Advertisement
E-Paper

জমি বিলের পরীক্ষা এ বার রাজ্যসভায়

সংসদে জমি অধ্যাদেশ পাশ করাতে সামান্য নরম হলেও সংস্কারের জেদ ধরে রাখলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। জমি অধ্যাদেশের বিলে আজ ৯টি সংশোধনী প্রস্তাব আনে সরকার। তার পর অনায়াসে বিলটি লোকসভায় পাশ করিয়ে নেয়। সরকার নিজে থেকেই সংশোধন প্রস্তাব আনায় আপাত ভাবে এই বার্তা যায় যে, ঘরে বাইরে চাপে পড়ে কেন্দ্র বুঝি ঢোঁক গিলল! তবে ঘটনা হল, মোদী-জেটলিরা তাঁদের জমি নীতিতে যে সামান্য সংশোধন করলেন, তা নিখাদ রাজনীতির প্রয়োজনে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০১৫ ০৩:৩৪

সংসদে জমি অধ্যাদেশ পাশ করাতে সামান্য নরম হলেও সংস্কারের জেদ ধরে রাখলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

জমি অধ্যাদেশের বিলে আজ ৯টি সংশোধনী প্রস্তাব আনে সরকার। তার পর অনায়াসে বিলটি লোকসভায় পাশ করিয়ে নেয়। সরকার নিজে থেকেই সংশোধন প্রস্তাব আনায় আপাত ভাবে এই বার্তা যায় যে, ঘরে বাইরে চাপে পড়ে কেন্দ্র বুঝি ঢোঁক গিলল! তবে ঘটনা হল, মোদী-জেটলিরা তাঁদের জমি নীতিতে যে সামান্য সংশোধন করলেন, তা নিখাদ রাজনীতির প্রয়োজনে। সরকার যে কৃষক-বিরোধী নয় তা বোঝাতে শুধুই বিলের বহিরঙ্গে উনিশ-বিশ করা হল। কিন্তু শিল্প ও পরিকাঠামো নির্মাণের পথ সহজ করতে জমি অধিগ্রহণ নীতিতে যে সংস্কার প্রধানমন্ত্রী ঘটাতে চাইছেন, তার শর্ত কোনও ভাবেই লঘু করা হল না। এমনকী, শিল্প করিডর নির্মাণে সরকারের মাধ্যমে জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে কৃষক বা জমির মালিকদের আগাম সম্মতি না নেওয়ার অবস্থানেও অনড় রইল কেন্দ্র।

সন্দেহ নেই এর মাধ্যমে শিল্প মহলের আস্থা ধরে রাখারই চেষ্টা করল সরকার। বিনিয়োগের বাতাবরণ কায়েম রাখার জেদ দেখানো হল। যদিও এটাই পূর্ণাঙ্গ ছবি নয়। কারণ, লোকসভার পর্বটুকু ঘিরে তেমন কোনও অনিশ্চয়তা ছিল না। অন্তত সংখ্যার দিক দিয়ে। সরকার যেটুকুও বা নমনীয়তা দেখিয়েছে, সেটা নিছকই রাজনীতির স্বার্থে। ভাবমূর্তির স্বার্থে। লোকসভা পেরিয়ে এসে জমি বিলের অনিশ্চিত যাত্রা এ বার রাজ্যসভায়। সংখ্যার জোর না থাকায় জমি অধ্যাদেশ কার্যকর করার পথে সরকারের গলার কাঁটা এখন রাজ্যসভা। বিরোধীরা সেখানে এককাট্টা হয়ে খনি ও খনিজ পদার্থ সংক্রান্ত বিলে আজও ঘোল খাইয়েছে মোদী সরকারকে। সন্দেহ নেই জমি বিলের ক্ষেত্রে রাজ্যসভায় আরও এককাট্টা বিরোধের মুখে পড়তে চলেছে মোদী সরকার। কংগ্রেস আজ তার স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছে লোকসভায়। নিম্নকক্ষে জমি বিল নিয়ে ভোটাভুটির সময় তারা বিরুদ্ধে ভোট দেয়। এর পরে সভা থেকে ওয়াক আউট করে। একই পথ নেয় বিজু জনতা দল। তৃণমূল ও বামেরা বিপক্ষে ভোট দেয়। এনডিএ শরিক শিবসেনা ভোট দেয়নি।

