিদ রাজীব কুমারের কথায়, “এই বাজেটও যদি হতাশ করে, তা হলে অর্থনীতির হাল ফেরানো কঠিন হয়ে পড়বে। এই বাজেট তাই শুধুই আয়-ব্যয়ের হিসেব হলে মুশকিল। আমার মনে হয়, কর সংস্কার থেকে পরিকাঠামো উন্নয়নে বড় মাপের প্রকল্প ঘোষণার মতো বিষয় থাকবে বাজেটে।”

আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমে যাওয়ায় আমদানি ব্যয় কমেছে। তেলের উপর কর বসিয়েও রাজস্ব আদায় বাড়িয়েছেন জেটলি। ফলে পরিকাঠামোর পিছনে ব্যয় করার জন্য তাঁর হাতে অনেক বেশি অর্থ থাকবে। কিন্তু ইউরোপের বহু দেশেই এখনও মন্দা কাটেনি। ফলে ভারত থেকে ওই সব দেশে রফতানির পরিমাণ কমছে। কাজেই রফতানির কাঁধে ভর করে আর্থিক বৃদ্ধির হার বাড়বে, এমন আশা না করাই ভাল বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ অজিত রাণাডে। তাঁর বক্তব্য, দেশের বাজারেই চাহিদা তৈরি করতে হবে জেটলিকে। তার জন্য লগ্নি বাড়াতে হবে।

ইউপিএ সরকার প্রথম বার ক্ষমতায় আসার পর ২০০৪ সালেও তৎকালীন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমকে তড়িঘড়ি বাজেট পেশ করতে হয়েছিল। কিন্তু পরের বাজেটেই চিদম্বরম বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, মনমোহন সরকার কোন পথে হাঁটবে। তখনই স্পষ্ট হয়ে যায়, ‘সকলের জন্য উন্নয়ন’-এর মন্ত্র নিয়ে সামাজিক ক্ষেত্রের উন্নয়নেই জোর দেবে ইউপিএ সরকার। এবং ২০০৫ সালের বাজেটেই চিদম্বরম গ্রামের মানুষের রোজগারের জন্য একশো দিনের কাজ, গ্রামীণ পরিকাঠামো তৈরির জন্য ভারত নির্মাণ ও স্বাস্থ্য পরিষেবার জন্য জাতীয় গ্রামীণ স্বাস্থ্য মিশন গঠনের মতো সিদ্ধান্ত নিতে চলেছেন। একই ভাবে, জেটলির দ্বিতীয় বাজেটেও মোদী সরকার কোন পথে চলবে, তার স্পষ্ট দিশানির্দেশ থাকা উচিত বলে অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE