নিজেদের নাক যে কাটা যাচ্ছে, তা যেন ধরে নিয়েই নিয়েছেন কংগ্রেসের নেতারা। কী ভাবে এখন নরেন্দ্র মোদীর যাত্রাভঙ্গ করা যায়, তা নিয়েই এখন কংগ্রেসের অন্দরমহলে জোর বিতর্ক বেঁধেছে।
লোকসভা ভোটের পর নরেন্দ্র মোদীকে কেন্দ্রে ক্ষমতা দখল থেকে আটকাতে তৃতীয় ফ্রন্ট বা আঞ্চলিক দলগুলির জোটকে কংগ্রেস সমর্থন দিতে পারে----গত কয়েক দিন ধরেই একের পর এক কংগ্রেস শীর্ষ নেতা এই মত প্রকাশ করছিলেন। বিতর্ক তা নিয়েই। প্রথমে এ কে অ্যান্টনি, তার পর পৃথ্বীরাজ চহ্বাণ, সলমন খুরশিদ----এই তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন সনিয়া গাঁধীর রাজনৈতিক সচিব আহমেদ পটেল। তিনি বলেছেন, “কংগ্রেস ক্ষমতালোভী নয়। সাম্প্রদায়িক শক্তিকে ক্ষমতা থেকে দূরে রাখতে কংগ্রেস সব সম্ভাবনাই খতিয়ে দেখবে।”
কিন্তু কী ভাবে এই সমর্থন দেওয়া হবে, তা নিয়েও কংগ্রেসের মধ্যে মতপার্থক্য তুঙ্গে। আহমেদ পটেল বাইরে থেকে সমর্থন দেওয়ার দিকে ইঙ্গিত করেছেন। কিন্তু তা খারিজ করে দিয়েছেন দিগ্বিজয় সিংহ। তাঁর যুক্তি, সব চেয়ে বড় দল সরকারের বাইরে থাকবে, এটা অবাস্তব। আকাশকুসুম ভাবনা। জয়রাম রমেশও এর আগে একই মত প্রকাশ করেছিলেন। জনার্দন দ্বিবেদীর মতো কয়েক জন আবার মনে করেন, সাংগঠনিক শক্তি বাড়াতে কংগ্রেসের বিরোধী দলের আসনেই বসা উচিত। কিন্তু ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার আগে থেকেই শীর্ষ নেতাদের এই সব প্রকাশ্য মন্তব্য দলেরই ক্ষতি করছে বলেও মনে করছেন অনেকে। যুক্তি হল, এতে আগেই হার স্বীকার করে নেওয়া হচ্ছে। ফলে কংগ্রেসের ঝুলিতে ভোট আরও কমবে। পি চিদম্বরমের যুক্তি, “জেতার জন্যই ভোটে লড়তে নেমেছি। হেরে গিয়ে অন্য কাউকে সমর্থন করব বলে নয়।”
ভোটের মধ্যেই এ সব কথা বলে ফেলায় যে ভুল বার্তা যাচ্ছে, তা কংগ্রেস হাইকম্যান্ডও টের পেয়েছে। কারণ বিজেপি নেতারা দাবি করছেন, কংগ্রেস নেতাদের মুখে তৃতীয় ফ্রন্টকে সমর্থনের কথা আসলে বিজেপিরই নৈতিক জয়। আর সেই কারণেই তাঁর বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা হচ্ছে বলে দাবি করেছেন আহমেদ পটেল।
আহমেদ পটেল নিজের অবস্থান বদলানোর চেষ্টা করলেও তিনি যা বলেছেন, এ কে অ্যান্টনি, পৃথ্বীরাজ চহ্বাণ, সলমন খুরশিদরা অনেক আগেই তা বলে ফেলেছিলেন। অ্যান্টনি তৃতীয় ফ্রন্টের কথা বলে কার্যত বামেদেরই বার্তা দিয়েছিলেন। মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী পৃথ্বীরাজ আঞ্চলিক দলগুলির সঙ্গে কংগ্রেসের হাত মেলানোর প্রয়োজনের কথা বলেছিলেন। আর সলমন খুরশিদের বক্তব্য ছিল, “ভোটের পরে কংগ্রেস তৃতীয় ফ্রন্টকে সমর্থনের কথা ভাবতে পারে। শুধু তা-ই নয়, তৃতীয় ফ্রন্ট থেকে সমর্থনের কথাও ভাবা যেতে পারে।” কংগ্রেস নেতাদের এই নানা রকম মতে খুশি বিজেপি নেতারা। দলের নেতা রবিশঙ্কর প্রসাদের যুক্তি, তৃতীয় ফ্রন্টের সরকার একটা অলীক কল্পনা। প্রতি বারই এই বিকল্প সরকার চালানোর চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।
রবিশঙ্কর বলেন, “কংগ্রেসের নেতারা যখন সেই ব্যর্থ বিকল্প জোটের কথাই বলতে শুরু করেছেন, তখন বিজেপির কাছে এর থেকে বড় নৈতিক জয় আর কী হতে পারে।”