ইউপিএ জমানার একেবারে শেষ দিকে ১৮৯৪ সালের জমি অধিগ্রহণ আইন খারিজ করে একটি নতুন জমি আইন পাশ হয়েছিল। ভোটের আগে অতি বেশি কৃষক-দরদি হতে গিয়ে সেই আইনে এমন সব শর্ত রাখা হয়, যাতে আখেরে শিল্প ও পরিকাঠামোর জন্য জমি অধিগ্রহণ প্রায় অসম্ভব বলে তখনই সমালোচনা হয়েছিল। ভোটের মুখে বিজেপিও বিরোধিতায় না গিয়ে তাল মিলিয়েছিল কংগ্রেসের সঙ্গে। কিন্তু কেন্দ্রে সরকার গড়ার পরেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জমি নীতিতে সংস্কার আনতে তৎপর হন। সরকার অধ্যাদেশ জারি করে জানিয়ে দেয়, শিল্প করিডর, প্রতিরক্ষা কারখানা, আবাসন, সরকারি-বেসরকারি যৌথপ্রকল্প এবং গ্রামীণ ও সামাজিক পরিকাঠামো নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে কৃষকদের কোনও সম্মতি নেবে না সরকার। তা ছাড়া, সামাজিক পরিকাঠামো গড়ে তোলার স্বার্থে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতাল গড়ার জন্যও সরকারই জমি অধিগ্রহণ করবে। মোদীর এই জমি নীতি নিয়ে সরকারের সঙ্গে মতবিরোধ তৈরি হয় বিরোধী শিবির, বন্ধু ও শরিক দল, এমনকী সঙ্ঘ পরিবারের সঙ্গেও। এই অবস্থায় অধ্যাদেশে সংশোধন করার ইঙ্গিত আগেই দিয়েছিল কেন্দ্র। আজ সংসদে অধ্যাদেশকে আইনে পরিণত করার বিলটি পাশের আগে সরকার সংশোধনীগুলি পেশ করে ও ব্যাখ্যা করে। কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী চৌধুরি বীরেন্দ্র সিংহ জানান, “বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতাল গড়তে সরকার জমি অধিগ্রহণ করবে না।” অধ্যাদেশে বলা হয়, শিল্প করিডর গড়ার জন্য জাতীয় সড়ক ও রেললাইনের দু’পাশে জমি নিতে পারবে সরকার। দু’পাশে কতটা করে জমি নিতে পারবে তা অধ্যাদেশে সুনির্দিষ্ট করা ছিল না। সংশোধনীতে বলা হয়েছে, জাতীয় সড়ক বা রেল লাইনের দু’পাশে এক কিলোমিটারের মধ্যে সরকার জমি নিতে পারবে শিল্প করিডর নির্মাণের জন্য। কোনও প্রকল্প নির্মাণের জন্য যতটুকু না নিলে নয়, সেটুকু জমিই অধিগ্রহণ করা হবে। প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণের আগে নিরপেক্ষ সংস্থাকে দিয়ে সমীক্ষা ও জরিপ করা হবে। পতিত জমির সংস্কার করে সরকার জমি ব্যাঙ্ক গড়বে।

জমি অধ্যাদেশ জারি করে সরকার জানিয়েছিল, অধিগ্রহণ সংক্রান্ত মামলায় কোনও সরকারি আমলাকে জড়াতে হলে সরকারের আগাম সম্মতি প্রয়োজন। সে নিয়ম শিথিল করা হয়েছে। সংশোধনীতে বলা হয়েছে, অভিযোগ আনা যাবে। তবে দণ্ডবিধির ১৯৭ ধারায়। তাতে কোন আদালতে বিচার হবে থেকে শুরু করে অভিযোগের ধরন অনেক কিছুই ঠিক করে দেবে সরকার। এ ছাড়া সংশোধনীতে বলা হয়েছে, জমি অধিগ্রহণের ফলে যে সব কৃষি-মজুরের জীবিকায় টান পড়বে, তাঁদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে।

কিন্তু বিরোধীদের মতে, এটা স্রেফ কৃষকদের বোকা বানানোর ব্যবস্থা। পাঁচটি ক্ষেত্রে জমি নেওয়ার সময় সরকার সামাজিক প্রভাবের নিরীক্ষা করাবে না। তাই কৃষি-মজুরদের চিহ্নিত করারই প্রশ্ন থাকবে না। ফলে দায় থাকবে না কর্মসংস্থান দেওয়ারও।

বিরোধীরা তাই আজ অধ্যাদেশের তীব্র সমালোচনা করেন। সরকার শিল্প সংস্থার হাতে তামাক খাচ্ছে বলে বারবার নিন্দা উড়ে আসে। এমনকী, অকালি দল, শিবসেনা, রাজু শেট্টির স্বাভিমানী পক্ষের মতো শরিক দলও আজ বিলে আপত্তি করে, অসন্তোষ জানায় নিজেদেরই সরকারের বিরুদ্ধে। তবে দিনের শেষে এনডিএ-র শরিকদের ও বন্ধু দল বিজু জনতা এবং অণ্ণা দ্রমুক(এডিএমকে)-কে বুঝিয়ে রাজি করিয়ে ফেলেন অরুণ জেটলি, বেঙ্কাইয়া নায়ডুরা, যাতে তাঁরা অন্তত বিপক্ষে ভোট না দেন।

লোকসভায় বিজেপির একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে। তার ওপর অকালি ও অন্য শরিকদের নিয়ে বিল পাশ করিয়ে কোনও অসুবিধা হয়নি। উল্টে জমি অধ্যাদেশ নিয়ে বিতর্কের জবাবি ভাষণে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে তাঁর পুরনো যত রাগ আজ উগরে দেন হরিয়ানার প্রাক্তন কংগ্রেস নেতা তথা অধুনা কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী বীরেন্দ্র চৌধুরি। জমি অধিগ্রহণ নিয়ে হরিয়ানায় পূর্বতন কংগ্রেস সরকার, এমনকী ঠারেঠোরে গাঁধী পরিবারকেও আক্রমণ করেন তিনি।

রাজ্যসভায় কী হবে?

জমি বিল সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানোর জন্য রাজ্যসভার বিরোধী নেতারা মনস্থির করে রেখেছেন। খনি আইনের বিরোধিতা করে তার একটা মহড়াও সেরে ফেলেছেন তাঁরা।

bjp rajyasabha loksabha land aquisition bill
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy